বাংলাদেশ আর পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের পার্থক্য বোঝালেন সালাউদ্দিন

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ সালাউদ্দিন ও অধিনায়ক ইমরুল কায়েস
চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসরে কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের বেশির ভাগ বিদেশি ক্রিকেটারই পাকিস্তানের। সেখানে তারকা ক্রিকেটার যেমন আছেন, তেমনি আছে উঠতিরাও। কোচ হিসেবে তাদের সঙ্গে কাজ করছেন, কাছ থেকে দেখছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ভেতর-বাহির তো তার চেয়ে বেশি জানে খুব কম জনই। সেই দেখা থেকেই দুই দেশের ক্রিকেটারদের সাধারণ পার্থক্যগুলো ব্যাখ্যা করলেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল এই কোচ। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আধিপত্য যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। একসময় যখন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মূল আসর ছিল ঢাকা সিনিয়র ডিভিশন লিগ বা পরে প্রিমিয়ার লিগ, তখন থেকেই মৌসুমের শুরুতে ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসতেন অনেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার। দাপুটে পারফরম্যান্সে তারা দলের ভাগ্যও গড়ে দিতেন। সময়ের পরিক্রমায় এখন বিপিএলেও তাদের আধিপত্য। বিপিএলে অবশ্য আগে অন্যান্য দেশের বিশ্বমানের পারফর্মারও অনেক খেলেছেন। তবে এবার বিপিএলের সঙ্গেই বিগ ব্যাশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএল টি২০, দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টোয়েন্টি চলতে থাকায় ভালো মানের বিদেশি ক্রিকেটার পাওয়া যায়নি। বিদেশিদের মধ্যে তাই পাকিস্তানিরাই বেশি। বিপিএলে এখনো পর্যন্ত তিন সেঞ্চুরির সবকটিই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের। উইকেট শিকারের শীর্ষে পাকিস্তানেরই এক বোলার। পাকিস্তানের দ্বিতীয় সারির ক্রিকেটাররাও দাপটে পারফর্ম করছেন এখানে। ঢাকা ডমিনেটর্সের বিপক্ষে সোমবার কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের বড় জয়ে যেমন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ খুশদিল শাহ। এই ম্যাচেই বিপিএল অভিষেকে দুর্দান্ত বোলিংয়ে বড় পার্থক্য গড়ে দেন নাসিম শাহ। আর এই কুমিলস্না দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। দলে আছেন পাকিস্তানের হাসান আলি, আবরার আহমেদরাও। ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ আর পাকিস্তান এই দুই দেশের ক্রিকেটারদের পার্থক্য নিয়ে কুমিলস্নার কোচ সালাউদ্দিন বললেন, 'মৌলিক পার্থক্য তো একটা আছেই, আমাদের ছেলেদের বড় শট খেলার সামর্থ্য কম। এটা মানতেই হবে। খুব কম ছেলে আছে, যারা বড় শট খেলতে পারে। আর মানসিকতায় কিছু ক্রিকেটার তো আলাদা থাকেই। শীর্ষ পর্যায়ে যারা খেলে, তাদের মানসিকতা অন্যরকম। আমাদেরও দুই-চারজন আছে, তাদের মানসিকতা অনেক শক্ত। কিন্তু বাকিদের মানসিকতা অতটা শক্তিশালী নয়। আমি যদি আমাদের রিজওয়ানের কথা বলি, তার নিবেদনের লেভেল আসলে কল্পনা করতে পারবেন না। খেলাটা নিয়ে যেভাবে চিন্তা করে, যেভাবে নিজেকে গুছিয়ে রাখে বা গোটা দল আগলে রাখে, সেই লেভেলের নিবেদন খুব কম ছেলেরই আছে (বাংলাদেশের)।' পার্থক্যগুলো খুব বড় কিছু নয়। তবে চিন্তা-ভাবনার ছোট পার্থক্যগুলোই আসলে বড় ব্যবধান গড়ে দেয়। এমনটাই অভিমত বিপিএলের সফলতম কোচ সালাউদ্দিনের, 'পার্থক্য আসলে খুব বেশি যে আছে, তা নয়। কিছু আছে, আসলে চিন্তা-ভাবনা, নিজেকে আরও বড় লেভেলে দেখা বা চিন্তা করা, গুছিয়ে রাখা, নিজেকে কীভাবে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাব, সেটা সম্পূর্ণ নিজেদের চিন্তা-ভাবনার ব্যাপার। এই জায়গায় আমাদের ছেলেদের ঘাটতি আছে। এখানে উন্নতি করতেই হবে।' প্রায় দুই দশক ধরে ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে সফলভাবে কোচিং করিয়ে আসা বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির দীনতার দিকটিও। তুলে ধরলেন সাবেক এই ক্রিকেটার, 'একটা উদাহরণ দেই। অন্যান্য দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেউ যদি ১০ হাজার রান করে, তাদেরকে দেখবেন যে কোনো জায়গায়, ধারাভাষ্যে বা কোচিং প্যানেলে ঢুকে যায়। এমনকি শ্রীলংকাতেও যারা ৮-১০ হাজার রান করেছে (তারা সুযোগ পায়)। আমার দেশের কোনো ছেলেকে নেবে? কাউকে প্রস্তাব দেবে? আমার তো প্রচন্ড সংশয় আছে। তার মানে আমার ছেলেদের খেলাধুলায় চিন্তাভাবনায় অনেক পিছিয়ে আছি। এই জায়গাটায় আমাদের অনেক গোছাতে হবে। কেউ ১০ হাজার আন্তর্জাতিক রান করলে তার কথাবার্তা থেকে শুরু করে সবকিছু অনেক উঁচু মানের হতে হবে, যেখানে সে নিজেই একজন বড় কোচ হয়ে যাওয়ার কথা। এখানে আমাদের অনেক উন্নতির জায়গা আছে।' তবে শুধু ক্রিকেটারদের বা অন্যদের দায় দিয়েই শেষ করেননি সালাউদ্দিন। কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তিনি দেশের কোচদের ও কোচিং ব্যবস্থাকেও।