বিশ্বকাপে স্পিনারদের ওপর আস্থা

ফাস্ট বোলিং দিয়ে আমার মনে হয় না ইংল্যান্ডে আমরা ম্যাচ জিততে পারব। জিতলে স্পিন দিয়েই জিততে পারব। আমরা যদি ২৬০/২৭০ রান করতে পারি, তখন স্পিনাররাই আমাদের ম্যাচ জেতাতে পারবে, পেসাররা নয় -আমিনুল ইসলাম বুলবুল

প্রকাশ | ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক। টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। বর্তমানে চাকরি করছেন আইসিসিতে। ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার এশিয়া এই পদে। চাকরির সূত্রে সম্প্রতি ছিলেন আইসিসির সদর দপ্তর দুবাইয়ে। সেখান থেকে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ঢাকার একটি গণমাধ্যমে আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল গঠন নিয়ে জানিয়েছেন নিজের মতামত। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সেরা ১৫ জনের নাম জানিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বিশ্বকাপের দলে সৌম্য সরকারকে রাখেননি তিনি, রেখেছেন স্পিনার তাইজুল ইসলামকে। মূলত আগামী বিশ্বকাপে পেসার নয়, স্পিনারদের ওপর আস্থা রাখছেন তিনি। তার মতে, বিশ্বকাপে ম্যাচ জিতলে স্পিন দিয়েই জেতা সম্ভব। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যদি ২৬০/২৭০ রান করতে পারে, তাহলে স্পিনারই ম্যাচ জেতাতে পারবে, পেসাররা নয়। বিশ্বকাপ দলে স্পিনারদের উপর আস্থা প্রসঙ্গে আমিনুল ইসলাম বলেন, 'ফাস্ট বোলিং দিয়ে আমার মনে হয় না ইংল্যান্ডে আমরা ম্যাচ জিততে পারব। জিতলে স্পিন দিয়েই জিততে পারব। আমরা যদি ২৬০/২৭০ রান করতে পারি, তখন স্পিনাররাই আমাদের ম্যাচ জেতাতে পারবে, পেসাররা নয়।' দলে স্পিনার ওপর আস্থা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বুলবুল বলেন, 'দেখুন, ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ বলেই সবম্যাচ জেতাতে শুধুমাত্র পেস বোলাররাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবেন-এমন চিন্তা নিয়ে যারা দল গড়ছেন তাদের সঙ্গে আমি পুরো একমত নই। আমি নিশ্চিত বিশ্বকাপের জন্য প্রায় সবগুলো দলই স্পিনারদের ওপরও জোর দিবে। বিশেষ করে একজন লেগস্পিনারকে দলে রাখবে প্রায় সবগুলো দল। আর আমাদের যেহেতু কোন লেগস্পিনার নেই। তাই আমি দলে 'অ্যাওয়ে স্পিনার' হিসেবে তাইজুল ইসলামকে নিতে চাই। সাকিব ইনজুরি থেকে ফেরার পর এখন পর্যন্ত কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেনি। আর এবারের বিশ্বকাপ কিন্তু লম্বা সময়ের খেলা। সেমিফাইনালে যাবার আগেই ৯টি ম্যাচ খেলতে হবে। সাকিবের শতভাগ ফিটনেস নিয়ে আমি একটু সন্দিহান। সেজন্য দলে আমি কাভার হিসেবেও তাইজুলকে রেখেছি। এমনও হতে পারে কোন ম্যাচের একাদশে সাকিব ও তাইজুল দুজনেই থাকতে পারে।' 'হয়তো অনেকে বলতে পারেন তাইজুল তো মাত্র ৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। আরো তো অনেক বাঁহাতি স্পিনার আছে, তাহলে তাইজুলকেই কেন আমি পছন্দ করছি? করছি, কারণ আমি যে বিশ্বাস নিয়ে তাকে দলে রেখেছি তা পূরণ করার দক্ষতা তার আছে। দলে যেহেতু জেনুইন কোন লেগস্পিনার আমাদের নেই, সেই শূন্যতার কিছুটা হলেও তাইজুল পুরো করতে পারে।' বিশ্বকাপ দলে সৌম্য সরকার না থাকার কারণ সম্পর্কে বুলবুল জানিয়েছেন, 'জানি এই প্রশ্নও উঠবে। সহজ ব্যাখা-পারফরমেন্স! আমরা ২০১৫ সালের দেশের মাটিতে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলা সেই সৌম্যকে কি আর পেয়েছি? ২০১৬ থেকে সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত সৌম্য সরকার ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। বড় ইনিংস বলতে গেলে মাত্র চারটি। তিনটি হাফসেঞ্চুরি ও একটি সেঞ্চুরি। এই ম্যাচগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটিতে সৌম্য ব্যাট করেছে লোয়ার অর্ডারে। বাকিগুলোতে ওপেনার অথবা ওয়ানডাউনে খেলতে নেমেছে। কিন্তু টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে দল যা চায়, যে ধারাবাহিকতা খোঁজে, সেটা কি সৌম্যের কাছ থেকে পাওয়া গেছে?' চলতি ঢাকা লিগেও সৌম্যের পারফরমেন্স নিয়ে নির্বাচকরা চিন্তিত। সৌম্য সরকার এখন পর্যন্ত যে 'অতিরিক্ত সুযোগ'পেয়েছেন সেক্ষেত্রে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত তেমন সুযোগ পাননি। 'বিশ্বকাপে মোসাদ্দেককে সুযোগটা নির্বাচকরা দিতেই পারেন। সে অনেক পরিণত হয়ে উঠছে। আবাহনীর মতো দলের অধিনায়কত্ব করছে। চাপও নিতে শিখেছে। পারফর্মও করছে ব্যাট হাতে। যদিও সে এখন জাতীয় দলে নেই। তবে তার মধ্যে অনেক বড় সম্ভাবনা আছে।' ১৫ জনের মধ্যে তিনজন স্পিনার রাখা নিয়ে বুলবুল বলেন, 'মাশরাফি, মুস্তাফিজ, রুবেল ও সাইফুদ্দিন-আমার সেরা ১৫তে এই চারজন পেস বোলার। লম্বা সময় ধরে খেলা হয়তো আরেকজন পেস বোলার দলে নেয়ার যুক্তি ছিলো। কিন্তু আমি পনের জনের মধ্যে অবশ্যই ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানকে রাখবো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই মূহূর্তে তার ফর্মও বেশ ভালো। সৌম্যকে না রাখা এবং তাইজুলকে দলে নেয়ার যুক্তি অনেকেরই পছন্দ হবে না। তবে আমি আবেগ নয়, বাস্তবতার নিরিখেই এই দল গড়েছি।' \n: বুলবুলের বিশ্বকাপ দল : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।