ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিরাপত্তা দল পাঠানো হবে

আমাদের যদি মনে হয় বিদেশ থেকে যা দিচ্ছে, তা যদি যথেষ্ট মনে না হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিব (নিজস্ব নিরাপত্তা পাঠাব)। তবে এটা তারা যা দিচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করবে। -নাজমুল হাসান পাপন

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। যা নিয়ে দেশ-বিদেশে তুমুল সমালোচনা তৈরি হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছেও এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। এমনকি বিসিবির পক্ষ থেকে ক্রিকেট নিউজিল্যান্ডের কাছেও এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি করা হয়। ঘটনার দিনই বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে ক্রিকেট দলের বিদেশ সফরে নিরাপত্তার বিষয়টাই আগে খতিয়ে দেখা হবে। এরপরই দল সফরে যাবে কি যাবে না- তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দেশে ফিরে এসেছে শনিবার রাতেই। রোববার বঙ্গবন্ধুর ৯৯তম জন্মদিবস এবং শিশু দিবস উপলক্ষে বিসিবি বন্ধ ছিল। এদিন দুপুরে ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহতদের রূহের মাগফিরাত এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার জন্য শুকরানা মিলাদের আয়োজন করা হয় বিসিবিতে। সেই মিলাদ মাহফিলের পরই গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। সেখানে আবারও উঠে আসে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার বিষয়টি। এমনকি বিসিবি প্রধানকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ভবিষ্যতে কোনো সফরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবির নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে কি না। জবাবে বিসিবি প্রধান জানিয়ে দেন, প্রয়োজন হলে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবির নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী পাঠানো হবে। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা যেহেতু প্রাকটিসিং মুসলিম। মসজিদে যেতে হয়, নামাজ পড়তে হয়- এসব দিক বিবেচনা করা নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে কি না জানতে চাইলে বিসিবি প্রধান বলেন, 'এটা আমাদের জন্য আরও একটা ইসু্য। বিদেশে সাধারণত নিরাপত্তা দেয়া হয় খেলার মাঠে, হোটেল থেকে মাঠে যাওয়া-আসা। এছাড়া অন্য কোথাও ব্যবস্থা থাকে না। তবে ওদের (দ্বিপাক্ষিক সিরিজের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক দেশ) সাথে আগে বলে কিছু করা যায় কি না তা আমরা দেখব। আমাদের এখান থেকে সিকিউরিটি যাবে কি না তা নির্ভর করবে আমরা কি পাচ্ছি, তার ওপর।' আগের অবস্থার সঙ্গে এখনকার অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে হিসেবেই এখন চিন্তা-ভাবনা করতে হবে বলে জানান বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, 'আগে তো বিশদ আলোচনা করতাম না। নিউজিল্যান্ডে তিনদিন ছিলাম, সেখানে কোনো পুলিশই দেখিনি। ওই দেশটাই হয়তো এমন। পুলিশ থাকলেও তারা মসজিদে পাহারা দেয়ার কথা চিন্তাই করেনি; কিন্তু নতুন ঘটনা চোখ খুলে দিয়েছে। এখন ব্যবস্থা নিতেই হবে। আমাদের যদি মনে হয় বিদেশ থেকে যা দিচ্ছে, তা যদি যথেষ্ট মনে না হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিব (নিজস্ব নিরাপত্তা পাঠাব)। তবে এটা তারা যা দিচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করবে।' মহাবিপদ থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে জাতীয় দল। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে দলকে কীভাবে রক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হবে? বিসিবি সভাপতির জবাব, 'আগে বাস্তবতা বুঝতে হবে। পাকিস্তানে নারী দল খেলতে যাওয়ার আগে আমরা কিন্তু নিরাপত্তার লোক পাঠিয়েছি। ডিজিএফআই থেকেও লোক পাঠিয়েছি, সেখানকার নিরাপত্তা বোঝার জন্য। পাকিস্তানে যেটা হয়েছে, বাংলাদেশের মতোই তারা নিরাপত্তা দিয়েছে। উপমহাদেশে নিরাপত্তা দেখি এক রকমভাবে।' উপমহাদেশের বাইরে নিরাপত্তার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখা হয় জানিয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, 'অন্য দেশে দেখেন, ক্রিকেট খেলার কথা বলি, ইংল্যান্ডে সিকিউরিটি একদম ভিন্ন। আমাদের মতো সিকিউরিটি ব্যবস্থাপনা আমরা কোথাও দেখি না। আপনি যদি অস্ট্রেলিয়া যান, নিউজিল্যান্ড বা সাউথ আফ্রিকা যান, ওদের একেক জায়গায় একেক রকম (সিকিউরিটি)। লন্ডনে যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছিল, সেখানেও সিকিউরিটি বলতে ছিল নামমাত্র। সেখানে পুলিশ-বন্দুক-গাড়ি, এগুলো দেখাই যায় না। এটাই ওদের সিস্টেম'। আগামী আয়ারল্যান্ড সিরিজেই বিসিবি থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে? বিসিবি সভাপতি বলেন, 'এ রকম কোনো চিন্তা এখনো করিনি। আমরা এখন যে কোনো দেশে যাওয়ার আগে নিরাপত্তা পরিকল্পনা চাইব। সেটা ঠিকমতো প্রয়োগ হচ্ছে কি না, তা দেখতে কাউকে পাঠাব। সিকিউরিটির লোকই পাঠানো হবে, ব্যাপারটা তা নয়। কাউকে পাঠানো হবে। দেখা হবে ওরা যা বলছে, তা ঠিকমতো আছে কি না। এরপর যদি মনে হয়, তাহলে আমরা প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা নিব।'