সেই ভারতেই স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

নোপালের বিরাটনগরের শহীদ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বুধবার বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সিরাত জাহান স্বপ্না। পেছনে তাকে সতর্ক পাহারায় রেখেছেন প্রতিপক্ষ ভারতের ডিফেনডার। শেষ পর্যন্ত এবারও সেমিফাইনালে বড় হার নিয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বিদায় নিয়েছেন মারিয়া-সবিনাদের দল -বাফুফে

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
মেয়েদের সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সবসময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ ভারত। সাফের শুরু থেকে সবগুলো আসরের শিরোপা যাদের ঘরে। বয়স আর অভিজ্ঞতা সব কিছুতেই তারা এগিয়ে ছিল বাংলাদেশের মেয়েদের থেকে। বুধবার সেমিফাইনালে তাই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হারটা অনুমেয়ই ছিল। তবে সেটা কত বড় ব্যবধানে হবে, সেটাই ছিল দেখার বিষয়। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন প্রতিরোধের প্রত্যাশা করলেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। আর তাতেই ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে হেরে সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে গেল মারিয়া-সাবিনাদের সাফ শিরোপার স্বপ্ন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাটা কখনই ছুঁয়ে দেখা হয়নি বাংলাদেশের। গত আসরে এই ভারতের কাছে হেরেই শিরোপার খুব কাছ থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল লাল-সবুজের মেয়েদের। সেমিফাইনালে ভারতকে পেলে তাদের সঙ্গে পেরে উঠা অবাস্তব চিন্তাই হবে, সেটা অনুমান করে গ্রম্নপপর্ব নিয়েই ভারত এড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। আর তাই এই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় পেলেও গ্রম্নপের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক নেপালের কাছে ৩-০ গোলের হারই বুঝিয়ে দিচ্ছিলো সেমিতেই শেষ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের এবারের সাফ মিশন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জুনিয়র দলটির একাধিক সাফল্য থাকায় আশায় বুক বেধেছিলেন কোচ ছোটন। যদিও অভিজ্ঞতা আর বয়সে এগিয়ে থাকা ভারতের বিপক্ষে সেটা খুব সহজ হবে না জানাই ছিল। তারপরও বাংলাদেশ দলে বেশিরভাগ বয়সভিত্তিক দলের ফুটবলার থাকায় দলের খেলোয়াড়, কোচ, টিম ম্যানেজম্যান্ট আশা করেছিল হয়তো ভারতের বিপক্ষে নতুন কোনো ইতিহাস রচনা সম্ভব হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি আর সম্ভব হয়নি। পূর্বে ভারতের বিপক্ষে আটবার হেরে যাওয়া বাংলাদেশের পরিসংখ্যানে যোগ হয়েছে আরও একটি নতুন হার। বুধবার শহীদ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে সেমিফাইনাল ম্যাচের শুরুর ১৭ মিনিট পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল বাংলাদেশ। ১৮ মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বলটি এগিয়ে গিয়ে লাফিয়ে উঠে গ্রিপ করতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক। কিন্তু বল তার হাত ছুঁয়ে গোল লাইন অতিক্রম করার পথেই ছিল। পলে বলটা আলতো টোকায় জালে ঠেলে দেন ডালমিয়া চিব্বের। সেখানে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা বলের নাগালই পাননি (১-০)। এরপরই ভেঙে চুরে খান খান হয়ে পড়ে বাংলাদেশের রক্ষণ। প্রতিটি গোলই ছিল বাংলাদেশের রক্ষণের দুর্বলার ফল। ২৩ মিনিটে দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেয় সাফের চারবারের এবং সকল আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত। বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ভারতের একজন ফুটবলার। তাকে আটকে দিতে ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড়ে গিয়েছিলেন শিউলি আজিম। কিন্ত সতীর্থকে বল পাস দেন ভারতের ফুটবলার। আর সেখানে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। ছোট বক্সের কাছ থেকে ডান পায়ে সহজ গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইন্দুমতি কাথিরসেন (৩-০)। ভারত তৃতীয় গোলটি পেয়েছে ৩৭ মিনিটে। এবারো ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলেছে ভারত। তবে এই অর্ধে কিছুটা আক্রমণের সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় লাল-সবুজরা। ৫৮ মিনিটে গোলের একটা সুযোগ সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ। বল নিয়ে ভারতের বক্সে ঢুকে যাবার মুহূর্তে বাংলাদেশের একজন ফুটবলারকে ফাউল করেন ভারতের ডিফেন্ডার। মনিকা চাকমার ফ্রি কিক বক্সে ক্লিয়ার করেন ভারতের ডিফেন্ডাররা। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে ডান প্রান্ত ধরে বল নিয়ে তীব্র গতিতে ভারতের অর্ধে ঢুকে পড়েন মনিকা চাকমা। কিন্তু কোনো বিপদ ঘটানোর আগেই বল নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নেয় ভারত। পরের মিনিটেই ভারতের মনিষার শক্তিশালী শট আটকে দেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। ইনজুরি টাইমের একেবারে শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের জালে আরও একবার বল পাঠায় সাফের ৪ বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। এবার বিজয়ী দলের হয়ে গোলটি করেন মনিষা (৪-০)। আর সেই গোলেই শেষ পর্যন্ত ফাইনালে পৌঁছে যায় তারা। পরে আর কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি। ফলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। আগামী ২২ মার্চ ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।