সেট পিসের বিশ্বকাপ

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ক্রীড়া ডেস্ক ২০১৮ বিশ্বকাপটা মনে রাখার মতো উপলক্ষ্যের অভাব নেই। একে তো প্রাক-টুনাের্মন্টে উঠতে ব্যথর্ ইতালি ও হল্যান্ড। এরপর মূল আসর থেকে জামাির্ন, আজেির্ন্টনা স্পেন ও ব্রাজিলের এই চার বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিদায়। ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্নযাত্রা, শেষ মুহূতের্র উত্তেজনা, সেট পিস থেকে ভূরি ভূরি গোল, আত্মঘাতী গোলের মচ্ছব, ভিএআর কত-কী! আর তাই রাশিয়া বিশ্বকাপকে বলা হচ্ছে অঘটনের বিশ্বকাপ। তেমনি আবার বলা হচ্ছে সেট পিসের বিশ্বকাপ। পেনাল্টি পেলে তো কথাই নেই, কোনো দল ফ্রি-কিক, কনার্র কিংবা লম্বা থ্রোর সুযোগ পেলেই এবার দশের্করা নড়েচড়ে বসেছেন। কারণ, গোল দেখার এটাই যে সময়! সেমিফাইনাল পযর্ন্ত ১৬১ গোলের ৭০ টিরই উৎস যে সেট পিস। শতকরা হিসাবে মোট গোলের যা ৪৩.৫ ভাগ। ২০০২ বিশ্বকাপ থেকে ফিফা সেট পিসের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখা শুরু করার পর এবারই সেট পিসে সবচেয়ে বেশি গোল এসেছে। এবারের আগে ২০০৬ বিশ্বকাপে সবোর্চ্চ ৪৬টি (৩১.৩ %) গোল এসেছিল সেট পিস থেকে। রাশিয়ায় সেট পিস থেকে সবচেয়ে বেশি গোল পেয়েছে ইংল্যান্ড। টাইব্রেকারের পেনাল্টি শুটআউট ছাড়া এবার ম্যাচের নিধাির্রত সময়ে ১৬ জন খেলোয়াড় পেনাল্টি থেকে ২০টি গোল পেয়েছেন। ৩টি গোল নিয়ে যাদের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন। এ ছাড়া পেনাল্টি থেকে একাধিক গোল করেছেন ফ্রান্সের আঁতোয়ান গ্রিজমান, অস্ট্রেলিয়ার মিলে জেডিনাক ও সুইডেনের আন্দ্রেয়াস গ্রাঙ্কভিস্ত। এদের সঙ্গে যোগ হতে পারত পতুর্গালের ক্রিয়িানো রোনালদো, আইসল্যান্ডের গিলফি সিগুডর্সন ও ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদরিচের নামও। একটি করে পেনাল্টি মিস করেই সুযোগটা হারিয়েছেন তাঁরা। এক বিশ্বকাপে এর আগে পেনাল্টি থেকে সবোর্চ্চ ১৭টি গোল হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এটাকে ঠিক রেকডর্ বলা যাবে না। তবে সবের্শষ কবে মাত্র ৪টি লাল কাডর্ দেখানো হয়েছে বিশ্বকাপে, তা খুঁজতে গবেষণাই করতে হয়। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম সংখ্যাটা থেমে আছে এক অঙ্কে, সংখ্যাটা ১৯৭৮ বিশ্বকাপের পর সবির্নম্নও। সবের্শষ ১৯৭০ বিশ্বকাপে কোনো লাল কাডর্ বা বহিষ্কারের ঘটনা দেখেনি বিশ্বকাপ। হলুদ কাডর্ দেখানোয় অবশ্য কৃপণতা দেখাচ্ছেন না রেফারিরা। ২১৩ বার হলুদ কাডর্ বের করেছেন রেফারিরা, সংখ্যাটা ২০১৪ বিশ্বকাপের চেয়ে ৩২টি বেশি। তবে রেকডর্ করতে হলে আজ ও কাল শেষ দুই ম্যাচে আরও ৯৫টি হলুদ কাডর্ দেখাতে হবে! ২০০৬ বিশ্বকাপে যে ৩০৭টি হলুদ কাডর্ ছিল। ম্যাচের শেষ পঁাচ মিনিটে এবার ২৯টি গোল হয়েছে, যার ১৯টিই আবার যোগ করা সময়ে। আগের রেকডির্ট ১৯৯৮ বিশ্বকাপের, ফ্রান্স বিশ্বকাপে শেষ পঁাচ মিনিটে গোল হয়েছিল ২৪ টি। এবার ১৭টি ম্যাচের ফল নিধাির্রত হয়েছে শেষ মুহূতের্র গোলে। যোগ করা সময়ে গোল করেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচটিকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যায় কলম্বিয়া। গ্রæপ পবের্ ৮৮ মিনিটের গোলে সুইজারল্যান্ড এগিয়ে যাওয়ার পর যোগ করা সময়ে সমতা ফেরায় কোস্টারিকা। যোগ করা সময়ের আত্মঘাতী গোলে ইরানের কাছে হারে মরক্কো। কোস্টারিকার বিপক্ষে ব্রাজিলের ২টি গোলই তো এসেছে ঘড়ির কাঁটা ৯০ মিনিট পেরোনোর পর। এবারের আগে এক বিশ্বকাপে সবোর্চ্চ ৬টি আত্মঘাতী গোল দেখেছিল ১৯৯৮ বিশ্বকাপ। এবার সেমিফাইনাল পযর্ন্ত সংখ্যাটা কিনা ১১! ১৫ জুন ইরানের বিপক্ষে যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে দুদার্ন্ত এক হেডে নিজেদের জালে বল পাঠিয়ে ‘আত্মঘাতী উৎসবের’ উদ্বোধন করেন মরক্কোর আজিজ বুহাদ্দুজ। কোয়াটার্র ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ব্রাজিলের ফানাির্ন্দনহোর আত্মঘাতী গোলের পর আপাতত স্থগিত আছে উৎসবটা। প্রথম রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কোস্টারিকার সমতাসূচক গোলটির কথা না বললে চলছেই না। ম্যাচের যোগ করা সময়ে পেনাল্টি নিয়েছিলেন কোস্টারিকার ব্রায়ান রুইজ। ক্রসবারে লেগে বলটি আঘাত করে সুইস গোলরক্ষ ইয়ান সমারের পিঠে। এরপর গোল। তাতেই বিশ্বকাপ ইতিহাসে আত্মঘাতী গোল করা তৃতীয় গোলরক্ষক হয়ে গেলেন সমার। এবারের বিশ্বকাপে চারটি ম্যাচ গড়িয়েছে টাইব্রেকারে, রেকডর্ এটাও। ১৯৯০,২০০৬ ও ২০১৪ বিশ্বকাপেও চারটি করে ম্যাচ পেনাল্টি শুটআউটে গড়িয়েছিল। এক বিশ্বকাপে দুটি টাইব্রেকার জেতার রেকডর্ও ছুঁয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার পথে দুবার টাইব্রেকার-বাধা পেরিয়েছিল আজেির্ন্টনা।