মাথা উঁচু করেই ফিরছে ক্রোয়েশিয়া

অবশ্যই আমরা হতাশ। তবে আমি ছেলেদের বলেছি, তোমাদের মাথা ওপরে রাখ। তোমাদের অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই Ñজালাতকো দালিচ

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
বিশ্বকাপে নিজেদের সবোর্চ্চ অজর্ন রানারআপ হওয়ার গৌরব অজর্ন করে সতীথের্দর সঙ্গে দেশে ফিরছেন ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক এবং এবারের আসরসেরা ফুটবলার লুকা মদ্রিচ Ñওয়েবসাইট
স্বপ্ন পূরণের খুব কাছে ছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু বিশ্বকাপ ট্রফিটা আর ছুঁয়ে দেখতে পারল না দলটি। ফ্রান্সের কাছে ফাইনালে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে লুকা মদ্রিচ-ইভান রাকিতিচদের। তবে নিজেদের অজের্ন মাথা উঁচু করেই বাড়ি ফিরতে পারেন তারা, এমনটাই মনে করছেন দলীয় কোচ জালাতকো দালিচ। বিশ্বকাপ শুরু হলে সবাই ব্রাজিল, আজেির্ন্টনা আর জামাির্নর মতো দলগুলো নিয়ে পড়ে থাকে। এবারও ব্যতিক্রম ছিল না। কেউ ভাবেনি ক্রোয়েশিয়া এত দূর আগাতে পারে। তবে গ্রæপ পবের্ চ্যাম্পিয়ন হয়েই ক্রোয়াটরা একটা আগাম বাতার্ দিয়ে রেখেছিল- এবার সহজে থামছে না তারা। দালিচের শিষ্যরা অবশ্য থেমেছে, তবে ফাইনাল খেলে। শক্তিশালী ফ্রান্সের সঙ্গে পুরো ৯০ মিনিট বুক চিতিয়ে লড়াই করে মদ্রিচরা হেরেছেন ৪-২ ব্যবধানে। ম্যাচটা হয়তো জিততেও পারত ক্রোয়েশিয়া। শুরুতেই মারিও মানজুকিচের আত্মঘাতী গোল পিছিয়ে দেয় তাদের। এরপর ইভান পেরিসিচের কল্যাণে সমতায় ফিরেছিল ক্রোয়াটারা। কিন্তু প্রথমাধের্র শেষের দিকে পেনাল্টি থেকে আতোয়ান গ্রিজম্যানের গোলে আবারও এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ডি-বক্সে অনিচ্ছাকৃতভাবে পেরিসিচের হাতে বল লাগে। রেফারি নেস্তর পিতানা প্রথমে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেননি। কিন্তু পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে ঠিকই স্পটকিকের নিদের্শ দেন। এরপর দ্বিতীয়াধের্ আরও দুই গোল হজম করে বসে ক্রোয়েশিয়া। এক শোধ দিলেও ম্যাচটা আর বঁাচাতে পারেনি তারা। দালিচ মনে করছেন, প্রথমাধের্র দুটি গোল ছিল ম্যাচের টানির্ং পয়েন্ট। ফাইনালের মতো ম্যাচে রেফারি পিতানা ওই পেনাল্টির সিদ্ধান্তটাও প্রশ্নবিদ্ধ লেগেছে তার কাছে। তবে আজের্ন্টাইন রেফারিকে নয়, নিজেদের হারের জন্য ভাগ্যকেই দায়ী করছেন দালিচ, ‘প্রথম ছয় ম্যাচে আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল। আজ হয়তো আমরা কিছুটা দুভার্গা ছিলাম।’ নকআউট পবর্ থেকে ফাইনাল পযর্ন্ত প্রতিটি ম্যাচে ১২০ মিনিট করে খেলা ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ জেতার মতো যোগ্য দলই ছিল। শিরোপা জিততে না পারার দুঃখটা তাই অনেক দিন মনে গেঁথে থাকবে তাদের। কিন্তু গণনার বাইরে থাকা ক্রোয়েশিয়া যে রানারআপ হলো, সেটাই বা মন্দ কী! অতীতে কেবল ১৯৯৮ সালের আসরে সেমিফাইনাল খেলতে পেরেছিল তারা। মদ্রিচ-রাকিতিচদের কল্যাণে এবার দলটি পেল বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসে সবোর্চ্চ অজর্ন। দালিচ তাই শিষ্যদের মাথা উঁচুতেই রাখতে বললেন, ‘অবশ্যই আমরা হতাশ। তবে আমি ছেলেদের বলেছি, তোমাদের মাথা ওপরে রাখ। তোমাদের অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই। মাঝে মাঝে ফুটবলে হারতে হয়। আমাদের অবশ্যই স্কোরলাইনকে সম্মান জানাতে হবে। তোমরা তোমাদের সবটুকু দিয়ে লড়েছ। কাজেই এই টুনাের্মন্টে নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়ে গবর্ করতে পার।’ মাত্র ৪২ লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট দেশ ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপে তাদের অজের্ন এখন পুরো বিশ্ব মোহিত। ফাইনালে হেরেও বিশ্ববাসীর মন জয় করে নিয়েছে দলটি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষরা মদ্রিচ-রাকিতিচ এবং তাদের উত্তরসূরিদের মাঝে অপার সম্ভাবনা দেখছেন। সব মিলিয়ে নিজেদের অজের্ন গবের্বাধ করছেন দালিচ, ‘আমি আমার দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গবির্ত। আমরা দেশকে নিয়ে গবির্ত।’ বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র ৯ মাস আগে দালিচকে দায়িত্ব দেয় দেশটির ফুটবল ফেভারেশন। তখন ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইপবর্ উতরানো নিয়েও শঙ্কা ছিল ক্রোয়াটদের। তবে দালিচের অধীনে ওই পরীক্ষায় উত্তীণর্ হয়ে বিশ্বকাপেও বাজিমাত করেছে দলটি। তার সামনে তাই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, ক্রোয়েশিয়ার কোচের দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন কিনা। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এই ছেলেদের সঙ্গে কাজ করাটা ছিল দারুণ ব্যাপার। আজ আমি কোনো সিদ্ধান্ত (দায়িত্বে থাকা না থাকা) নিচ্ছি না। আমি কেবল নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চাই।’