সাফে ব্যর্থতার কারণ বয়সভিত্তিক দলের নির্ভরতা!

বয়সভিত্তিকের প্রতিটি দলে আমাদের অনেক খেলোয়াড় পেতে হবে। জাতীয় দলের জন্য থাকতে হবে পর্যাপ্ত সিনিয়র খেলোয়াড়, যাদের বয়স এবং অভিজ্ঞতা দলে ভারসাম্য আনবে। কেননা তারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, চাপ নিতে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। যেটা তরুণরা পারে না -পল স্মলি

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
গত কয়েক বছর ধরে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবলের সাফল্য দারুণ। এবার তাই সেই দলটির বেশিরভাগ খেলোয়াড়কে নিয়ে সাফে চ্যাম্পিয়নশিপের পঞ্চম আসরে নেমেছিল লাল-সবুজরা। কিন্তু সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরে বুধবার ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। একদিন পরই বাফুফের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলি জানালেন বয়সভিত্তিক দলের ওপর অতি নির্ভরতার কারণেই এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ব্যর্থতা হয়েছে। গতি, শক্তি, দম ও দক্ষতা- ফুটবলে এই গুণগুলো থাকা প্রয়োজন। প্রথম তিনটিতে ভারতের সঙ্গে পালস্না দিলেও দক্ষতায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। বাংলাদেশ দলের হারের যে সকল কারণ স্পষ্ট হয়েছে তা হলো- গোলরক্ষকের দুর্বলতা, দক্ষতায় সীমাবদ্ধতা, কোচ ছোটনের অদূরদর্শিতা, ভুল একাদশ গঠন। নেপালের বিপক্ষে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের নাম ধরে ধরে সমালোচনা করেছিলেন বাংলাদেশের কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। ব্যাপারটি খুব ভালো হয়নি। এতে খেলোয়াড়রা নিজেদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারেন। ফুটবল মাঠে যেকোনো খেলোয়াড়েরই ভুল হতে পারে, সেটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য টিম মিটিং আছে। প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলন ভুল ধরিয়ে দেয়ার জায়গা নয়। এতে কোচ-খেলোয়াড় সম্পর্কে ফাটল ধরে। ম্যাচেও সেটি ফুটে ওঠে। এবারের সাফে ২০ সদস্যের মধ্যে ১৯ জন ছিলেন বয়সভিত্তিক দলের। স্মলির হিসেব অনুযায়ী জাতীয় দল গড়তে বাংলাদেশের সঞ্চয় মোটে ৪০ থেকে ৪৫ জন খেলোয়াড় এবং সিংহভাগই বয়সভিত্তিক দলের। সাফের পাঁচ আসরে বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দল তিনবার উঠেছে সেমি-ফাইনালে, একবার গ্রম্নপপর্ব থেকে বাদ। সেরা সাফল্য ২০১৬ সালে রানার্সআপ হওয়া। এবার নেপালে গ্রম্নপপর্বে এক জয় ও এক হারের পর সেমিফাইনালে ভারতের কাছে ৪-০ গোলে হার। তিন ম্যাচে ২ গোল দিয়ে ৭ গোল খেয়েছে দল। আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কাজ করা স্মলি তাই সমস্যার কারণ খুঁজে পেলেন বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভরতায়, 'শুরুর একাদশে আমাদের চার জন ছিল অনূর্ধ্ব-১৬ দলের। সাবিনা ছাড়া বাকিরা অনূর্ধ্ব-১৮ দলের। আমি মনে করি, জাতীয় পর্যায়ে নেপাল ও ভারতের সঙ্গে তাই বাংলাদেশের তুলনা করা ঠিক নয়। কেননা তাদের বয়সভিত্তিকের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক খেলোয়াড় আছে। অথচ বাংলাদেশের একটা গ্রম্নপ বয়সভিত্তিকের একাধিক পর্যায়ে খেলে।' জাতীয় দলের সমস্যা সমাধানে স্মলি বলেন, 'বয়সভিত্তিকের প্রতিটি দলে আমাদের অনেক খেলোয়াড় পেতে হবে। জাতীয় দলের জন্য থাকতে হবে পর্যাপ্ত সিনিয়র খেলোয়াড়, যাদের বয়স এবং অভিজ্ঞতা দলে ভারসাম্য আনবে। কেননা তারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, চাপ নিতে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। যেটা তরুণরা পারে না।' চলতি সাফে বাংলাদেশের গড় বয়স ১৭ বছর চার মাসের কাছাকাছি। সে তুলনায় ভারতের খেলোয়াড়দের গড় বয়স ২১ বছর চার মাস; নেপালের আরেকটু বেশি। যে কারণে বাংলাদেশ ওই দুই দলের বিপক্ষে পেরে ওঠেনি লাল-সবুজের মেয়েরা। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে আক্রমণাত্মক খেলার অভ্যাস বাংলাদেশের। সাফল্যও মেলে ওই ছকে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ওই ছক কাজে আসে না। কেননা এখানে রক্ষণ আগে সামলাতে হয়। এনিয়ে সাফের আগে কাজ হয়েছিল কিনা? এ ব্যাপারে স্মলি জানান, 'দেখুন তিন-চার বছরের ব্যবধানও স্থানভেদে অনেক। ইউরোপের যে খেলোয়াড়টির বয়স ১৭/১৮ বছর তার টেকনিক্যাল এবং ট্যাকটিক্যাল জ্ঞান এই উপমহাদেশের ১৭/১৮ বছরের বয়সীদের চেয়ে বেশি। তাছাড়া জাতীয় দলে আসার একটা পদ্ধতি আছে; আপনাকে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে আসতে হবে। একটা নির্দিষ্ট জাতীয় দল থাকলে আপনি আন্তর্জাতিক ম্যাচ, প্রীতিম্যাচ এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলে উন্নতি করতে পারবেন। এই মেয়েরা বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলবে আবার সাফে এবং আমি যদি আশা করি, তারা ভারত, নেপালের সঙ্গে লড়াই করবে, এটাই খুবই অন্যায্য চাওয়া।' স্মলি আরও বলেন, 'এই দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা, আঁখি, শামসুন্নাহার অনূর্ধ্ব-১৬ দলের। মাসুরা, শিউলি অনূর্ধ্ব-১৮ দলের। এরা বয়সভিত্তিকের ওই পর্যায়ে পারফর্ম করতে পারে। এ কারণে আমরা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতায় সমস্যায় পড়েছিলাম; তারা ভুল করেছিল। তাছাড়া জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলাটাও অন্যতম কারণ।' জাতীয় পর্যায়ে ভালো খেলতে হলে একটা নির্দিষ্ট দল থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন স্মলি। একই সঙ্গে তিনি বলছেন খেলতে হবে অনেক ম্যাচ। আর লিগ তো থাকতে হবে। এখন দেখার বিষয় তার এ পরামর্শগুলো কতটা আমলে নেয় বাফুফে।