বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজ

ধবলধোলাই এড়াতে পারবে টাইগাররা?

ডানেডিনে আগামীকাল ভোর ৪টায় সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
নেপিয়ার থেকে ক্রাইস্টচার্চ, ভেনু্য বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অতি আরাধ্য জয়ের দেখা এখনো পায়নি মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। অসহায় আত্মসমর্পণ করে দুটো ম্যাচেই টাইগারদের হারতে হয়েছে ৮ উইকেটে, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টানা চতুর্থ সিরিজটাও তাই হাতছাড়া হয়ে গেছে। জোড়া হারের সেই হতাশা সঙ্গী করে ক্রাইস্টচার্চ থেকে টিম বাংলাদেশ ডানেডিনে পাড়ি জমিয়েছে টানা চতুর্থ সিরিজে ধবলধোলাই হওয়ার শঙ্কা মনে নিয়ে। ডানেডিনে গিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনাই পেয়েছে টিম বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ সময় আগামীকাল ভোর চারটায় অনুষ্ঠেয় সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডেতে কোনোপ্রকার ছাড় যে নিউজিল্যান্ড দল দেবে না, এটা নিশ্চিতই। নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন দলকে সিরিজ জিতিয়ে বিশ্রামে চলে গেলেও মার্টিন গাপটিল, হেনরি নিকোলস, রস টেলররা ব্যাটে শান দিচ্ছেন ঠিকমতোই। ডানেডিনের গতিময় বাউন্সি উইকেটে আগুন ঝরাতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ট্রেন্ট বোল্ট, লুকি ফার্গুসনরাও। বাংলাদেশ শিবিরে সেখানে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কারণ, বরাবরের মতো এবারের নিউজিল্যান্ড সফরটাও তাদের জন্য হয়ে রয়েছে বিভীষিকাময়। ঠিকঠাক লড়াইটাও গড়া যাচ্ছে না। টপঅর্ডার ছন্দে নেই। এক মোহাম্মদ মিঠুন ছাড়া মিডলঅর্ডারেও সেভাবে কেউ আশা জাগাতে পারেননি। সেই মিঠুনও আবার চোটে পড়েছেন, চোট আছে মুশফিকুর রহিমেরও। টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য আশা করছে, দুজনকেই পাওয়া যাবে ধবলধোলাই এড়ানোর মিশনে। এই ম্যাচটা খেলেই ফিরে আসবেন ওয়ানডে দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। এটা একপ্রকার নিশ্চিতই- লাল-সবুজ জার্সিতে আর কখনো তাসমান সাগড়পাড়ের দেশটিতে যাওয়া হবে না তার। শেষটা তাই রাঙাতে চাইবেন তিনিও। এক্ষেত্রে দলকে মাঠে পারফর্ম করতে হবে একাট্টা হয়ে। টানা দুই হারে এটা হয়তো 'মৃত সিরিজ' বনে গেছে। তবে সেখান থেকেই 'অমৃত' খুঁজে নিতে হবে টাইগারদের। এটা ঠিক, ডানেডিনে বাংলাদেশ জিতলে সিরিজের ফল বদলাবে না। তবে ৩-০ ব্যবধানে হারের থেকে ২-১ ব্যবধানে হারটাই বেশি ভালো। এখন ওই ভালোর সন্ধানেই টিম বাংলাদেশ। ওপেনার তামিম ইকবালের কথায়ও সেই সন্ধানের স্বরূপই মিলেছে। সিরিজ হারের কারণ খুঁজতে গিয়ে সব দায় ব্যাটিংয়ের ওপরই চাপিয়েছেন এই বাঁহাতি। সঙ্গে বলেছেন নতুন কিছু করে দেখানোর কথাও, 'নিউজিল্যান্ডে আমরা এখনো কোনো ম্যাচ জিততে পারিনি। গতবারের সফরে দু-একটা ম্যাচে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছেছিলাম। তবে চলতি সফরে প্রথম দুটো ম্যাচে বলতে গেলে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারিনি। আশা করব আমরা নতুন ম্যাচে নতুন কিছু করতে পারব।' শেষ ম্যাচে জিতলেও সিরিজের ফল বদলানো যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে এসব ম্যাচে দলকে উজ্জীবিত করা বা রাখাও অনেক সংকটের বিষয়। তবে শেষ ম্যাচে নিজেদের পরিকল্পনাকে অত জটিলভাবে চিন্তা না করে তামিম জানালেন, 'আমাদের চিন্তাভাবনাজুড়ে এখন শুধু সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে। সেই ম্যাচে আমরা ভালো একটা কিছু করতে চাই। ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে, যা শুরুর দুই ম্যাচে আমরা খেলতে পারিনি।' নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ক্রিকেট মানেই তাদের কন্ডিশন এবং উইকেটের সঙ্গে দ্রম্নত মানিয়ে নেয়ার দক্ষতা। সেই দক্ষতায় কমতি থাকলে পরাজয় দেখার অপেক্ষাতেই থাকতে হয় সফরকারীদের। তামিম অবশ্য সিরিজ হারের জন্য কন্ডিশন বা উইকেটের মধ্যে কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছেন না, 'ওদের শুরুর দিকে কয়েকজন বোলার আছে, যারা প্রথম ১০ ওভারে খুবই ভালো বোলিং করে। প্রথম ম্যাচেই আমরা প্রথম ১০ ওভারেই ওদের চারটা উইকেট দিয়ে দিয়েছি। দ্বিতীয় ম্যাচেও উইকেট ভালো ছিল। তবে হঁ্যা, বৃষ্টি চলে আসায় কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেয়েছিল নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। তারপরও আমি বলব, ঠিক আগের ভুলগুলোই আমরা এই ম্যাচেও করেছি।' শুরুতে উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যে চাপে পড়েছে, সেই চাপ থেকে আর গোটা ম্যাচে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ২৩২ বা ২২৬ রানের মামুলি সঞ্চয়ে নিউজিল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায় না। তৃতীয় ওয়ানডেতে তাই দলের জন্য পরিকল্পনার রূপরেখা জানিয়ে দিলেন তামিম, 'শেষ ওয়ানডেতে আমাদের শুরুর ১০ ওভারে ব্যাটিংটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে। এই সময়টায় আমাদের ভালো ব্যাটিং করতে হবে। শুরুর এই সময়টায় আমরা যদি খুব বেশি রান নাও করি, কিন্তু উইকেট না হারালে সেটা পরে পুষিয়ে দেয়া যাবে।' তামিম আরও বলেছেন, 'আমাদের যে ব্যাটসম্যানরা আছে তারা মাঝের ওভারেও ওদের বোলারদের চাপে রাখতে সক্ষম হবে। ব্যাটসম্যানদের লম্বা ইনিংস ব্যাট করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে খেলাটা যেন প্রতিপক্ষের হাতে চলে না যায়। যেকোনো ম্যাচেই আপনি প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে ৩ থেকে ৪টা উইকেট হারাবেন, তখন সেই ম্যাচে ফিরে আসাটা সবসময় কঠিন হয়ে পড়ে।' ডানেডিনে তেমন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চায় না বাংলাদেশ। ধবলধোলাইয়ের লজ্জা এড়াতে জিততে চায় তারা। সেই চাওয়াটা পূর্ণ হবে তো?