গোল্ডেন বুট কি অভিশাপ?

বিশ্বকাপে সবোর্চ্চ গোলদাতা কে না হতে চায়? সবার স্বপ্ন থাকে বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়িয়ে গোল্ডেন বুট জয়ের। কিন্তু একই সঙ্গে গোল্ডেন বুট আর বিশ্বকাপ জয়ের সৌভাগ্য খুব অল্প ফুটবলারের হয়েছে। আগের ২০ আসরে তালিকায় ছিলেন মাত্র ৫ জন- ব্রাজিলের গারিঞ্চা এবং ভিভা (১৯৬২), আজেির্ন্টনার মারিও ক্যাম্পেস (১৯৭৮), ইতালির পাওলো রসি (১৯৮২) এবং আরেক ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো (২০০২)। রাশিয়া বিশ্বকাপেও সংখ্যাটা বদলায়নি। ৬ গোল করে সবোর্চ্চ গোলদাতার খেতাব জেতা হ্যারি কেনের ইংল্যান্ড বিদায় নিয়েছে সেমিফাইনাল থেকেই। মনে তাহলে এই প্রশ্নটা আসতেই পারে গোল্ডেন বুট কি তাহলে অভিশাপ? চলুন, দেখে নেয়া যাক অতীতে কার কার কপাল পুড়েছে এই খেতাব জেতে।

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
হ্যারি কেন
২০১৪ : হামেস রদ্রিগেজ (৬ গোল) ব্রাজিলে আয়োজিত আসরে নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার কোয়াটার্র ফাইনালে খেলল কলম্বিয়া। আর সেটা সম্ভব হয়েছিল হামেস রদ্রিগেজের কল্যাণে। গ্রæপ পবের্ গ্রিস, আইভরি কোস্ট আর জাপানের বিপক্ষে একটি করে গোল করেন তিনি। শেষ ষোলোতে জোড়া গোল করে একাই উড়িয়ে দেন উরুগুয়েকে। কোয়াটার্র ফাইনালেও একটি গোল পান। কিন্তু ব্রাজিলের কাছে হেরে যায় তার দল। ২০১০ : থমাস মুলার (৫ গোল) ওই বিশ্বকাপে ৫ গোল করেছিলেন চারজন- উরুগুয়ের দিয়েগো ফোরলান (যিনি আসরসেরা ফুটবলারের খেতাব জেতেন), হল্যান্ডের ওয়েসলি স্নেইডার, স্পেনের ডেভিড ভিয়া এবং জামাির্নর থমাস মুলার। তবে তিনটি অ্যাসিস্ট থাকায় মুলার জিতে নেন গোল্ডেন বুট। জিতলে কি হবে, সেমিফাইনাল থেকেই বাদ পড়ে গিয়েছিল জামার্নরা। আগের আসরে ক্লোসার মতো তাই কপাল পুড়ল মুলারেরও। ২০০৬ : মিরো¯øাভ ক্লোসা (৫ গোল) দারুণ খেলেছিলেন সেবার। কিন্তু জামাির্ন বিশ্বকাপ জিততে পারল না। সেমিফাইনালে ইতালির কাছে হেরে বিদায় নিল তারা। ওই ম্যাচে কোনো গোল পাননি মিরো¯øাভ ক্লোসা। গোল্ডেন বুট জিতেও তাই আক্ষেপটা রয়ে গেল তার। ১৯৯৮ : সুকার (৬ গোল) সুকার নামের এক জাদুকর একের পর এক গোল করতে থাকলেন, আর ইতিহাস গড়ার পথে এগিয়ে যেতে থাকল ক্রোয়েশিয়া। সেমিফাইনালেও তার গোলে এগিয়ে ছিল ক্রোয়াটরা। কিন্তু ফ্রান্সের কাছে শেষতক হার মানে তারা। আর সুকারকে কেবল গোল্ডেন বুট জিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ১৯৯৪ : ওলেগ সেলেঙ্কো, রিস্টো স্টোইচকভ (৬ গোল) ক্যামেরুনের বিপক্ষে এক ম্যাচেই ৫ গোল করে বিশ্বরেকডর্ গড়েন রাশিয়ার ওলেগ সেলেঙ্কো। তবে তার দল গ্রæপ পবর্ থেকেই বাদ পড়ে যায়। বুলগেরিয়ার রিস্টো স্টোইচকভ করেন ৬ গোল। তার দলও ছিটকে যায় সেমিফাইনাল থেকে। ১৯৯০ : সালভাতর স্কিলাচি (৬ গোল) ইতালিকে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন সালভাতর স্কিলাচি। করেছিলেন টুনাের্মন্টের সবোর্চ্চ গোল। কিন্তু সেবার ফাইনালেও খেলতে পারেনি স্বাগতিকরা। তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল ইতালিকে। ১৯৮৬ : গ্যারি লিনেকার (৬ গোল) তৃতীয় ইংলিশ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেন গ্যারি লিনেকার। কিন্তু তার ৬ গোলও ইংল্যান্ডকে এনে দিতে পারেনি বিশ্বকাপ শিরোপা। সেবার ডিয়েগো ম্যারাডোনার আজেির্ন্টনার কাছে হেরে কোয়াটার্র ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল থ্রি লায়নরা। ১৯৭৪ : গ্রেগর লাতো (৭ গোল) ওই আসরে সবোর্চ্চ ৭ গোল করেছিলেন পোল্যান্ডের গ্রেগর লাতো। কিন্তু সেবার তার ওই পারফরম্যান্স পোলিশদের ফাইনালেও নিয়ে যেতে পারেনি। তৃতীয় হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল দলটিকে। ১৯৭০ : জাডর্ মুলার (১০ গোল) জামাির্নর কিংবদন্তি তারকা জাডর্ মুলার। ১৯৭০ সালের আসরে করেছিলেন ১০ গোল। তবে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি জামাির্ন। সেবার পেলের ব্রাজিল উঁচিয়ে ধরেছিল সোনার ট্রফিটা। ১৯৬৬ : ইউসেবিও (৯ গোল) পতুর্গালের ইতিহাসে সেরা তারকাদের একজন। প্রজন্মের সেরাদের একজন। অথচ ৯ গোল করেও বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তার। ১৯৬৬ সালের আসরে সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিল পতুির্গজরা, হয়েছিল তৃতীয়। ১৯৫৮ : জ্য ফন্তেইন (১৩ গোল) জ্যঁ ফন্তেইন সম্ভবত সবচেয়ে দুভার্গা খেলোয়াড়। ১৯৫৮ সালের আসরে দুই হ্যাটট্রিকে মোট ১৩ গোল করেছিলেন ফ্রান্সের এই ফুটবলার। যা বিশ্বকাপের এক আসরে সবোর্চ্চ গোলের রেকডর্। কিন্তু ওই আসরে ফাইনালেও খেলতে পারেনি তার দল। সুইডেনকে হারিয়ে সেবার কাপ উঁচিয়ে ধরেছিল পেলের ব্রাজিল। ১৯৫৪ : সান্দ্রো ককসিস (১১ গোল) অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন সান্দ্রো ককসিস। কারণ ওই আসরে দুই হ্যাটট্রিকসহ সবোর্চ্চ ১১ গোল করেও হাঙ্গেরিকে শিরোপা এনে দিতে পারেননি তিনি। অবিশ্বাস্যভাবে জামাির্নর কাছে ফাইনালে ৩-২ ব্যবধানে হেরে বসেছিল তার দল। ককসিস ওই ম্যাচে একবারের জন্যও বল জালে জড়াতে পারেননি। ১৯৫০ : আদেমির (৮ গোল) ব্রাজিলের আয়োজিত বিশ্বকাপ। মারকানায় ২ লাখ দশের্কর সামনে ব্রাজিল সেবার শিরোপা হারিয়েছিল উরুগুয়ের বিপক্ষে। আর ৮ গোল করে কেবল সেরা গোলদাতার পুরস্কারটা জিতলেন আদেমির। ১৯৩৪ : অলড্রিচ নেজেদলি (৫ গোল) সাবেক চেকো¯েøাভাকিয়ার নেজেদলি রোমানিয়া আর সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি করে গোল করে দলকে সেমিফাইনালে যেতে সাহায্য করেন। সেখানে দুদার্ন্ত এক হ্যাটট্রিকে বলতে গেলে একাই জামাির্নকে উড়িয়ে দেন নেজেদলি। কিন্তু ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে গোল পেলেন না তিনি। চেকো¯েøাভাকিয়াও হারাল বিশ্বকাপ। স্তাবিলির মতো নেজেদলির ৫ গোলও বৃথা গেল। ১৯৩৮ : লিওনিদাস (৭ গোল) পোল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকে শুরু, ব্রাজিল ওই ম্যাচে পেল ৬-৫ ব্যবধানের এক ঐতিহাসিক জয়। এরপর চেকো¯েøাভাকিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচে দুই গোল। লিওনিদাস সেবার ৭ গোল করেও কেঁদেছিলেন। কারণ বিশ্বকাপ জিততে পারেনি সেলেকাওরা। সেমিফাইনাল থেকেই বাদ পড়ে গিয়েছিল তারা। ১৯৩০ : গুইলামোর্ স্তাবিল (৮ গোল) বিশ্বকাপের প্রথম আসর। মেক্সিকোর বিপক্ষে হ্যাটট্রিক দিয়ে শুরু করলেন আজেির্ন্টনার গুইলামোর্ স্তাবিল। পরের ম্যাচে চিলির বিপক্ষেও তার পা থেকে এলো জোড়া গোল। স্তাবিলি শো দেখা গেল সেমিফাইনালে মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও। আবার জোড়া গোল করলেন তিনি। তবে ফাইনালে পেলেন এক গোল। তাতেই কপাল পুড়ল আজেির্ন্টনার।