বিশ্বজয়ী শিষ্যদের গুণগান কীতির্মান দেশমের কণ্ঠে

এটা আমার জয় নয়, খেলোয়াড়দের জয়। ৫৫ দিন ধরে আমরা অনেক অসাধারণ কাজ করেছি। এটা সবের্শ্রষ্ঠ শিরোপা উৎসব। আমরা ফরাসি হতে পেরে গবির্ত, বøুজ হতে পেরে গবির্ত। এই জয়ের ভাগ তাদেরও

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে পেয়ে খুশি এখন বঁাধ মানছে না গ্রিজম্যান-পগবা-এমবাপেদের। সোনায় মোড়ানো শিরোপা নিয়ে তাই ইচ্ছামতো পোজ দিলেন তারা Ñওয়েবসাইট
আরও একবার ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতাতে গ্রিজম্যান-এমবাপেরা কতটা মরিয়া ছিলেন সেটা বোঝা গিয়েছিল শেষের বঁাশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই। দিদিয়ের দেশমের মতো আবেগহীন লোকও সোনার ট্রফিটা চেয়ে নিয়ে তাতে চুমু খাচ্ছিলেন বারবার। তার শিষ্যরা তো ভেবেই পাচ্ছিলেন না, আরাধ্য ট্রফিটাকে নিয়ে কী করবেন! বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতেই ট্রফিটা নিয়ে মাঠময় এদিক-ওদিক ছুটতে থাকেন সবাই। এভাবে অনেকটা সময় কাটিয়ে ঢুকে গেছেন ড্রেসিংরুমে। সেখানেও উৎসব। মিউজিক সিস্টেমে গান বাজিয়ে বিশ্বকাপটা নিয়ে নেচে-গেয়ে উদযাপন করেছেন দেশমের শিষ্যরা। তারা চিৎকার করছিলেন, ‘২০ বছর পর ফের চ্যাম্পিয়ন আমরা।’ দেশমের বিশ্বজয়ী শিষ্যদের উদযাপন ওখানেই থেমে থাকেনি। উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ করার জন্য গলা বসে গিয়েছিল তাদের। এরপরও যখন যেখানে মন চেয়েছে, সেখানেই নেচে-গেয়ে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন পগবা-জিরু-গ্রিজম্যানরা। বাদ যায়নি দেশমের সংবাদ সম্মেলনও। বিশ্বজয়ের আধাঘণ্টা পর ফরাসি কোচ এসেছিলেন মিডিয়ার সামনে। তার পেছন পেছন ফ্রান্সের অধের্ক দলও। এসেই নাচতে শুরু করেন দুহাত তুলে। সঙ্গে গান। টেবিলের ওপরে উঠে পড়েন স্যামুয়েল উমতিতি আর বেঞ্জামিন প্যাভাডর্। তাদের উদ্দাম নৃত্যে ছিটকে পড়ে মাইক্রোফোন। চেয়ারে বসতে গিয়েও শিষ্যদের কাÐ দেখে দঁাড়িয়ে গেলেন দেশম, হাসতে থাকলেন। নিয়ম শৃঙ্খলার বিষয়ে বরাবরই বেশ কড়া দেশম। কিন্তু বিশ্বজয়ের পর তো আর শিষ্যদের ওপর নিয়মের কড়াকড়ি চাপিয়ে দেয়া যায় না। তা ছাড়া এই শিষ্যরাই তাকে নিয়ে গেছেন সাফল্যের চ‚ড়ায়। এমন মুহ‚তের্ তাদের শাসন করবেন? দেশম এতটা বেরসিক লোকও তো নন! তিনি আত্মকেন্দ্রীক, তবে সাথর্পর নন। বরং অনেকের থেকে একটু বেশিই উদার। রোববার ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বজয় করার পর নিজের কীতির্গাথার কথা হেলায় উড়িয়েই দিতে চাইলেন, অজের্নর পুরো কৃতিত্বটাই দেশম দিতে চাইলেন ফরাসিদের উদীয়মান দলটিকে, তার বিশ্বজয়ী শিষ্যদের। রাশিয়া বিশ্বকাপে অনেকগুলো দল ফেভারিট হিসেবে খেলতে এসেছিল। তবে এদের মধ্যে ফ্রান্সই কেবল ফেভারিক তকমার মান বজায় রাখতে সমথর্ হয়েছে। খেলেছে ফাইনাল, জিতেছে শিরোপা। সেটাও তরুণদের হাত ধরে। এবারের আসরে সবচেয়ে তরুণ দল নিয়ে এসেছিল আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া। নাইজেরিয়ার পরের স্থানেই ছিল ফ্রান্স। ফরাসি দলের গড় বয়স ছিল ২৬ বছর ১ মাস। দলের ২৩ সদস্যের মতে ১৪ জনই এবার অভিষেক বিশ্বকাপে খেলেছেন। এমন অনভিজ্ঞ তার তরুণদের নিয়েই বাজিমাত করল লে বøুজরা। অবশ্য তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে দিকনিদের্শকের ভূমিকায় ছিলেন দেশম নামের একজন। ১৯৯৮ সালের আসরে ফ্রান্সের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন দেশম। এমন অভিজ্ঞ একজনের সাহচযর্ বতর্মান দলের খেলোয়াড়দের ফুটবলীয় দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিকভাবে দৃঢ় হতেও সাহায্য করেছে। ফুটবলের ইতিহাসে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপজয়ী তৃতীয় ব্যক্তি এখন দেশম। তার আগে জামাির্নর ফ্রাঞ্চ বেকেনবাওয়ার আর ব্রাজিলের মারিও জাগালো এই কীতির্ গড়েছিলেন। এমন বড় অজের্ন অবশ্য কৃতিত্বটা দলের খেলোয়াড়দেরই দিচ্ছেন দেশম, ‘এটা আমার জয় নয়, খেলোয়াড়দের জয়। ৫৫ দিন ধরে আমরা অনেক অসাধারণ কাজ করেছি। এটা সবের্শ্রষ্ঠ শিরোপা উৎসব। আমরা ফরাসি হতে পেরে গবির্ত, বøুজ হতে পেরে গবির্ত। এই জয়ের ভাগ তাদেরও। ফ্রান্স দীঘর্জীবী হোক!’ দেশকে শিরোপা জেতানোর পর কেমন অনুভূতি হচ্ছে দেশমের, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা ঠিক, তরুণ দলটির পারফরম্যান্স বিস্মিত করেছে এই কোচকে। ফাইনাল শেষে শিষ্যদের প্রশংসায় ভাসিয়ে তাই দেশম বলেছেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য! এই তরুণ দলটাই কিনা এখন বিশ্বসেরা! আমরা তেমন বড় কোনো ম্যাচ খেলিনি। তবে আমরা আমাদের মানসিক দক্ষতা দেখিয়েছি এবং চারটি গোলও করেছি। জয়টা তাদের প্রাপ্য ছিল। ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করেছে। যাত্রা পথে বেশকিছু প্রতিকূূলতার মোকাবেলা করতে হয়েছিল আমাদের।’ ফরাসি দলে তারকা তারকার অভাব ছিল না। কিলিয়ান এমবাপের মতো খেলোয়াড় ছিলেন। পিএসজিতে খেলা ১৯ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার চার গোল করে জিতেছেন আসরসেরা উদীয়মান খেলোয়াড়েরর পুরস্কারও। তার সঙ্গে আতোয়ান গ্রিজম্যান-পল পগবাদের অন্তভুির্ক্ত ফ্রান্সকে করে তুলে দারুণ শক্তিশালী এক দলে। তবে দেশম মনে করছেন, শুধু প্রতিভা থাকলেই বিশ্বকাপ জেতা যায় না। খেলোয়াড়দের মানসিক দৃঢ়তা অনেক বড় বিষয় হয়ে দঁাড়ায় বিশ্বকাপ মঞ্চে, ‘প্রতিভা যথেষ্ট নয়। মানসিক দৃঢ়তাও দরকার আছে। কোনো দলের সেটা থাকলেই কেবল তারা চূড়ায় আরোহণ করতে সমথর্ হবে।’ বিশ্বকাপ জিততে আরেকটি জিনিস দারকার, সেটি হল দলীয় পারফরম্যান্স। তবে দলে বিশেষ কিছু খেলোয়াড় থাকেন, যারা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে জানেন। এবারের আসরে যেমনটি ছিলেন গ্রিজম্যান আর এমবাপে। বাদবাকি ম্যাচের মতো ফাইনালেও দ্যুতি ছড়িয়েছেন এ দুজন। তাদের প্রতি ইঙ্গি করে দেশম বলেছেন, ‘দলগত পারফরম্যান্স সবসময়ই গুরুত্বপূণর্। তবে কয়েকজন খেলোয়াড় আছেন, যারা ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।’ দেশমের অধীনে বছর দুয়েক আগে ফ্রান্স জিততে পারতো মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিটাও। ঘরের মাঠে আয়োজিত আসরের ফাইনালে উঠে গিয়েছিল তারা। কিন্তু সেবার পতুর্গালের হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় লে বøুজদের। ইউরোর ওই পরাজয়কে শিক্ষা হিসেবে নেবে ফ্রান্স- এমনটা টুনাের্মন্ট শুরুর আগেই জানিয়েছিলেন দেশম। ফরাসি কোচ মনে করছেন, অতীত ব্যথর্তার থেকে পাওয়া শিক্ষাটা কাজে লেগেছে তাদের, ‘ইউরো চ্যাম্পিয়ন হলে হয়তো আজ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নাও হতে পারতাম আমরা! আমি হার থেকে অনেক কিছু শিখেছি।’