স্পেনের সামনে শেষ চারের বাধা ফ্রান্স

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
বিশ্ব ফুটবলে নতুন প্রজন্মের সবচেয়ে সফল দুই দল ফ্রান্স ও স্পেন আজ মঙ্গলবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে একে অপরের মোকাবিলা করবে। সেমিফাইনালে খেলার আগে দুই দলের দুই বিভাগ নিয়ে নিজেরা গর্ব করতেই পারে। আক্রমণভাগে যেখানে স্পেনকে এবারের আসরে অন্য কোনো দলই টপকে যেতে পারেনি সেখানে ওপেন পেস্নতে এখনো কোনো গোল হজম না করা ফ্রান্সের জেদি রক্ষণভাগ সবাইকে বিস্মিত করেছে। তরুণ দুই উইঙ্গার লামিন ইয়ামাল ও নিকো উইলিয়ামসের ওপর ভর করে স্পেন জার্মানিতে শেষ চারের টিকিট পেয়েছে। বিপরীতে টুর্নামেন্ট ফেবারিট ফ্রান্স শুধুমাত্র কিলিয়ান এমবাপের ওপর আক্রমণে নির্ভর করে শক্তিশালী রক্ষণভাগ নিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। গত পাঁচ ম্যাচে ফ্রান্স শুধুমাত্র এক গোল হজম করেছে, তাও আবার পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে। স্বাগতিক জার্মানির সঙ্গে সমান ১১ গোল করে এখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে স্পেন। জার্মানিকে কোয়ার্টার ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তের গোলে পরাজিত করে সেমিফাইনালে খেলতে এসেছে স্প্যানিশরা। এ পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই জয়ী হয়েছে লা রোজারা। ইউরোর ইতিহাসে পেনাল্টি ছাড়া কোনো দলই পাঁচ-এর বেশি ম্যাচে জিততে পারেনি। অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতার নেতৃত্বে স্পেনের দুই তরুণ উইঙ্গার ২১ বছর বয়সি উইলিয়ামস ও ১৬ বছর বয়সি ইয়ামালের গতি ও বৈচিত্র্যে প্রতিপক্ষ দলগুলো বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই উইলিয়ামস এক গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করেছেন। ইয়ামাল এখনো পর্যন্ত জালের ঠিকানা খুঁজে পাননি। এই টুর্নামেন্টে গোল করতে পারলে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সি খেলোয়াড় হিসেবে গোলের রেকর্ড গড়বেন বার্সেলোনার এই তরুণ তুর্কি। স্কোর বোর্ডে নাম না লেখালেও টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ তিনটি অ্যাসিস্ট ঠিকই করে ফেলেছেন ইয়ামাল। কোচ লুইস ডি লা ফুয়েন্তের ইতিবাচক মনোভাবই স্পেনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। প্রতিটি ম্যাচেই তিনি তার দলের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। স্বাগতিক জার্মানিকে হারানোর পর ডি লা ফুয়েন্তে বলেছিলেন, 'এই দলটিই আমার বাজির ঘোড়া এবং আমাদের দেশের রোল মডেল। আমরা অনেক দূর যাব। এই দলের সবার মধ্যে হৃদয় দিয়ে খেলার অভ্যাস আছে।' স্পেনের জুনিয়র পর্যায়ে এই দলের বেশ কিছু খেলোয়াড়কে আগেও কোচিং করিয়েছেন ডি লা ফুয়েন্তে। যে কারণে আগে থেকেই তাদের সঙ্গে পরিচিতি ছিল। যদিও কোয়ার্টার ফাইনালে মূল দলে খেলা তিন খেলোয়াড়কে সেমিফাইনালে পাচ্ছে না স্পেন। ডিফেন্ডার ডানি কারভাহাল ও রবিন লি নরমান্ড হলুদ কার্ডের কারণে নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন। অন্যদিকে পেড্রি হাঁটুর ইনজুরির কারণে ইউরো থেকে ছিটকে গেছেন। কাতার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৬ গোল করা ফ্রান্স ইউরোর সেমিফাইনালে উঠেছে শুধুমাত্র শক্তিশালী রক্ষণভাগকে পুঁজি করে। জার্মানির মাটিতে ফরাসি স্ট্রাইকাররা মোটেই সুবিধা করতে পারেনি। আগের ম্যাচগুলোতে মাত্র তিন গোল করে সেমিফাইনালের টিকিট পেয়েছে ফ্রান্স। এখনো কোনো ফরাসি খেলোয়াড় ওপেন পেস্নতে গোল করতে পারেনি। ফ্রান্সের থেকে কম গোল করার তালিকায় এবারের আসরে মাত্র সাতটি দল রয়েছে। দুটি ম্যাচে তারা গোলশূন্য ড্র করেছে। দুটি ম্যাচে জিতেছে ১-০ ব্যবধানে, যে গোলগুলো আবার এসেছে প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী গোলের কল্যাণে। দিদিয়ের দেশ্যমের দল হজম করেছে মাত্র এক গোল। পোল্যান্ডের বিপক্ষে রবার্ট লিওয়ানদোস্কি পেনাল্টি স্পট থেকে এক গোল করেছিলেন। বাকি চার ম্যাচে ফ্রান্স কোনো গোল হজম করেনি। কাতার বিশ্বকাপে আট গোল করা সুপারস্টার এমবাপে এখনো পর্যন্ত জার্মানিতে একটিমাত্র গোল করেছেন পেনাল্টি থেকে। ইউরো ক্যারিয়ারে এমবাপের এটাই প্রথম গোল। গ্রম্নপ পর্বের প্রথম ম্যাচে নাক ভেঙে যাওয়ায় নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্রয়ের দ্বিতীয় ম্যাচটিতে খেলতে পারেননি এমবাপে। যদিও অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে ইনজুরিতে পড়া ওই ম্যাচটিতে একমাত্র গোলটি তার কারণেই হয়েছিল। ফরাসি কোচ দেশ্যম বলেছেন, 'অবশ্যই আক্রমণভাগ যদি শক্তিশালী হয়ে নিজেদের প্রমাণ করে তবে ম্যাচ জয় অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। কিন্তু ইউরো কিংবা বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টগুলোতে স্টাইকারদের ব্যর্থতায় খুব বেশিদূর এগুনো যায় না।' সাম্প্র্রতিক সময়ে বড় আসরগুলোতে ফ্রান্সের পারফরমেন্স ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রায় এক দশক আগে ২০১৪ বিশ্বকাপের পর ফ্রান্স শুধুমাত্র একবার বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলতে পারেনি। ২০২০ ইউরোতে শেষ ষোলোতে তারা সুইজারল্যান্ডের কাছে পেনাল্টিতে পরাজিত হয়ে বিদায় নিয়েছিল। ২০১৬ ইউরোতে রানার্সআপ ছাড়াও ২০১৮ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ও ২০২২ বিশ্বকাপে রানার্সআপ শিরোপা জয় করে ফ্রান্স। পর্তুগালের বিরুদ্ধে পেনাল্টিতে কোয়ার্টার ফাইনাল জয়ের পর দেশ্যম বলেছিলেন, ফ্রান্স মোটেই মনে করছে না এবারও তারা শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান ধরে রাখবে। প্রতিটি বড় টুর্নামেন্টেই ফাইনাল পর্যন্ত খেলার লক্ষ্য নিয়েই সবাই মাঠে নামে, ফ্রান্সও ব্যতিক্রম নয়।