শিরোপার কাছাকাছি আবাহনী

বিশ্বকাপের আগে ফর্মে ফিরলেন সৌম্য

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সৌম্য সরকার
এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সৌম্য সরকারের ব্যাটে রানখরা ছিল ভীষণ। আগের ১১ ম্যাচে সবমিলিয়ে মোটে করেছিলেন ১৯৭ রান। বিশ্বকাপ দলে থাকায় তার এমন ছন্দহীন হয়ে যাওয়া উদ্বেগ বাড়াচ্ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের, আসছিল তেতো কথাও। এবার সব অস্বস্তি এক ঝাপটায় দূরে সরিয়ে দেয়ার মতো এক ইনিংস খেলেছেন সৌম্য। নিজের দরকার, দলের প্রয়োজনে মেলেছেন ডানা। তবে ম্যাচ শেষে জানালেন এতেও রয়ে গেছে আক্ষেপ। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সৌম্য কিন্তু ইমরুল কেন নয়? এ নিয়ে সমালোচনাও কম শুনতে হচ্ছে না নির্বাচকদের। কারণ নিউজিল্যান্ড সফরের পর প্রিমিয়ার লিগের মোটেও ভালো শুরু হয়নি। তবে সব সমালোচনার জবাব মনে হয় জমিয়ে রেখেছিলেন সৌম্য। অবশেষে রোববার তার জবাব দিলেন তিনি। তবে মুখে নয় ব্যাটে। ডিপিএলের সুপার লিগের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে লিজেন্ড অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে ৭৯ বলে ১০৬ রান করে আউট হন সৌম্য। লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে এটি তার পঞ্চম সেঞ্চুরি। তার এমন ক্ষেপে ওঠার দিন ৩৭৭ রান করে ১০২ রানে জিতেছে আবাহনী। এগিয়ে গিয়েছে শিরোপার দিকে। ২৪.২ ওভারে সৌম্য যখন আউট হন দলের রান তখন ১৬৯, যার ১০৬ রানই করেন তিনি। ব্যাটে বল আসছিল। ঝঙ্কার তুলতে পারছিলেন দারুণ সব শটে। কিন্তু অমন উইকেটে আরও বেশি সময় খেলতে না পারার আফসোস পোড়াচ্ছে তাকে, 'আজ হয়তো বা শুরুটা ভালো হয়েছে। চেষ্টা করেছি একটা বড় ইনিংস খেলার। তারপরও অনেক দ্রম্নত আউট হয়ে দিয়েছি, ২৪ ওভারের সময়। যদি থাকতে পারতাম তাহলে আরও বড় ইনিংস খেলতে পারতাম। বড় ইনিংস খেলার জন্যই ট্রেডমার্ক সৌম্যের। লম্বা সময় ধরে মেরে খেলতে পারেন বলে তার ওপর অনেক বাজি ধরেন কোচ-অধিনায়ক। নিউজিল্যান্ডে টেস্টে আগ্রাসী মেজাজে ১৪৯ রানের ইনিংসেও কদিন আগেই বুঝিয়েছিলেন তা। তবে দেশে ফিরে ফের ত্রিশের ঘরে ডুবে মরার পুরনো রোগ পেয়ে বসলে নিজের চিন্তা, সবার চিন্তা বাড়িয়েছিলেন তিনি। বললেন এই সময়ে নিজের মনের ভেতরেও বাড়ছিল প্রশ্নের স্রোত, 'চাপ বলতে, নিজের কাছে খারাপ লাগা ছিল। নিজে রান করতে পারছি না। কিছুদিন আগে জাতীয় দলে রান করে আসছি। নিজের কাছে খারাপ লাগছিল ওইখানে রান করে এসে এখানে রান করছি না। একটু চাপও কাজ করছিল, যে কী ভুল করছি। এই গুলো নিয়ে নিজের ভেতরে অনেক প্রশ্ন ছিল। স্কিলের পাশাপাশি কেন এমন হচ্ছে দেখছি।' 'প্রিমিয়ার লিগে যতগুলো ম্যাচ খেলেছি আমি ভালো করিনি। তারপরও টিম ম্যানেজমেন্ট খেলিয়েছে। আমারও একটা চিন্তা ছিল আজকে বড় ম্যাচ, বড় ম্যাচে যদি কিছু করতে পারি, তাহলে আমার নিজের কাছেও ভালো লাগবে, দলেরও অনেক উপকার হবে।' খেলার ধরনে কোনো বদল আনেননি, দলের চাহিদায় আনতেও চান না। কেবল ঘরে গিয়ে আউটগুলো নিয়ে আলাদা করে ভাবছেন সৌম্য, 'একদিনে তো আর কেনোর উত্তর পাওয়া যাবে না। যেগুলো আউট হচ্ছি সেগুলো নিয়ে বাসায় গিয়ে চিন্তা করা, আমি ভিন্ন কিছু করতে পারতাম কিনা। আগের যেই ভিডিওগুলো ছিল, সেগুলো দেখেছি। এই বলগুলোয় আমি ওইখানে কী খেলেছি, এখানে কী খেলছি।' মাথা ঠান্ডা করে ভুল নিয়ে সৌম্যের এমন একাগ্র ভাবনায় তার নিজের লাভ তো বটেই, তার ভুল কমে এলে বিশ্বকাপে বড় লাভ হতে পারে বাংলাদেশেরই। ডিপিএলের প্রথম পর্বে রূপগঞ্জে বিধ্বস্ত আবাহনী হেরেছে ৬ উইকেটে। সুপার লিগে লড়াইয়ে নেমে বদলা নিয়েছে ধানমন্ডির ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। প্রথম পর্বের আবাহনীর চেয়ে ৪ পয়েন্ট এগিয়ে শিরোপার সুবাস পেয়ে শিরোপা স্বপ্ন ধূসর হয়েছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের। জাতীয় দলের আট ক্রিকেটার খেলছেন আবাহনীর হয়ে। শিরোপার দাবিদারও তারা। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে মাশরাফিদের দল। আবাহনীর সমান ২৪ পয়েন্ট রূপগঞ্জেরও। তবে রানরেটে এগিয়ে থাকায় সমীকরণ এমন, মঙ্গলবার শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে হারাতে পারলেই টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হবে আকাশী-নীলরা। কেননা রানরেটে রূপগঞ্জের চেয়ে অনেক এগিয়ে তারকায় ঠাসা দলটি। শেষ রাউন্ডে নিজেদের জয়ের বিপরীতে আবাহনী হেরে গেলে কিংবা ড্র' করলেই কেবল শিরোপার হাসি হাসবে রূপগঞ্জ। সুপার লিগের চতুর্থ রাউন্ডে দুই জায়ান্টের লড়াইটি ছিল অলিখিত ফাইনাল। এই ফাইনালে আসরের সর্বোচ্চ স্কোরে (৩৭৭/৭) রূপগঞ্জকে রান পাহাড়ে চাপা দিয়েই জয়ের আবহ তৈরি করেছে আবাহনী। ব্যবধান তৈরি করেছেন আবাহনীর সৌম্য সরকার।