মানজুকিচরাই ‘আসল’ সিংহ!

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
‘থ্রি লায়ন্স’- ইংল্যান্ড ফুটবল দলের ডাক নাম। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এই নামের সাথর্কতা কি প্রমাণ করতে পেরেছে তারা? পারেনি, বরং লুঝনিকির সবুজ গালিচায় সত্যিকারের সিংহ রূপে দেখা গেছে ক্রোয়াটদেরই! শুরুতে গোল হজম করেও ইভান পেরিসিক আর মারিও মানজুকিচের গোলে অবিস্মরণীয় এক জয় তুলে নিয়েছে তারা, প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে নাম লিখিয়ে গড়েছে ইতিহাস। রাশিয়া বিশ্বকাপে সবার গণনার বাইরে থাকা ক্রোয়েশিয়া এখন শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে। কীভাবে সম্ভব হলো এটা? সাহসী আর হার না মানা মানসিকতাই এতদূর নিয়ে এসেছে লুকা মদ্রিচের দলকে। ফাইনালে উঠতে শেষ ষোলো থেকে প্রতিটি ম্যাচে তাদের খেলতে হয়েছে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট করে। কিন্তু একটিবারও ক্লান্ত মনে হয়নি ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারদের। বুধবারের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড শুরুতে এগিয়ে যাওয়ার পর মদ্রিচ-রাকিতিচরা হয়ে ওঠেন ক্ষুধাতর্ সিংহ। একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে যেতে থাকেন তারা। সময় যত গড়াচ্ছিল, ততোই বাড়ছিল মদ্রিচদের খেলার গতি। তাদের সঙ্গে কিছুতেই যেন কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না হ্যারি কেন-লিনগাডর্রা। ৬৮ মিনিটে গোল আদায় করে তবেই নিধাির্রত সময় শেষ করেছে ক্রোয়েশিয়া। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও ক্রোয়েশিয়া ছিল আক্রমণাত্মক মেজাজে। বোঝা যাচ্ছিল, সেমিফাইনালটা টাইব্রেকারে নিয়ে যেতে চায় না তারা। পেনাল্টি শুটআউটের ভাগ্য পরীক্ষা এবার দিতেও হয়নি তাদের। সমতাসূচক গোল এনে দেয়া পেরিসিকের হেড ১০৯ মিনিটের মাথায় ডি বক্সের সুবিধাজনক জায়গায় পেয়ে যান মানজুকিচ। এরপর ইংল্যান্ডের জালে জড়িয়ে মাতেন জয়োৎসবে। এই জয়টা যেন তার কাছে ‘অলৌকিক’ কিছু, ‘এটা একটা মিরাকল। কেবল মাত্র সেরা দলগুলোই আমাদের মতো সাহসী এবং ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে শুরুতে পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দঁাড়াতে পারে। পুরো টুনাের্মন্টেই আমরা হৃদয় দিয়ে খেলেছি। আমি এখানে দলের জন্যই এসেছি। দলের জন্য যা করতে পেরেছি, তাতে আমি অনেক খুশি।’ শেষ ষোলোতে ডেনমাকর্ এবং কোয়াটার্র ফাইনালে রাশিয়ার বিপক্ষেও শুরুতে পিছিয়ে পড়েছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু তাদের হারানো যায়নি। ওই দুটি ম্যাচে টাইব্রেকারে ভাগ্য গড়ে নেয় ক্রোয়াটরা। তবে ওই দুটি ম্যাচের চেয়ে মদ্রিচদের সেমিফাইনালের পারফরম্যান্স আরও দুদার্ন্ত হয়েছে। আগামী রোববার ফ্রান্সের বিপক্ষে যদি এভাবে খেলতে পারে তারা, তবে নতুন ইতিহাস গড়ে ফেলবে জলাতকো দালিচের শিষ্যরা। জয়ের নায়ক মানজুকিচ জানিয়েছেন, সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও সিংহের মতোই প্রতিপক্ষের ওপর ঝঁাপিয়ে পড়বেন তারা। ‘ডেনমাকর্ আর রাশিয়ার বিপক্ষে আমরা চাপে ছিলাম। কিন্তু আমরা আজ (বুধবার) কী করেছি, আপনারা সবাই তা দেখেছেন। আজ রাতে আমরা ছিলাম সিংহের মতো, ফাইনালেও তাই থাকব।’ ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসের আরেক কারিগর পেরিসিক যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন গোল করে দেশকে পাঠাবেন বিশ্বকাপে ফাইনালে। তার স্বপ্ন আজ বাস্তব। কিন্তু পেরিসিক যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না চার মিলিয়ন মানুষের ছোট্ট দেশ ক্রোয়েশিয়া এখন বিশ্বকাপের ফাইনালে। তবে ফাইনালে যখন উঠেছেন, শিরোপা নিয়েই বাড়ি ফিরতে চান পেরিসিক, ‘ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। ছোট্ট ক্রোয়েশিয়া এখন ফাইনালে! দলের খেলোয়াড় এবং দেশবাসীর জন্য এটা অনেক বড় সম্মানের। টানা তিনটি ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে আমরা ঘুরে দঁাড়িয়েছি। এটা আসলে আমাদের টিম স্পিরিট কেমন, সেটাই প্রকাশ করে। আর এই প্রজন্মের খেলোয়াড়দের সত্যিকারের বৈশিষ্ট্য এমনই। এখন আমাদের আর একটি ম্যাচ বাকি।’ ক্রোয়েশিয়ার এই অজের্নর অন্যতম নায়ক কোচ জলাতকো দালিচ। সেমিফাইনালে ওঠার পরই আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন। বুঝুন তাহলে, ফাইনালে ওঠার আনন্দটা কেমন হচ্ছে তার! ইতিহাস গড়ার পর এই কোচ এখন আরও বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছেন, ‘আমরা ফাইনালে যাওয়ার মতো যোগ্য দল ছিলাম। আমরা ইতিহাস গড়েছি। এখনো একটি ম্যাচ বাকি। ঈশ্বর চাইলে আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হব।’