নিজেদের ভাগ্যবান ভাবছেন পাইলট

এ ধরনের দুর্ঘটনা আমরা কেউই আশা করি না। কোনো দেশেই এমন ঘটনা যেন না ঘটে। আমরা সত্যিকার অর্থেই খুব ভাগ্যবান। বাসে আমরা ১৭ জন ছিলাম। এর মধ্যে সৌম্য সরকারও ছিল। আমরা সবাই নামাজ পড়তে যাচ্ছিলাম

প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
হ্যাগলি ওভাল মাঠের খুব কাছে আল নূর মসজিদে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে সন্ত্রাসী হামলা হয়। সেই হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। এই হামলার ঘটনায় নিরাপদে থাকলেও আতঙ্ক বিরাজ করছে ক্রিকেটারদের মনে। শুক্রবার টিম ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলট ক্রাইস্টচার্চের ঘটনা নিয়ে ভীতিকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ৫০ গজ দূরে ছিল তামিম-মুশফিকদের বাস। আরেকটু আগে মসজিদে ঢুকলেই ভয়ানক ঘটনা ঘটে যেতে পারত ক্রিকেটারদের জীবনে। নিজেদের ভাগ্যবান উলেস্নখ করে খালেদ মাসুদ পাইলট বলেছেন, 'প্রথমেই যদি দুর্ঘটনাটার কথা বলি, তাহলে আপনারা সবাই-ই হয়তো দেখেছেন কী হয়েছে সেখানে। এ ধরনের দুর্ঘটনা আমরা কেউই আশা করি না। কোনো দেশেই এমন ঘটনা যেন না ঘটে। আমরা সত্যিকার অর্থেই খুব ভাগ্যবান। বাসে আমরা ১৭ জন ছিলাম। এর মধ্যে সৌম্য সরকারও ছিল। আমরা সবাই নামাজ পড়তে যাচ্ছিলাম। দুজন (নাঈম হাসান ও লিটন দাস) শুধুমাত্র হোটেলে ছিল, বাকি সবাই আমাদের সঙ্গেই ছিল।' ঘটনাস্থল থেকে আমরা ৫০ গজের মতো দূরে ছিলাম। আমরা ভাগ্যবান। আর ৩-৪ মিনিট আগেই যদি আমরা আসতাম, তাহলে হয়তো মসজিদের মধ্যে থাকতাম। তখন অনেক ভয়াবহ একটা ঘটনা ঘটে যেত। আমি শুকরিয়া আদায় করছি, আমরা খুব সৌভাগ্যবান বলেই বেঁচে গেছি।' বাসে বসেই রক্তাক্ত মানুষদের মসজিদ থেকে বের হতে দেখেছেন ক্রিকেটাররা। খুব খারাপ অবস্থা দেখেই পাশের পার্ক দিয়ে পরবর্তীতে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন তারা। টিম ম্যানেজার জানালেন, 'আমার মনে হচ্ছিল আমরা মুভি দেখছিলাম। বাসের মধ্যে থেকে দেখছিলাম, রক্তাক্ত অবস্থায় অনেকে বেরিয়ে আসছে। বেশকিছু মানুষ বেরিয়ে আসতে পেরেছে। প্রায় ৮/১০ মিনিট আমরা বাসের মধ্যেই ছিলাম। ওখানে সবাই মাথা নিচু করে ছিল। যদি কোনো কারণে বাসে হামলা হয়, আমরা যেন বেঁচে যেতে পারি। অবশ্য পরে বাস থেকে বেরিয়ে এসেছি। কেন না মনে হচ্ছিল সন্ত্রাসীরা বেরিয়ে এসে এলোপাতাড়ি গুলি করলে কেউই বাঁচব না।' এখন ক্রিকেটারদের মনে একটাই ভাবনা কীভাবে দ্রম্নত দেশে ফেরা যায়। খালেদ মাসুদ বললেন, তারা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। টিকিট পাওয়া মাত্রই বাংলাদেশ দল দেশের বিমানে চড়বেন। সবকিছুই নির্ভর করছে টিকিট পাওয়ার ওপর। টিম ম্যানেজার বলেছেন, 'আমরা দেশে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছি। এখানে বিমান টিকিটের ব্যাপার জড়িত। একসঙ্গে এত টিকিট ম্যানেজ করা সহজ কোনো ব্যাপার নয়। দু-একজন হলে একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমরা ১৯ জন যাব এখান থেকে বাংলাদেশে। অন্য কোচিং স্টাফ যারা আছেন তারা হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাবে, তারা হয়তো পেয়ে যাবে। বাকি ১৯ জনের জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। ৭/৮ জন করে হলেও যেন আমরা দেশে পাঠাতে পারি। তবে আমরা চাচ্ছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে চলে যেতে।' কারোই মানসিক অবস্থা ভালো নয় বললেন খালেদ মাসুদ, 'মানসিক চাপ তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক। আপনি যখন নিজের চোখে এইসব ঘটনা দেখবেন, তখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। বাসের মধ্যে অনেকেই কান্নাকাটি করছিল, অনেকেই কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। এই মুহূর্তে সবাই হোটেলে নিরাপদে আছে। ঘটনার পর ম্যানেজার হিসেবে আমি চেষ্টা করেছি পুরোদলকে একসঙ্গে মিটিং রুমে নিয়ে আসার। সবাইকে সাপোর্ট করার।'