‘বড়’ হয়ে উঠছেন এমবাপে

ফরাসি তরুণ দান করে দিলেন বিশ্বকাপ থেকে আয়ের সব টাকা

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
বিশ্বকাপ জয়ের পর এখনো ঘোরের মধ্যেই আছেন ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা। রাশিয়া থেকে ফেরার পর বীরোচিত অভ্যথর্না পেয়েছেন দেশবাসীর কাছ থেকে। বাসে চেপে চ্যাম্পস এলিসে এভেনিওতে যাওয়ার পথে এভাবেই বিশ্বকাপটা সামনে নিয়ে বসে ছিলেন এমবাপে-গ্রিজম্যান-পগবারা Ñওয়েবসাইট
বয়স মাত্র ১৯। এই বয়সেই কিলিয়ান এমবাপে একটা জায়গায় ছাড়িয়ে গেছেন সময়ের সেরা দুই ফুটবলার লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। তিনি এখন বিশ্বকাপজয়ী। মেসি-রোনালদোরা যে স্বপ্ন এখনো ছুতে পারেননি, এমবাপের সেই স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপ পেল তার ক্যারিয়ারের ঊষালগ্নেই। তার মধ্যেই এখন ভবিষ্যতের মহাতারকা দেখতে পাচ্ছেন ফুটবলবোদ্ধারা। যেভাবে রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘ছোট্ট’ এমবাপে পারফমর্ করেছেন, সেটাও কিন্তু তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বড় হয়ে উঠছেন ফরাসি তরুণ। শুধু ফুটবল খেলাতেই নয়, মানুষ হিসেবেও। এই যেমন বিশ্বকাপ থেকে নিজের অজির্ত ৫ লাখ ডলারের পুরোটাই তিনি দান করে দিয়েছেন এক চ্যারেটি ফাÐে। ঘোষণাটা অবশ্য আগেই দিয়ে রেখেছিলেন ফুটবলের ‘বিস্ময় বালক’ হয়ে ওঠা এমবাপে। রাশিয়ায় তিনি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন একরাশ সম্ভাবনা নিয়ে। তরুণ উদীয়মান তারকা হিসেবে এমবাপে কেমন মাঠ কঁাপান সেটাই ছিল দেখার। যেমন সম্ভাবনা নিয়ে গিয়েছিলেন, মাঠে ঢেলে দিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি। অন্তত দুটি রেকডের্ তিনি নাম লিখিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলসম্রাট পেলের সঙ্গে। হয়েছেন টুনাের্মন্ট সেরা উদীয়মান ফুটবলার। মাত্র ১৯ বছর বয়সে খেলতে এসে করেছেন ৪ গোল। যার মধ্যে একটি ফাইনালে এবং জোড়া গোল রয়েছে মেসির আজেির্ন্টনার বিপক্ষে। বলতে গেলে মেসির আজেির্ন্টনা বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়েছেন তরুণ এমবাপেই। সেদিনই টিনএজার হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউট পবের্ জোড়া গোল করে পেলের রেকডের্ ভাগ বসিয়েছিলেন। এরপর টিনএজার হিসেবে ফাইনালে গোল করে আবারও বসে গেছেন পেলের পাশে। অবিস্মরণীয় একটা আসর কাটিয়েছেন এমবাপে। ‘স্পোটর্স ইলাসট্রেটেড’ জানিয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপে ম্যাচ প্রতি ২২ হাজার ৫০০ ডলার করে পেয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে সাতটি ম্যাচ খেলেছেন এই ফরোয়াডর্। এছাড়া বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স দলের সদস্য হিসেবে বোনাস পেয়েছেন আরও ৩ লাখ ৫৫ হজার ডলার। সেই হিসাবে বিশ্বকাপ থেকে এমবাপের মোট প্রাপ্তি ৫ লাখ ডলার। ফ্রান্সের ‘এল ইকুইপে’ জানিয়েছে, এই অথের্র পুরোটাই তিনি দান করেছেন এক চ্যারিটি সংস্থাকে। সেই সংস্থার নাম প্রিমিয়ার ডি করডি। সংস্থাটির কাজ হচ্ছে, প্রতিবন্ধী শিশু ও হাসপাতালে ভতির্ শিশুদের নিয়ে কাজ করা। ২০১৭ সাল থেকেই এই চ্যারিটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এমবাপে। প্রিমিয়ার ডি করডির মুখপাত্র সেবাস্তিয়ান রাফিন ‘লে পেরিসিয়ান’কে বলেছেন, ‘কিলিয়ান দুদার্ন্ত মানুষ। যখনই সুযোগ পান, উনি আমাদের সাহায্য করেন আনন্দের সঙ্গে।’ চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানটিকে এমবাপে আগেই প্রতিশ্রæতি দিয়ে রেখেছিলেন। যদিও প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে বিষয়টা খুব একটা আমলেই নেয়নি। কারণ গাছে কঁাঠাল, গেঁাফে তেল দিতে রাজি ছিলেন না তারা। সেবাস্তিয়ান রাফিন বলেন, ‘বিশ্বকাপের কিছুদিন আগেই এমবাপে এবং তার পরিবার এ ধরনের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল। তবে আমরা এ নিয়ে খুব এগোইনি। কারণ, তার বোনাস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হবে কেবলমাত্র ফ্রান্স কোয়াটার্র ফাইনালে উঠলে। তবুও তিনি সব সময় এ নিয়ে আমাদের বলে যেতেন।’ চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের ওই কমর্কতা আরও বলেছেন, ‘এটা একজন খেলোয়াড়ের সম্পূণর্ ব্যক্তিগত ইচ্ছা থেকে করা কোনো ভালো কাজ। আমরা কখনোই পৃষ্ঠপোষকদের কাছে আথির্ক সহযোগিতার জন্য ধনার্ দিই না।’ ভালো মানুষের কাজ! এই কাজটি করে সত্যিই মানুষ হিসেবেও ‘ছোট্ট’ এমবাপে অনেক বড় হয়ে উঠেছেন। খেলার মাঠে তো তিনি বড় হওয়ার বাতার্ দিয়েছেনই। পেলের রেকডের্ ভাগ বসাচ্ছেন, বড় বড় তারকাদের সঙ্গে তার তুলনা হচ্ছে, তাকে পাওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেছে ইউরোপের ক্লাবগুলোর মধ্যে। এমবাপে এখানেও শান্ত। বড় অথর্ প্রাপ্তির লোভ সামলে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বতর্মান ক্লাব পিএসজিতেই থেকে যাবেন। অথার্ৎ ফরাসি ক্লাবটির আশা ভাঙতে নারাজ এমবাপে। বড় হয়ে ওঠার পরিচয় তো এমবাপে দিয়েছেন এই ক্ষেত্রেও।