শ্বাসরুদ্ধকর জয় সাকিবের ঢাকার

প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
এবারের বিপিএলে প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন ঢাকা ডায়নামাইটসের বোলার অ্যালিস ইসলাম (বঁা থেকে তৃতীয়)। তাকে ঘিরে উচ্ছ¡াসিত সতীথর্রা। দলপতি সাকিব আল হাসানের হাসিটা যেন একটু বেশিই চওড়া। কারণও আছে, রংপুর রাইডাসের্র বিপক্ষে শুক্রবার অ্যালিসের দারুণ বোলিংয়েই ম্যাচে ফিরে জয়ের হাসি হেসেছে ঢাকা Ñবিসিবি
টি২০ ক্রিকেটের বিনোদন চলছে মিরপুরে, এরপরও গ্যালারি ফঁাকা। বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের আগের ম্যাচগুলো দেখেছে এমন দৃশ্য। ব্যতিক্রম দেখা গেল শুক্রবার। একে ছুটির দিন, তারওপর দুই হেভিওয়েট দল ঢাকা ডায়নামাইটস আর রংপুর রাইডাসের্র লড়াই; চেনারূপে দেখা মিলল শেরেবাংলার গ্যালারি। মাঠের লড়াইটাও হলো সেয়ানে সেয়ানে। দশর্নীয় ক্যাচ, হ্যাটট্রিক, দুটি ঝড়ো হাফসেঞ্চুরি; টি২০ ক্রিকেটের আসল রোমাঞ্চই ছড়াল ম্যাচটা। সাকিব আল হাসানের ঢাকার ২ রানের জয়ে শেষটাও হলো শ্বাসরুদ্ধকর। গত আসরের ফাইনালে হারের শোধটাই যেন নিল তারা। বিদেশি তারকাদের নিয়ে দুটি দলই তারকায় ঠাঁসা। তবে দল দুটির অধিনায়ক যে দেশের দুই মহাতারকা। একজন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। আরেকজন বাংলাদেশ টেস্ট ও টি২০ দলের অধিনায়ক। দুজনই বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম কাÐারি। তাই তো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মোড়কে অন্যরকম আগ্রহ-উন্মাদনা ছড়িয়েছে বিপিএলের সাকিব-মাশরাফি এই দ্বৈরথ। মাঠেও উত্তাপের রেণুর কমতি ছিল না। ব্যাটে-বলে তারকাদের লড়াইয়ে ফুটে উঠেছিল টি২০ ক্রিকেটের আসল সৌন্দযর্। তবে শেষ হাসি হেসেছে ঢাকা। আগে ব্যাট করতে নেমে কায়রন পোলাডর্ আর সাকিবের ব্যাটে ভর করে নিধাির্রত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮৩ রান তোলে ঢাকা। জবাবে রাইলি রুশো-মোহাম্মদ মিঠুনের দুদার্ন্ত ব্যাটিং প্রদশর্নীর পরও রংপুর থামে ১৮১ রানে। ফলে চার ম্যাচে দ্বিতীয় পরাজয় দেখতে হয় মাশরাফির দলকে। অন্যদিকে টানা তিন ম্যাচ জিতল ঢাকা। ১৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য টপকাতে সবার চোখ ছিল ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইলের উপর, কিন্তু হতাশ করে গেইল সাজঘরে ফেরেন ৮ রান করে। আরেক ওপেনার মেহেদী মারুফকে ব্যক্তিগত ১০ রানের মাথায় ফেরান আন্দ্রে রাসেল। এরপর রাইলি রুশো আর মোহাম্মদ মিঠুন মিলে গড়েন ৭৩ বলে ১২১ রানের জুটি। রুশোকে ফেরান অ্যালিস ইসলাম। সাজঘরে ফেরার আগে ৮ চার আর চারটি ছয়ে ৪৪ বলে রুশো খেলেন ৮৩ রানের ইনিংস। রুশোর বিদায়ের পর দ্রæত রান তুলতে থাকা মিঠুনকেও ব্যক্তিগত ৪৯ রানের মাথায় বিদায় করেন অ্যালিস। একই ওভারে পর পর মাশরাফি আর ফরহাদ রেজাকে আউট করে এই আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন তিনি। অ্যালিসের হ্যাটট্রিক আর সুনীল নারিনের বোলিং তোপে শেষ পযর্ন্ত ২ রানে হেরে যায় রংপুর রাইডাসর্। ঢাকার হয়ে ৪ উইকেট নেন অ্যালিস, ২ উইকেট নেন নারিন। একটি করে উইকেট নেন আন্দ্রে রাসেল, শুভাগত হোম আর সাকিব আল হাসান। এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকার শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সোহাগ গাজীর বলে ব্যক্তিগত ১ রানের মাথায় বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন গত দুই ম্যাচে দুই অধর্শতক হঁাকানো হযরতউল্লাহ জাজাই। অন্যপ্রান্তে মাশরাফিও কম যাননি। ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান খরচের দিনে যে একটি উইকেট তুলে নিয়েছেন, সেটি প্রতিপক্ষের আরেক ওপেনার নারিনের। আইপিএল-সূত্রে ওপেনার বনে যাওয়া এ ক্যারিবিয়ান করতে পেরেছেন মাত্র ৮ রান। খানিক পর ২ চার ও এক ছয়ে ৮ বলে ১৮ করা রনি তালুকদারকেও সাজঘরে পাঠান সোহাগ। ধারাবাহিকতায় ১২ বলে ১৫ করা মিজানুর রহমানকে এলবি করে পরিস্থিতি আরও পক্ষে আনেন হাওয়েল। এরপরই দৃশ্যপটের পরিবতর্ন। একপাশে সাকিব দেখেশুনে, অন্যপাশে পোলাডর্ উড়িয়ে-জুড়িয়ে মন খেলতে থাকেন। দুজনে ৪৫ বলে ৭৮ রান যোগ করেন। পোলাডের্র বিদায়ে ভাঙে জুটি। ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ঝড় তুলে ২৬ বলে ৬২ করে যান এই ক্যারিবিয়ান। সাকিব ফেরেন তার খানিক পরই। ৪ চারে ৩৭ বলে ৩৬ রানে। তাতেও বিপদ কাটেনি রংপুরের। আরেক মারকুটে আন্দ্রে রাসেল তখনও ক্রিজে। রাসেলই লক্ষ্যটা টেনে পৌনে দুইশ পার করেন। ১৩ বলে তিন ছক্কায় ২৩ রান করেন তিনি। রংপুরের হয়ে ৩টি উইকেট নেন শফিউল ইসলাম। ২টি করে উইকেট নেন সোহাগ গাজী আর বেনি হাওয়েল। মাশরাফি আর ফরহাদ রেজা নেন ১টি করে উইকেট। সংক্ষিপ্ত স্কোর ঢাকা ডায়নামাইটস ২০ ওভারে ১৮৩/৯ (জাজাই ১, নারিন ৮, রনি ১৮, সাকিব ৩৬, মিজানুর ১৫, পোলাডর্ ৬২, রাসেল ২৩; মাশরাফি ১/২২, সোহাগ ২/২৮, শফিউল ৩/৩৫, হাওয়েল ২/২৫, ফরহাদ ১/৩২) রংপুর রাইডাসর্ ২০ ওভারে ১৮১/৯ (গেইল ৮, মারুফ ১০, রুশো ৮৩, মিঠুন ৪৯, বোপারা ৩, হাওয়েল ১৩, শফিউল ১০*; রাসেল ১/২৬, শুভাগত ১/২৭, সাকিব ১/৩৫, নারিন ২/৪০, অ্যালিস ৪/২৬) ফল : ঢাকা ডায়নামাইটস ২ রানে জয়ী ম্যাচসেরা : অ্যালিস ইসলাম