বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হারের পর ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছিল টিম টাইগার্স। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে গ্রম্নপ পর্বে তিন ম্যাচ জিতে সুপার এইট নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। এরপরই বাংলাদেশের সমর্থকরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল সেমিফাইনাল খেলার। তবে সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার পর, ভারত পরীক্ষাতেও পাস করতে পারেনি টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের কাছে ৫০ রানে হেরে সেমিফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বাংলাদেশের।
সেমিফাইনালের লড়াইয়ে টিকে থাকতে ভারতের বিপক্ষে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের সামনে। অথচ সেই ভারতের বিপক্ষেই কিনা মাত্র দুই পেসার নিয়ে মাঠে বাংলাদেশ। ম্যাচজুড়েও একের পর এক ভুল করল বাংলাদেশ। বোলিংয়ে অকাতরে রান বিলিয়ে অ্যান্টিগার মাঠে সর্বোচ্চ রান হজমের রেকর্ড গড়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে জয়ের আকাঙ্ক্ষাই দেখাতে পারল না টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত বড় হারে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ। এই জয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারত। অন্যদিকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ।
টি২০ বিশ্বকাপের সুপার এইটে আফগানিস্তানকে হারালেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করত অস্ট্রেলিয়া। তাদের সঙ্গী হিসেবে ভারতও শেষ আটে উঠে যেত। তবে সেমিফাইনালের বড় মঞ্চে ওঠার হাইভোল্টেজ ম্যাচে অজিদের ২১ রানে হারিয়ে লড়াই জমিয়ে তুলেছে আফগানরা।
এদিকে টানা ২ হারের পরও সেমিফাইনালে যেতে পারে বাংলাদেশ। এজন্য ছোট দুটি সমীকরণ মেলাতে হবে টাইগারদের। শান্ত বাহিনীকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিতে হবে। রশিদ খানের দলকে হারানোর পাশাপাশি ভারতের জয়ের জন্যও প্রার্থনা করতে হবে। অজিদের হার এবং নেট রানরেটে এগিয়ে থাকলেই সেমির টিকিট পাবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।
সুপার এইটে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপর ভারত। ২ পয়েন্টে নেট রানরেটে এগিয়ে থেকে দুইয়ে অজিরা। শূন্য পয়েন্টে চারে বাংলাদেশ। আর এই মুহূর্তে পয়েন্ট টেবিলের তিনে (রানরেট -০.৬৫০) আছে রশিদ খানের দল।
বেঙ্গালুরুতে ১ রানের হার কিংবা অ্যাডিলেইডে ৫ রানে, টি২০ বিশ্বকাপে এই দুই দলের সবশেষ দুটি লড়াই ছিল তুমুল উত্তেজনাময়। রোমাঞ্চ আর বিতর্ক মিলিয়ে মসলা ছিল প্রচুর। আলোচিত সেই দ্বৈরথ এবার পুরোই পানসে। না দেখা গেল কোনো ক্রিকেটীয় উত্তেজনা, না হলো কোনো বিতর্ক। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেই পারল না বাংলাদেশ। অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া।
অ্যান্টিগার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ভারতের কাছে ৫০ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নামা ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রান সংগ্রহ করে। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। তানজিদ তামিম ও লিটন দাস ওপেনিং জুটিতে ৪.৩ ওভারে ৩৫ রান যোগ করার পর হার্দিক পান্ডিয়ার বলে ক্যাচ দেন লিটন দাস। ১০ বলে ১৩ রান করে বিদায় নেন অফফর্ম লিটন।
ওয়ান ডাউনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে তানজিদ তামিম ৩১ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু এই জুটিতে রানের গতি কমে আসে। ৩১ বলে ৪ চারে ২৯ রান করে কুলদীপ যাদবের প্রথম শিকারে পরিণত হন তানজিদ তামিম।
দলের খাতায় আর ১০ রান যোগ হতে না হতেই তাওহিদ হৃদয়কে এলবডবিস্নউয়ের ফাঁদে ফেলেন কুলদীপ। ৬ বলে ৪ রান করেন এই ইনফর্ম ব্যাটার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি।
কুলদীপকে চার মেরে বেশ আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু পরের বলেই ক্যাচ তুলে দিতেই সেই বেলুন চুপসে যায়। ৭ বলে ১১ রান করেন সাকিব। অর্ধশতকের পথে হাঁটছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু বুমরাহের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন আর্শদীপের হাতে। ৩২ বলে ১ চার ও ৩ ছয়ে ৪০ রান করেন বাংলাদেশের কান্ডারি। একাদশে ফেরা জাকের আলীও ১ রানের বেশি করতে পারেননি।
শেষদিকে ব্যাট হাতে কিছুটা বিনোদন দেন রিশাদ হোসেন। বাংলাদেশের এই লেগ স্পিনার ১ চার ও ৩ ছয়ে ১০ বলে ২৪ রান করেন। মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ ১৫ বলে ১ চারে ১৩ রান করেন।
ভারতের পক্ষে কুলদীপ সিং ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন। দারুণ বোলিং করেছেন জাসপ্রীত বুমরাহও। ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন তিনি। ২ উইকেট নিয়েছেন আর্শদীপ সিংও। হার্দিক পান্ডিয়া পেয়েছেন ১টি উইকেট।
এর আগে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষে হার্দিক পান্ডিয়া মাত্র ২৭ বলে ৪ চার ও ৩ ছয়ে ৫০ রান করেন। এ ছাড়া বিরাট কোহলি ২৮ বলে ৩৭, রিশভ পান্ত ২৪ বলে ৩৬, শিভম দুবে ২৪ বলে ৩৪ এবং রোহিত শর্মা ১১ বলে ২৩ রান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে তানজিম সাকিব ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন। রিশাদ হোসেন ৩ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন। ৩ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ১ উইকেট শিকার করে প্রথম বোলার হিসেবে টি২০ বিশ্বকাপে ৫০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন সাকিব।
বোলিং ব্যর্থতার পর ব্যাটারদের বাজে ব্যাটিংয়ে সুপার এইটে টানা দ্বিতীয় হারের মুখ দেখল বাংলাদেশ। এই হারে সেমিফাইনালের দুয়ার প্রায় রুদ্ধই হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত
২০ ওভারে ১৯৬/৫
(রোহিত ২৩, কোহলি ৩৭, পান্ত ৩৬, সুরিয়াকুমার ৬, দুবে ৩৪, পান্ডিয়া ৫০*, আকসার ৩*; মেহেদি ০/২৮, সাকিব ১/৩৭, তানজিম ২/৩২, মুস্তাফিজ ০/৪৮, রিশাদ ২/৪৩, মাহমুদউলস্নাহ ০/৮)
বাংলাদেশ
২০ ওভারে ১৪৬/৮
(লিটন ১৩, তানজিদ ২৯, শান্ত ৪০, হৃদয় ৪, সাকিব ১১, মাহমুদউলস্নাহ ১৩, জাকের ১, রিশাদ ২৪, মেহেদি ৫*, তানজিম ১*; আর্শদিপ ২/৩০, বুমরাহ ২/১৩, আকসার ০/২৬, পান্ডিয়া ০/৩২, জাদেজা ০/২৪, কুলদিপ ৩/১৯)
ফল
ভারত ৫০ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা
হার্দিক পান্ডিয়া
