পদার্ নামল রাশিয়া বিশ্বকাপের

আমরা বলেছি, এটাকে আমরা সেরা বিশ্বকাপ হিসেবে দেখতে চাই এবং এটাই ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ। তাই আমাদের উচিত রাশিয়াকে, রাশিয়ার সরকার, রাশিয়ান ফুটবল ইউনিয়নকে ধন্যবাদ বলা Ñজিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনো

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
রোববার রাশিয়া বিশ্বকাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে পারফমর্ করছেন উইল স্মিথ এবং তার সহশিল্পীরা Ñওয়েবসাইট
বিশ্বব্রমাÐকে উঁচিয়ে ধরে আছে দুজন মানুষ, ১৮ ক্যারেট সোনায় নিখুঁত কারুকাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যার আদি নাম ‘ভিক্টোরি’। অথার্ৎ বিজয়। আসলে ফুটবলে বিশ্ব-বিজয়ের স্মারক এটি- ফিফা বিশ্বকাপ। রাশিয়ায় রোববার সেই বিশ্বকাপ ফ্রান্স নাকি ক্রোয়েশিয়ার হাতে উঠেছে, পাঠক তা এতক্ষণে জেনে গেছেন। সঙ্গে জেনে নিন, মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া ফাইনাল ম্যাচ দিয়েই পদার্ নেমেছে রাশিয়া বিশ্বকাপের। চার বছর পর পর আসে। যখন আসে তখন গোটা বিশ্ব বুঁদ হয়ে থাকে ফুটবলের আবেশে, মাদকতায়, উন্মাদনায়। সেই ১৯৩০ সাল থেকে শুরু। বিশ্বের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে আবতির্ত হতে থাকা ফুটবলের এই মহাযজ্ঞ এবার সম্পন্ন করার দায়ভার ছিল রাশিয়ার ওপর। অত্যন্ত সুনিপুণভাবেই আয়োজক রাশিয়া নিজেদের কাজটা সেরেছে। ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি হয়তো ছিল, তবে সেগুলো গণনার মধ্যেই পড়েনি। নানারকম হুমকিধমকি ছিল। সন্ত্রাসবাদীদের কালো থাবা আঘাত হানতে পারে ভøাদিমির ইলিচ লেনিনের দেশে, ছিল এমন আশঙ্কাও। সব আশঙ্কার মেঘ উবে গেছে। ভøাদিমির পুতিনের রাশিয়া বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে নিজেদের সক্ষমতা। কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ছুঁতে পারেনি বিশ্বকাপ-আয়োজনকে। শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত, সবির্দক থেকেই বিশ্বকাপের ২১তম আসর ছিল প্রায় নিখুঁত। ফুটবলের বিশ্ব সংস্থা ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনো তো বলেই দিয়েছেন, ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছে রাশিয়া! লুঝনিকিতে শনিবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আমরা বলেছি, এটাকে আমরা সেরা বিশ্বকাপ হিসেবে দেখতে চাই এবং এটাই ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ। তাই আমাদের উচিত রাশিয়াকে, রাশিয়ার সরকার, রাশিয়ান ফুটবল ইউনিয়নকে ধন্যবাদ বলা।’ এতবড় আয়োজনে গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রেখেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। আয়োজকদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তাদেরও ধন্যবাদ দেন ফিফার সভাপতি ইনফ্যান্তিনো। তিনি বলেছেন, ‘স্বেচ্ছাসেবীদেরও ধন্যবাদ দেয়া উচিত, যারা ছিল এই বিশ্বকাপের হাসি এবং প্রাণ। এই ইভেন্টকে বড় সাফল্য পাইয়ে দিতে তারা সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছে।’ বিশ্বকাপ আয়োজন করে রাশিয়া ফুটবলের দেশ হয়ে উঠেছে বলেও মন্তব্য করেছেন ইনফ্যান্তিনো। তার মতে, রুশদের ডিএনএ’র একটি অংশ হয়ে উঠেছে ফুটবল। সেই ১৪ জুন শুরু হয়ে ১৫ জুলাই পযর্ন্ত রাশিয়ার ১১টি শহর মগ্ন ছিল ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনে। ১২টি স্টেডিয়ামে হয়েছে ৬৪টি ম্যাচ। ওই ম্যাচগুলো ফুটবল উন্মাদনায় ভাসিয়েছে গোটা বিশ্বকে। এই মহাযজ্ঞ কেন্দ্র করে ফুটবল বিশ্ব চোখ রেখেছিল রাশিয়ায়। সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাশিয়াও দেখিয়ে দিয়েছে নিজেদের সামথর্্য। লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ১৪ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বকে পরিচয় করে দিয়েছিল রুশরা, একইভাবে দিল রোববারও। খেলাধুলার বড় বড় আসরের উদ্বোধন আর সমাপনী অনুষ্ঠান নিয়ে থাকে নানা ধাঁধা। অনুষ্ঠানে কী কী থাকবে তা ঢেকে রাখা হয় রহস্যের ঝঁাপিতে। তারপরও জমকালো অনুষ্ঠানের নানা তথ্য ফঁাস হয়ে যায়। মানুষ আগেই টের পায় কী আয়োজন থাকছে অনুষ্ঠানে। রোববার লুঝনিকি স্টেডিয়ামে রাশিয়া বিশ্বকাপের সমাপনী অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটিও একইভাবে জানা হয়ে গিয়েছিল। ফাইনাল আর সমাপনী অনুষ্ঠান সামনে রেখে নতুন করে সেজেছিল লুঝনিকি স্টেডিয়াম। সেখানেই আরও একবার নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেছে রুশরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেভাবে রাশিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। অনেকটা সেই আদলেই সাজানো হয়েছিল সমাপনী অনুষ্ঠান। আধুনিক প্রযুক্তি এবং রাশিয়ার সমাজ, সংস্কৃতি ও রূপকথার সমাহার ছিল সমাপনীতে। আলোর ঝলাকানির সঙ্গে সুরের মূছর্না আর পারফরমারদের মনোমুগ্ধকর শারীরিক কসরত, রঙিন আলোর ঢেউয়ের সঙ্গে তাই সুরে গগন কঁাপানো বিশ্বের কয়েকজন বিখ্যাত গায়ক। বিশ্বকাপের থিমসং ‘লিভ ইট আপ’ নিয়ে বিশেষভাবে তৈরি মঞ্চে এসেছিলেন উইল স্মিথ, এরা ইস্ত্রেফিয়া ও নিকি জ্যামরা। সমাপনী অনুষ্ঠানের পরই মাঠে গড়িয়েছে ফাইনাল ম্যাচ। ফুটবলের মহাযজ্ঞ ফুটবল উৎসবেই পেয়েছে পূণর্তা। বিশ্বকাপের ২১তম আসর শেষ, ২২তম আসরের আয়োজন ভার এশিয়ার দেশ কাতারের ওপর। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত হবে আসরটি।