প্রস্তুতি ম্যাচে প্রস্তুতি-ঘাটতির ছাপ

মাসব্যাপী টি২০ ক্রিকেটে বুঁদ হয়ে থাকার পর হুট করে ৫০ ওভারের ম্যাচে নেমে সুবিধা করে উঠতে পারেনি টাইগাররা। ব্যাট হাতে বিপিএল মাতানো মুশফিকুর রহিম আর সাব্বির রহমান ছন্দটা ধরে রাখলেন, তাদের ছাপিয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু এই তিন ব্যাটসম্যান রান পাওয়ার পরও বড় স্কোর গড়তে পারল না বাংলাদেশ। বোলাররা লড়াই করেছেন, তবে শেষরক্ষা করতে পারেননি। ফলে নিউজিল্যান্ড একাদশের কাছে ২ উইকেটের হারই সঙ্গী হয়েছে টাইগারদের

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
শট খেলছেন মাহমুদউল্লাহ। রোববার নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে সবোর্চ্চ ৭২ রান করেছেন তিনি, পরে বল হাতেও নিয়েছেন ২ উইকেট। তবে এমন চৌকশ পারফরম্যান্স করেও দলকে জেতাতে পারেননি তিনি Ñফাইল ছবি
বিপিএল-ব্যস্ততার কারণে কোনো প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই নিউজিল্যান্ড সফরে গেছে বাংলাদেশ দল। একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে টাইগারদের পারফরম্যান্সে প্রস্তুতি-ঘাটতিরই ছাপ থাকল। মাসব্যাপী টি২০ ক্রিকেটে বুঁদ হয়ে থাকার পর হুট করে ৫০ ওভারের ম্যাচে নেমে সুবিধা করে উঠতে পারেনি অতিথিরা। ব্যাট হাতে বিপিএল মাতানো মুশফিকুর রহিম আর সাব্বির রহমান ছন্দটা ধরে রাখলেন, তাদের ছাপিয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু এই তিন ব্যাটসম্যান রান পাওয়ার পরও বড় স্কোর গড়তে পারল না বাংলাদেশ। বোলাররা লড়াই করেছেন, তবে শেষরক্ষা করতে পারেননি। ফলে নিউজিল্যান্ড একাদশের কাছে ২ উইকেটের হারই সঙ্গী হয়েছে টাইগারদের। ওপেনার জিত রাভাল ছাড়া নিউজিল্যান্ড একাদশে থাকা মুখগুলো ছিল অখ্যাত। তাদের কাছেই কিনা নাস্তানাবুদ হতে হলো টাইগারদের। নেপিয়ারে লিঙ্কন ওভালের এই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৬.১ ওভারে ২৪৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে যেভাবে শুরু করেছিল কিউইরা, মনে হচ্ছিল খুব সহজেই ২৪৮ রানের জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলবে তারা। তবে শেষদিকে টাইগার বোলারদের দুদার্ন্ত পারফরম্যান্সে ঘাম ঝরাতে হয় তাদের। স্বাগতিকরা জয় তুলে নেয় ১১ বল বাকি থাকতে, টাইগার বোলাররা তুলে নেয় আট উইকেট। লক্ষ্য তাড়ায় দুই ওপেনার ১১৪ রানের ভীত গড়ে দেন। ৫২ রান করে জিত রাভাল আউট হওয়ার পর নিউজিল্যান্ড একাদশকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। আট রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন আরেক ওপেনার ফ্লেচার (৯২)। তাকে সেঞ্চুরিবঞ্চিত করেন বাহাতি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। এরপর দ্রæত আউট হন সোলিয়া (১১) ও রবিন্দ্র (১৭)। এরপরও ৪ উইকেটে ১৮৮ রান তুলে অনায়াস জয়ের পথেই ছিল স্বাগতিক দল। তবে হাল ছাড়েনি টাইগার বোলাররা। ৩০ রান করা অ্যালেনকে ফেরান মাহমুদউল্লাহ। এরপর ১৯ রান করা ক্লাকর্ আর ৪ রান করা ফিলিপসকে ফিরিয়ে চাপ বাড়ান প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়া মেহেদী হাসান মিরাজ। তিন রান দূরে থাকতে মুস্তাফিজ স্বাগতিকদের অষ্টম উইকেট তুলে নেন। তাতেও অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। ১১ বল বাকি থাকে ২৫১ রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড একাদশ। বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ, মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নেন। নাঈম হাসান আর সৌম্য সরকার নেন একটি করে উইকেট। এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথম ব্যাট করতে পাঠায় স্বাগতিকরা। শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতোই হয় সফরকারীদের। ৩১ রানের মধ্যেই চার উইকেট হারিয়ে বসে তারা। দলীয় ১১ রানের মাথায় প্রথমে আউট হন মুমিনুল হক (৬)। এক রানের ব্যবধানে ফেরেন লিটন কুমার দাস (৩)। যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দেন সৌম্য সরকার (১) আর মোহাম্মদ মিঠুন (১)। প্রত্যেকেই আউট হয়েছেন বাজে শট খেলে। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১০৮ রান তুলে বিপযর্য় সামাল দেন মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ। ৬১ বলে আটটি চারের সাহায্যে ৬২ রান করে আউট হন মুশফিক। সদ্যসমাপ্ত বিপিএলে তৃতীয় সবোর্চ্চ রান সংগ্রাহক নিজের ফমর্টা নিউজিল্যান্ডেও টেনে নিয়েছেন। মুশফিক ফেরার পর ৭২ রান করে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। বিপিএলে জ্বলে উঠতে না পারলেও জাতীয় দলের জাসিের্ত ভালো কিছুর আভাস দিয়ে রাখলেন তিনি। তার ৮৮ বলের ইনিংসে ছিল ১০টি চারের মার। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর দলকে টানেন সাব্বির রহমান। ৪১ বলে ছয় চারে ৪০ রান করে এই মারকুটে ব্যাটসম্যান। তবে ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি বিপিএলে প্রথমবারের মতো অধিনায়কত্ব করা মেহেদী হাসান মিরাজ। মাত্র ৭ রান করেছেন তিনি। শেষদিকে নাঈম হাসানের ১৭ ও মুস্তাফিজের ১২ রানে ২৪৭ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। তবে ১৭ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়। স্বাগতিকদের হয়ে আইজি ম্যাকপেক নেন চার উইকেট। এছাড়া হ্যাজেলডিন ও রবিন্দ্র নেন দুটি করে উইকেট। প্রায় আড়াইশ’র কাছাকাছি স্কোর গড়লেও দলের ছয়জন ব্যাটসম্যানের দুই অঙ্ক ছুতে না পারা বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের আগে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় রাখবে বাংলাদেশকে। সংক্ষিপ্ত স্কোর বাংলাদেশ: ৪৬.১ ওভারে ২৪৭ (লিটন ৩, মুমিনুল ৬, সৌম্য ১, মুশফিক ৬২, মিঠুন ১, মাহমুদউল্লাহ ৭২, সাব্বির ৪০, মিরাজ ৭, নাঈম ১৭*, শফিউল ৪, মুস্তাফিজ ১২; হ্যাজেলডিন ২/৪৬, ম্যাকপিক ৪/৩৮, ব্রাউন ১/৫৭, সোলিয়া ১/৩২, রবিন্দ্র ২/৩৪) নিউজিল্যান্ড একাদশ: ৪৮.১ ওভারে ২৫১/৮ (রাভাল ৫২, ফ্লেচার ৯২, সোলিয়া ১১, রবিন্দ্র ১৭, অ্যালেন ৩০, ক্লাকর্ ১৯, ফিলিপস ৪, হ্যাজেলডিন ২*; মুস্তাফিজ ২/৩৩, মিরাজ ২/৪৬, নাঈম ১/৪৩, মাহমুদউল্লাহ ২/৩৭, সৌম্য ১/২৮)। ফল: নিউজিল্যান্ড একাদশ ২ উইকেটে জয়ী