ছন্দে ফেরায় উচ্ছ্বসিত মুস্তাফিজ

প্রকাশ | ১৬ মে ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
মুস্তাফিজুর রহমান
বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলে যাদের নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা ছিল তাদের মাঝে অন্যতম পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। চোটের ঝুঁকি তো রয়েছেই, তার ওপর ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ছিলেন পুরোপুরি খোলসবন্দি। তবে গত সোমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে আগের সেই কাটার মাস্টারকেই দেখা গেল ধারালো রূপে। বিশ্বকাপের আগে এই ছন্দে ফেরাটা কতটা স্বস্তির তা বোঝা গেল মুস্তাফিজের উচ্ছ্বসিত অভিব্যক্তি থেকে। ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে অমিতব্যয়ী বোলিং, ৯৩ রান খরচায় ২ উইকেট। নিউজিল্যান্ড সফরের সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে না ভুলতে আর একটি বাজে বোলিং ইনিংস। ডাবলিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮৪ রানে ২ উইকেট ! উপর্যুপরি ২ ইনিংসে এমন বাজে বোলিংয়ে প্রশ্নবিদ্ধ মুস্তাফিজের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ারই কথা। কিন্তু কাটার মাস্টার উপর রেখেছেন পূর্ণ আস্থা ছিল হেড কোচ স্টিভ রোডসের। বাজে সময় কাটিয়ে উঠবে প্রিয় শিষ্য, এমনটাই জানিয়েছিলেন সংবাদ মাধ্যমকে। শেষ পর্যন্ত কোচের সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন কাটার মাস্টার। গত বছর এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আবুধাবিতে ম্যাচ উইনিং বোলিংয়ের (৪/৪৩) ৪ উইকেটের ইনিংসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে মুস্তাফিজকে ১১ ইনিংস। সোমবার ডাবলিনে ছন্দ ফিরে ফেয়েছেন এই কাটার মাস্টার ৪৩ রানের বিনিময়ে ৪টি উইকেট নিয়ে। সোমরবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে উড়িয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। এমন জয়ের মঞ্চটা তৈরি হয়েছে মোস্তাফিজের ধারালো বোলিংয়েই। ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরাও তিনি। অবশ্য এই ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা গত দুই বছরে এবারই প্রথম! তাই পরের ম্যাচসেরা পুরস্কারটা যেন আর দেরি করে না আসে সেই অপেক্ষা এখন মুস্তাফিজের। ম্যাচের পর সেই কথাই বললেন তিনি, 'আমি আশা করবো পরের ম্যাচসেরার পুরস্কারটা পেতে যেন খুব বেশি দেরি না হয়।' প্রথম স্পেলেই (৫-১-১৭-২) জানিয়ে দিয়েছিলেন দিনটা তার। নিজের দ্বিতীয় ওভারে চেজ ফ্লিক করতে যেয়ে দিয়ে এসেছেন মিড উইকেটে ক্যাচ (১৯)। ৪র্থ ওভারে তার অ্যাঙ্গেল ডেলিভারিতে ক্রস খেলতে যেয়ে এলবিডাডাবস্নু কার্টার (৩)। স্স্নগে মাশরাফির বোলিং দেখে উদ্বুদ্ধ মুস্তাফিজ ৪৯তম ওভারের ২য় বলে নার্সকে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন, ৫ম বলে রেইফার হয়েছেন এলবিডবস্নুউ। তার বোলিংয়েই ডাবলিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৮/৯ এ আটকে ফেলেছে বাংলাদেশ দল। দুই ম্যাচ পর ছন্দ ফিরে পাওয়ায় খুব আত্মবিশ্বাসী দেখা গেল তাকে। বিশেষ করে ইদানীং স্স্নগ ওভারে অভ্যস্ত হওয়ার বিষয়টিতেও মানিয়ে নিয়েছেন তিনি, 'আমি এখন আনন্দিত যে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হতে পেরেছি। প্রথম উইকেট নেয়ার পর আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পাই। দীর্ঘদিন ডেথ ওভারে বোলিংয়ের পর এখন স্স্নগ ওভারগুলোতে আমি আরও বেশি অভ্যস্ত।' বিশ্বকাপের আগে তাই এমন ধারায় ফিরতে পেরে তা যে টনিক হিসেবে কাজ করবে সেটা মানেছেন মুস্তাফিজ। তাই আসন্ন টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকতার ভিত্তিতে পারফর্ম করতে মুখিয়ে তিনি, 'ভালো করলে আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে যায়। শুরুর খেলাগুলোতে ভালো করতে পারিনি সেটা ঠিক আছে। কিন্তু সামনেই বিশ্বকাপ, সেখানে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে মুখিয়ে আছি।' ২০১৬ সালে আইপিএল সেরা উদীয়মানের পুরস্কার জিতেছেন ঠিকই, তবে ওই আসরে ২ কোটি ১০ লাখ টাকায় সানরাইজার্স হায়দারাবাদে খেলার ধকলটা পরবর্তীতে ফেলেছে বিরূপ প্রভাব। সাসেক্সের জোরাজুরিতে সেখানে খেলতে যেয়ে কাঁধের অপারেশনের পর শুরুর মুস্তাফিজকে আর দেখেনি কেউ। ২০১৫ সালে ৯ ম্যচে ২৬ উইকেটের মধ্যে ইনিংসে ৩ বার ৫টি করে উইকেট। পরের ৪ বছরে সেখানে ৩৫ ম্যাচের একটিতেও নেই ৫ উইকেটের ইনিংস !