পদার্ নামল ষষ্ঠ আসরের

সেঞ্চুরি আর হ্যাটট্রিকের বিপিএল

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
মিরপুরে শুক্রবার ষষ্ঠ বিপিএলের ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের তামিম ইকবালের উদযাপন Ñবিসিবি
এক এক করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ছয়টি সংস্করণ হয়ে গেল। মাসব্যাপী ক্রিকেট উৎসব শেষ হলো শুক্রবার। ৫ জানুয়ারি যে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ষষ্ঠ আসরের পদার্ উঠেছিল, ৮ ফেব্রæয়ারি সেখানেই পদার্ নামল। মাঝে হয়ে গেল ৪৬টি ম্যাচ। ম্যাচে থাকল টি২০ ক্রিকেটের রোমাঞ্চ, রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা। বল-ব্যাটের জমাট লড়াইয়ে লেখা হলো জয়-পরাজয়ের উপাখ্যান। সব আসরেই এমনটা হয়। তবে ষষ্ঠ বিপিএল আগের আসরগুলোর থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে থাকল সেঞ্চুরি আর হ্যাটট্রিক সংখ্যায়। উদ্বোধনের মতো সমাপনীতেও জঁাকজমকপূণর্ কোনো অনুষ্ঠান ছিল না। তা নিয়ে দশর্কমহলে কিছুটা অসন্তুষ্টি থাকল। ছোটখাটো কিছু ভুলত্রæটি ছিল। বিতকর্ ছিল আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিয়েও। ‘পঙ্গু’ ডিআরএস সিস্টেম সমালোচনার জন্ম দিয়েছে বেশ। তবে স্পাইডার ক্যাম, এলইডি স্ট্যাম্প ব্যবহারে কিছু নতুনত্ব যোগ হয়েছে। বরাবর তুমুল সমালোচিত বিপিএলের টিভি সম্প্রচার আর ধারাভাষ্যের মান, সেখানেও এবার কিছুটা উন্নতি লক্ষ করা গেছে। ক্রিস গেইল, শহীদ আফ্রিদি, কায়রন পোলাডর্, অ্যালেক্স হেলস, সুনিল নারিন, রাইলি রুশো, এভিন লুইস, রবি বোপারাদের মতো নিয়মিত মুখগুলো এবারও দেখা গেছে। তবে এবি ডি ভিলিয়াসর্, স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ানার্রদের মতো তারকাদের পদচারণা এবারই প্রথম দেখেছে বিপিএল। বলতে গেলে কোনোরকম বিতকর্ ছাড়াই হয়েছে মাঠের ক্রিকেট। শুরুর দিকে লো-স্কোরিং ম্যাচ নিয়ে দশর্কমহলে কিছুটা অসন্তুষ্টি ছিল, তবে সময় যত গড়িয়েছে ততই আলোকময় হয়েছে ষষ্ঠ বিপিএল। চট্টগ্রামপবের্ তো রীতিমতো রানের বন্যায় ভেসেছে এবারের আসরটি। সিলেট আর ঢাকাপবের্ও কিছু ম্যাচ ছিল হাই-স্কোরিং। বিপিএলের এক আসরে ব্যক্তিগত সবাির্ধক রান সংগ্রহের রেকডর্টাও লেখা হয়েছে নতুন করে। ১৪ ম্যাচে ১৩ ইনিংসে ব্যাট করে একটি সেঞ্চুরি আর পঁাচটি হাফসেঞ্চুরিতে প্রায় ৭০ গড়ে রংপুর রাইডাসের্র রাইলি রুশো করেছেন ৫৫৮ রান। প্রথম আসরে বরিশাল বানাের্সর্র পাকিস্তানি ওপেনার আহমেদ শেহজাদের ১২ ম্যাচে করা ৪৮৬ রান টপকে গেছেন তিনি। এবারের বিপিএল নতুন করে লিখেছে সবোর্চ্চ দলীয় সংগ্রহের ইতিহাসও। ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামে স্বাগতিক চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ২৩৯ রান তোলে আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডাসর্। তিন দিন পর খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে ম্যাচে ওই রেকডির্টও প্রায় ভেঙে দিয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শেষতক ২৩৭ রানে থামে তারা। বিপিএলে আগের সবোর্চ্চ দলীয় পুঁজি ছিল ঢাকা ডায়নামাইটসের, ২০১৩ সালে রংপুরের বিপক্ষে ২১৭ রান। সেই রংপুরই রেকডর্টা নিজেদের করে নেয় অ্যালেক্স হেলস আর রাইলি রুশোর সেঞ্চুরিতে। এক ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি, এবারই প্রথম দেখেছে বিপিএল। টি২০ ক্রিকেট এমন বিরল ঘটনা অতীতে আর দুবারই দেখেছে। এবারই প্রথম ছয়টি সেঞ্চুরি দেখেছে বিপিএল। ২০১২ সালের চার সেঞ্চুরিই ছিল আগের সবোর্চ্চ। রুশো আর হেলস ছাড়া এবার সেঞ্চুরি পেয়েছেন রংপুরের আরেক ব্যাটসম্যান ডি ভিলিয়াসর্, রাজশাহী কিংসের লরি ইভান্স আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের এভিন লুইস। এই লুইসের ব্যাটেই তৃতীয় বিপিএল তার একমাত্র সেঞ্চুরিটি দেখেছিল। অথার্ৎ বিপিএলে দুটো সেঞ্চুরি হলো ক্যারিবীয় ওপেনারের। টুনাের্মন্টে একাধিক সেঞ্চুরি পাওয়া দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান তিনি, পঁাচটি সেঞ্চুরি নিয়ে আপাতত সবার ধরাছেঁায়ার বাইরে ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল। এবারের বিপিএল গেইলের ব্যাট হাসেনি, দশর্কদের সামান্য আক্ষেপ ছিল ওটা নিয়েও। আক্ষেপ ছিল বিদেশিদের তুলনায় স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের ম্রিয়মাণ পারফরম্যান্স নিয়েও। তবে কিছুটা প্রশান্তি জুগিয়েছে মুশফিকের ব্যাট, ৪২৬ রান করে রুশোর পরের স্থানে থেকে শেষ করেছেন তিনি। ফাইনাল পযর্ন্ত ২৩টি করে উইকেট নিয়ে উইকেট শিকারিদের তালিকায় শীষের্ আছেন সাকিব আল হাসানে। ২২টি উকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন তাসকিন আহমেদ ও মাশরাফি বিন মতুর্জা। এবারের বিপিএল প্রথম হ্যাটট্রিকটাও দেখেছে স্থানীয়দের বদৌলতে। ঢাকার বোলার আলিস আল ইসলাম রংপুরের বিপক্ষে বিপিএল অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করে গড়েছেন ইতিহাস। এরপর হ্যাটট্রিক করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পাকিস্তানি পেসার ওয়াহাব রিয়াজ আর ঢাকার ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল। সবমিলে তিনটি হ্যাটট্রিক হয়েছে ষষ্ঠ বিপিএলে। আগের পঁাচটি আসর সেখানে হ্যাটট্রিক দেখেছে মোটে দুটি। ২০১২ সালে প্রথম আসরে হ্যাটট্রিক করেছিলেন দুরন্ত রাজশাহীর পাকিস্তানি গতিতারকা মোহাম্মদ সামি। পরের হ্যাটট্রিকটি ২০১৫ সালে, আল-আমিন হোসেনের দৌলতে দেখেছিল বিপিএল। এরপর ২০১৬ আর ২০১৭ আসর হ্যাটট্রিকশূন্য কাটানোর পর এবার হলো হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক। একদিকে হ্যাটট্রিকের ছড়াছড়ি, অন্যদিকে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরিÑ সবকিছু মিলিয়ে ষষ্ঠ বিপিএল দশর্কহৃদয়ে স্মরণীয় হয়েই থাকার কথা।