বিপিএলে অনুজ্জ্বল কেন দেশি ক্রিকেটাররা?

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
‘বিপিএলের মতো টুনাের্মন্ট নিয়ে বাংলাদেশের গবর্ হওয়া উচিত’Ñ কদিন আগে এমন মন্তব্যই করেছিলেন চিটাগং ভাইকিংসের কোচ সাইমন হেলমট। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোডের্র (বিসিবি) হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) ইউনিটের সাবেক এই কোচের এমন মন্তব্যের কারণÑ এই আসরে বড় বড় তারকাদের সঙ্গে খেলে অনেক কিছু শিখবেন স্থানীয় ক্রিকেটাররা। তাতে সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ভুল কিছু হয়তো বলেননি হেলমট। তবে তারকা বিদেশিদের ছেঁায়ায় বদলে যাওয়ার নজির স্থানীয়রা তেমন একটা স্থাপন করতে পারেননি। বিপিএলের ষষ্ঠ আসর শুরু হয়েছে ৫ জানুয়ারি। আসরের শুরু থেকেই আলো ছড়াচ্ছেন বিদেশি ক্রিকেটাররা। স্থানীয় ক্রিকেটারদের বড় একটা অংশ সেখানে বিবণর্, একেবারই অনুজ্জ্বল। মাশরাফি বিন মতুর্জা, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ কিংবা আফিফ হোসেনের ক্ষণিক ঝলকটুকু বাদ দিয়ে আলোচনায় থাকার মতো তেমন কিছু করতে পারেননি কেউই। কিন্তু কেন? এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টি২০ ম্যাচ খেলার ঘাটতির বিষয়টিই সামনে আসছে। এক বিপিএল ছাড়া আর কোনো টি২০ টুনাের্মন্ট হয় না বাংলাদেশে। ছয় থেকে সাত দলের সেই বিপিএলেও খুব বেশি স্থানীয় ক্রিকেটার খেলার সুযোগ পান না। স্বাভাবিকভাবেই এই ফরম্যাটে বাকিরা অনভিজ্ঞ। লিস্ট-এ কিংবা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আলো ছড়িয়ে উঠে আসছেন যারা, হুট করে বিপিএলের মতো মহাযজ্ঞে খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না। এতে বিপিএল যেমন রং হারাচ্ছে, স্থানীয় ক্রিকেটাররাও হারাচ্ছেন আত্মবিশ্বাস। ভুগছে জাতীয় দলও। তাহলে উপায়? অভিজ্ঞতা অজের্ন যত বেশি সম্ভব টি২০ ম্যাচ খেলা। কিন্তু সেই সুযোগটা কোথায়? এমন প্রশ্ন যখন সামনে তখন আরও একটি টি২০ টুনাের্মন্ট আয়োজনের দাবি উঠছে। দাবিটা অবশ্য নতুন নয়। বিপিএল বন্ধ থাকায় ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিজয় দিবস টি২০ টুনাের্মন্ট। এরপর সেটি আর মাঠে গড়ায়নি। বিগত সময়ে স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে ওই ধারার টুনাের্মন্ট আবার চালু করার কথা বলেছেন অনেকেই। বিসিবি আর সিসিডিএম বিষয়টি আমলেও নিয়েছিল। জানিয়েছিল আরেকটি টি২০ টুনাের্মন্ট শুরুর পরিকল্পনার কথা। সেই পরিকল্পনা অবশ্য এখনো আলোর মুখ দেখেনি। বিপিএলের গত আসরের আগে গভনির্ং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক জানিয়েছিলেন, বিপিএলের বাইরে শুধু স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক একটি টি২০ টুনাের্মন্ট আয়োজনের ভাবনা আছে তাদের। প্রস্তাবিত সেই টুনাের্মন্ট মাঠে গড়ায়নি। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের আয়োজক সিসিডিএম-এর প্রধান জানিয়েছিলেন, লিগের সেরা ছয় বা আট দলকে নিয়ে একটি টি২০ টুনাের্মন্ট আয়োজনের ভাবনা আছে তাদের। সেই ভাবনাও বাস্তবরূপ পায়নি। এতে ক্ষতিটা হচ্ছে বাংলাদেশেরই। অভিজ্ঞতা না থাকায় বিপিএলে বিদেশিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারফমর্ করতে পারছেন না স্থানীয় ক্রিকেটাররা। এমন অভিমতই ব্যক্ত করেছেন টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতুর্জা আর সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। দুই তারকাই আরও একটি টি২০ টুনাের্মন্ট আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন। কদিন আগে একই দাবি করেন একসময়ের তারকা ওপেনার শাহরিয়ার নাফীসও। মঙ্গলবার বিপিএলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের ব্যথর্তার প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেছেন, ‘গত বিপিএলের পর আন্তজাির্তক ক্রিকেটের ১৫/২০ জন ছাড়া বাকিরা সেভাবে টি২০ খেলেনি। তাই এটা তাদের জন্য কঠিন। বিদেশি ক্রিকেটার যারা ভালো করছে তারা সবাই টি২০ বিশেষজ্ঞ। ওরা সবসময় বিশ্বজুড়ে টি২০ খেলে। ওদের সঙ্গে আমাদের স্থানীয়দের তুলনা করা কঠিন। যারা জাতীয় দলের বাইরে আছে তাদেরকে আরেকটু সময় দিতে হবে।’ একই সুর মুশফিকের কণ্ঠেও, ‘যারা জাতীয় দলের বাইরে আছে তাদের ভালো করাটা কঠিন। সারা বছর কিন্তু এই একটা (টি২০) টুনাের্মন্টই তারা খেলে। এমনকি অনুশীলন ম্যাচও খেলে না। এসেই ক্লিক করাটা তাদের জন্য একটু কঠিন হয়ে যায়। আমরা যারা জাতীয় দলে খেলি তারা সারা বছর তিন সংস্করণে খেলি, তাই আমাদের জন্য তুলনামূলক সহজ।’ এরপর বললেন, ‘আমার মনে হয়, বিপিএলের বাইরে যদি কোনো টি২০ টুনাের্মন্ট আয়োজন করা যায় তাহলে যারা (জাতীয় দলের) বাইরে তাদের জন্যই শুধু না আমাদের জন্যও কাজে দেবে।’