টিম ম্যানেজমেন্ট অদূরদর্শী: ফারুক

এইসব না বলে যদি বলত, এটাই আমাদের সেরা দল, যারা ফর্মে নেই আশা করব তারা ফর্মে ফিরে আসবে। তাহলে কিন্তু আত্মবিশ্বাসটা একটু ভালো হতো। এইদিক থেকে আমার মনে হয়েছে একটু দূরদর্শিতার অভাব মনে হয়েছে ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে।'

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণার আগেরদিন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছিলেন, এটাই চূড়ান্ত দল নয়। আয়ারল্যান্ড সফরের পারফরম্যান্সের পর আসতে পারে বদল। দল ঘোষণার সময় এ কথা পুনরাবৃত্তি করেন প্রধান নির্বাচকও। তবে সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের ঘোর আপত্তি এই জায়গায়। দল নিয়ে ম্যানেজমেন্টের এমন অনিশ্চয়তা ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব পড়তে পারে বলে মত তার। দলগঠনে নির্বাচকদের বাহবা দিলেও ফারুক আহমেদ অন্য প্রসঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টকে সমালোচনায়ও বিদ্ধ করেছেন। তাদেরকে অদূরদর্শী হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। ১৬ এপ্রিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দল ঘোষণার পর থেকে চারধারে একটাই কৌতূহল-কেমন হলো বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ দল? প্রায় সবার মতো জাতীয় দলের সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদও মানলেন-'বিশ্বকাপের দলটা ভালো হয়েছে। সম্ভাব্য সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকেই দল বানানো হয়েছে। টিমটা একদম খারাপ হয়নি। এখন বাকিটা হলো ক্রিকেটাররা সবাই মাঠে গিয়ে পারফর্ম করা।' আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে ঘোষণা করতে হয় বিশ্বকাপ স্কোয়াড। তবে সেই স্কোয়াডে ২৩ মে পর্যন্ত আইসিসির অনুমতি ছাড়াই বদলের সুযোগ আছে। একথা জানার পরই আয়ারল্যান্ড সিরিজের পারফরম্যান্স গণ্য করার কথা জানান প্রধান নির্বাচক। যে দুটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল সবচেয়ে বেশি সফল, দুটিতেই প্রধান নির্বাচক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ২০০৭ ও ২০১৫ বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা থেকে ফারুক বলছেন, দল নিয়ে যে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট, এটি না পরে বিপদ ডেকে না আনে। সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ ম্যানেজমেন্টের এরকম দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাব দলের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর মনে করছেন, 'আমার মনে হচ্ছে দলটা নিয়ে নির্বাচক, টিম ম্যানেজমেন্ট অনিশ্চয়তায় আছে। এটা ভালো কোনো দিক নয়। আমি দেখেছি যে ২৩ মে পর্যন্ত সময় আছে, এটা নিয়ে এখনো চিন্তা করছে। এমন করে চিন্তা করলে আসলে পুরো দলকে আত্মবিশ্বাস দিবে না। কারণ খেলোয়াড়রা এত বড় টুর্নামেন্ট খেলতে যাবে। আমরা সবাই জানি যে জুন-জুলাই এ বিশ্বকাপ হবে। এটার পরিকল্পনা আরও ছয়-সাত থেকেই হওয়া উচিত ছিল। সেটাও হয়েছে কিন্তু সেই সঙ্গে বলা হয়েছে যে আয়ারল্যান্ডের পারফর্মেন্সের পরে পরিবর্তন আসতে পারে দলে। এটা আমি আসলে খুব ভালোভাবে দেখি না। এতে দলের খেলোয়াড়রা আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগবে।' 'এইসব না বলে যদি বলত, এটাই আমাদের সেরা দল, যারা ফর্মে নেই আশা করব তারা ফর্মে ফিরে আসবে। তাহলে কিন্তু আত্মবিশ্বাসটা একটু ভালো হতো। এইদিক থেকে আমার মনে হয়েছে একটু দূরদর্শিতার অভাব মনে হয়েছে ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে।' ব্যাটিং অর্ডারে গভীরতা, পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন নেই তার। স্পিন আক্রমণে অফ স্পিন নিয়ে একটু চিন্তা থাকলেও ফারুক মনে করেন, এটি নিয়েও খুব বেশি ভাবার নেই। তবে তিনি ঘুরেফিরে ওই ভয়ের কথাটাই বললেন, 'ফর্ম সব সময় ধর্তব্যে নেয়া যায় না। যেমন সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউলস্নাহ ফর্মে নেই, তাদের বাদ দিয়ে তো দল করা যাবে না। সবাইকে আত্মবিশ্বাসী করতে হবে, যেটি আসবে টপ ম্যানেজমেন্ট থেকে। সেটি সংক্রমিত হবে পুরো দলে। এটির অভাব দেখছি এবার। আশঙ্কা হচ্ছে, যখন দল এমন অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যায় (দল পরিবর্তন হতে পারে শেষ মুহূর্তে), তখন ভালো করা কঠিন হয়ে যায়। এটা নিয়েই আমার বড় ভয়।' দল নিয়ে কিছু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করলেও ফারুক মনে করেন ঘোষিত দলটিই এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ দলটা বর্তমান সময়ের সেরা দল। আমি চাইতাম একটা লেগ স্পিনার হলে খুব ভালো হতো, বৈচিত্র্য দিতে পারত দলে। যেহেতু আমাদের লেগ স্পিনার নেই, সাকিব আল হাসানের সঙ্গে অফ স্পিনার ও ৫-৭টা ব্যাটসম্যান আছে, কিছু কোর পেস্নয়ার আছে দলের মধ্যে। এমন খেলোয়াড় আছে যাদের ৩টা বিশ্বকাপ খেলার মতো অভিজ্ঞতা আছে। তবুও বলব শুভ কামনা। আশা করি, এ দলটাই ভালো খেলবে।' ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে এই দলের তুলনার প্রসঙ্গ উঠলে ফারুক কোন বিতর্ক তৈরির সুযোগই দিলেন না- '২০১৫ বিশ্বকাপ দলটাও খুব ভালো ছিল। সেটা আমরা মাঠেই প্রমাণ করে করেছি। সেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছি আমরা। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট মাঠে আমাদের ভালো পারফরমেন্সের অভিজ্ঞতা হয়েছে। ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছি আমরা। এবারো আমরা একই কন্ডিশনে সেখানে খেলব। সেই সুখস্মৃতি মনে রেখে দলের সিনিয়র খেলোয়াড় যদি ভালো খেলে, তাহলে এবারের বিশ্বকাপেও আমাদের ভালো কিছু করার সম্ভাবনা আছে।'