দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্রীলংকার ইতিহাস

এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
পোর্ট এলিজাবেথে শ্রীলংকাকে ৮ উইকেটের বড় জয় এনে দিয়ে উচ্ছ্বাস নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন নিরোশান ডিকওয়েলা। পেছনে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের মাঝে দুই টেস্টের সিরিজে ধবলধোলাই হওয়ার হতাশাও স্পষ্ট -ওয়েবসাইট
দ্বিতীয় দিনে ১৮ উইকেটের পতন দেখল সেন্ট জর্জেস পার্ক, দ্বিতীয় টেস্টটিকে ঝুলিয়ে রাখল ধারালো সমীকরণের নিচে। তিন তিনটি ইনিংসের উন্মোচন দেখেছে দিনটি। শ্রীলংকা তখন জয় থেকে ১৩৭ রান দূরে ছিল। তৃতীয় দিনে কুশাল মেন্ডিস আর ওসাদা ফার্নান্দোর অনবদ্য ব্যাটিংয়ে সেই দূরত্ব ঘুচিয়েছে অতিথিরা। সব শঙ্কা দূর করে তারা তুলে নিয়েছে ৮ উইকেটের এক ঐতিহাসিক জয়। তাতেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে লংকানরা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতা এশিয়ার প্রথম দল তারা। তা ছাড়া ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার পর ঘরের মাঠে প্রোটিয়াদের হারিয়ে দেয়া একমাত্র দলও শ্রীলংকা। কীভাবে এটি সম্ভব হলো? শ্রীলংকা তাদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫৪ রানে গুটিয়ে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকা ৫৮ রানের লিড নেয়। এরপর স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ে। তাদের ব্যাটিং লাইনআপ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। ৩৮ রান তুলতেই ৭ উইকেট খুইয়ে বসে তারা। এরপর দলনায়ক ফাফ ডু পেস্নসিস হাফসেঞ্চুরি (৫০) হাঁকালেও ১২৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি প্রোটিয়ারা। ফলে জয়ের জন্য ১৯৭ রানের লক্ষ্য পায় শ্রীলংকা। মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ওই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে অতিথিরা। আঙুলে চোট পেয়ে ম্যাচ থেকে ইম্বুলদেনিয়ার ছিটকে যাওয়াও বাধা হতে পারেনি শ্রীলংকার জয়ে। পার্টটাইম অফস্পিনার ধনঞ্জয়া সিলভাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। তিনিই প্রোটিয়াদের মাটিতে নামিয়ে আনেন। সুরাঙ্গা লাকমল স্বাগতিক লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে তার ইনসুইংয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। তিনি ৩৯ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন। বিশ্ব ফার্নান্দো ও কাসুন রাজিথা দুর্দান্ত ভূমিকা রাখেন। বোলারদের এমন নৈপুণ্যেই শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানরা দারুণ এক সুযোগ পেয়ে যায়। সামনে ১৯৭ রানের জয়ের টার্গেট। তবে তাদের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান লাহিরু থিরিমান্নে মাত্র ১০ রান করে কাগিসো রাবাদার করা অফ স্ট্যাম্পের অনেক দূরের বল তাড়া করে খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের গস্নাভসবন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। এরপরই ডুয়ান অলিভিয়ের আরেক ওপেনার দিমুথ করুনারত্নের (১৯) উইকেট তুলে নিলে ম্যাচটির দৃশ্যপট আবারও পাল্টে যেতে থাকে। কিন্তু দিনের শেষ ৩০ মিনিটে নতুন বলটি আগের মতো অতটা সুইং না করলেও কুশাল মেন্ডিস আর ওসাদা ফার্নান্দোকে বেশ বেগ পেতে হয়। তবে সতর্কতার সঙ্গে খেলে তারা আর কোনো বিপর্যয় হতে দেননি লংকান ইনিংসে। লংকানরা তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছে যায় মূলত প্রথম টেস্টের নায়ক কুশাল পেরেরা আর নিরোশান ডিকওয়েলার ব্যাটে ভর করে। যে পিচে রাবাদা আর অলিভিয়েরের বোলিং তোপে অতিথিরা প্রথম ইনিংসে ৬৬ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে ফেলেছিল সেই পিচেই তাদের বিপক্ষে ব্যাট চালাতে একটুও ভিতু মনে হয়নি এই দুই লংকান ব্যাটসম্যানকে। কুশাল মেন্ডিস ১১০ বলে ১৩ চারে ৮৪ রান করেন। অপরপ্রান্তে ওসাদা ফানান্দো ১০৬ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৭৫ রান করে অপরাজিত ইনিংস উপহার দিলে শ্রীলংকা ৪৫.৪ ওভারে ২ উইকেটে ১৯৭ রান তুলে ৮ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।