শিরোপা ধরে রাখল আবাহনী

সৌম্যের ১৫৩ বলে ২০৮, আর জহুরুল ইসলাম অমির ১২৮ বলে ১০০ রানে ১৭ বল হাতে রেখেই ৯ উইকেটে জিতেছে মোসাদ্দেক হোসেনের দল।

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতেছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। খেলা শেষে ট্রফি নিয়ে আবাহনীর খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা -বিসিবি
ক্রীড়া প্রতিবেদক তানবীর হায়দারের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ৩০০ ছাড়িয়ে আবাহনীকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি। চ্যাম্পিয়ন হতে জিততেই হবে- এমন চ্যালেঞ্জে নেমে সৌম্য সরকার ছারখার করে দিয়েছেন শেখ জামালের বোলারদের। লিস্ট-এ ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডের দিন প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী লিমিটেড। চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এবারের প্রিমিয়ার লিগ শুরু করেছিল আবাহনী। তবে প্রথমপর্বে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের দাপটে শিরোপার আশা ফিকে হয়ে আসে তাদের। তবে সুপার লিগের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নিজেদের কাছেই শ্রেষ্ঠত্ব রেখে দিল আবাহনী। বিকেএসপির মাঠে ৩১৭ রান করেছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। জবাবে সৌম্যের ১৫৩ বলে ২০৮, আর জহুরুল ইসলাম অমির ১২৮ বলে ১০০ রানে ১৭ বল হাতে রেখেই ৯ উইকেটে জিতেছে মোসাদ্দেক হোসেনের দল। সুপার লিগের শেষ রাউন্ড শেষে ১৬ খেলায় আবাহনীর পয়েন্ট ২৬ (+০.৮৬৬)। সমান খেলায় রূপগঞ্জের পয়েন্টও ২৬ (+০.৫১৭)। তবে নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় শিরোপা জয়ের উলস্নাসে মাতে আবাহনী। তাই প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে ৮৮ রানে জিতলেও হতাশায় ডুবেছে রূপগঞ্জ। শেখ জামালের এমন শোচনীয় হারের কথা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করার কথা নয় নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসের পর। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৮৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া শেখ জামাল ধানমন্ডি অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তানবীর হায়দারের ব্যাটে। ছয় নম্বরে নেমে লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূরণ করে তিনি অপরাজিত থাকেন ১৩২ রানে। ১১৫ বলের ইনিংসে ১০ বাউন্ডারির সঙ্গে মেরেছেন ৬ ছক্কা। লোয়ার অর্ডারে যোগ্য সঙ্গ পেয়েছেন তিনি ইলিয়াস সানি (৪৫) ও মেহরাব হোসেনের (৪৪) কাছ থেকে। এতে ৩১৭ রানের লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছিল শেখ জামাল। কিন্তু সৌম্যের রুদ্রমূর্তিতে জ্বলে উঠার দিনই খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে ওই রান। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা এই ওপেনারের দানবীয় ইনিংসের আগে বল হাতে আবাহনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বিশ্বকাপের উদ্দেশে আয়ারল্যান্ড যাত্রার আগে ১০ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে এই পেসারের শিকার ৪ উইকেট। এদিন ৩১৮ রান তাড়ায় শুরু থেকেই উত্তাল হয়ে উঠে সৌম্যের ব্যাট। ৭৮ বলে তিনি পৌঁছে যান তিন অংকে। তখনই মেরে দিয়েছেন ৮ ছক্কা। সেঞ্চুরির পর আরও খুনে হয়ে উঠে তার ব্যাট। তাইজুল ইসলাম, মিনহাজুল আবেদন আফ্রিদিদের পিটিয়ে মারতে থাকেন পরপর ছক্কা। তাইজুলকে এক ওভারে ৩ ছক্কা মেরে ১০৩ বলে স্পর্শ করেন ১৫০ রান। ততক্ষণে পেরিয়ে যান লিস্ট-এ ক্রিকেটে এক ইনিংসে বাংলাদেশিদের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও। পরে তার কাছে ধরা দেয় আরেক রেকর্ড। লিস্ট-এ ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে করে ফেলেন ডাবল সেঞ্চুরি। উদ্বোধনী জুটিতে জহুরুল ইসলামের সঙ্গে ৩১২ রানের জুটিতেও হয়েছে রেকর্ড। লিস্ট-এ ক্রিকেটে বাংলাদেশিদের যেকোনো উইকেট জুটিতেই ৩০০ রানের নজির নেই আর একটিও। সৌম্যের তান্ডবে ম্স্নান হলেও এদিন জহুরুলও খেলেছেন দারুণ। ১২৮ বলে ১০০ রান করে আউট হন তিনি। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে ঢাকা মেট্রোপলিস প্রথম বিভাগ ক্রিকেট নামে শুরু হয় ঢাকার শীর্ষ এই ক্লাব প্রতিযোগিতা। প্রথম মৌসুমের চ্যাম্পিয়নও ছিল আবাহনী। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুম থেকে প্রথম বিভাগ রূপান্তরিত হয় প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে। এবারের আসর ছিল ৪২তম। ২০০৩-০৪ ও ২০১২-১৩ মৌসুমে খেলা হয়নি। দুইবার যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী, একবার করে মোহামেডান ও বিমান। একমাত্র ক্লাব হিসেবে দুইবার হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবাহনী। এবার জিতে আশা জাগিয়েছে তৃতীয় হ্যাটট্রিকের। ঢাকার শীর্ষ ক্লাব টুর্নামেন্টে এ নিয়ে ২০ বার চ্যাম্পিয়ন হলো আবাহনী। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান শিরোপা জিতেছে ৯ বার।