ওপেনিংয়ে মধুর সমস্যায় টাইগাররা

আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে এখন পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচেই সফল ওপেনাররা। দুটি ম্যাচে দুর্দান্ত ছিলেন সৌম্য সরকার। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ খেলেছেন লিটন দাস। বিশ্বকাপের আগে এটি বাংলাদেশের জন্য উপভোগ্য এক 'সমস্যা'ই।

প্রকাশ | ১৭ মে ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে এখন পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচেই সফল ওপেনাররা। দুটি ম্যাচে দুর্দান্ত ছিলেন সৌম্য সরকার। বুধবার দারুণ খেলেছেন লিটন দাস। বিশ্বকাপের আগে এটি বাংলাদেশের জন্য উপভোগ্য এক সমস্যাই -ওয়েবসাইট
সপ্তাহখানেক পরেই শুরু হবে বিশ্বকাপের দামামা। ওয়ার্মআপ ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই বিশ্বকাপের লড়াই। ৩০মে থেকে মূল পর্বের লড়াই। এর আগেই বাংলাদেশ পড়েছে এক মধুর সমস্যায়। শুক্রবারের ফাইনাল এবং বিশ্বকাপ, ওপেনিংয়ে কে নামবেন- এমন মধুর সমস্যা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। ত্রিদেশীয় সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যানস করেছেন মাশরাফি-সাকিবরা। এক কথায় বাংলাদেশ দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। টাইগাররা দুইবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও একবার আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে এই সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত করে। ব্যাটে বলে সবাই দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেছেন। প্রথমে বলতেই হবে ওপেনিংয়ের কথা। একপ্রান্তে তামিমের জায়গা পাকাপোক্ত। অন্য প্রান্ত নিয়ে দিশেহারা ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজের কথা বিবেচনায় এনে স্বস্তিতে থাকতে পারেন নির্বাচকরা। এখন তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে কে নামবেন? লিটন নাকি সৌম্য? এই দুজনের পারফরমেন্স টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। অন্যদিকে আরেকটি সমস্যা অপেক্ষা করছে টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে এখন পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচেই সফল ওপেনাররা। দুটি ম্যাচে দুর্দান্ত ছিলেন সৌম্য সরকার। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ খেলেছেন লিটন দাস। বিশ্বকাপের আগে এটি বাংলাদেশের জন্য উপভোগ্য এক 'সমস্যা'ই। ত্রিদেশীয় সিরিজে এ পর্যন্ত সেঞ্চুরি হয়েছে ৬টি। এর মধ্যে শুধু দুই দলের ওপেনাররা মিলে করেছেন ৫ সেঞ্চুরি। দুই দল? ঠিক ধরেছেন। বাংলাদেশের কোনো ওপেনার সেঞ্চুরি পাননি। দুর্দান্ত শুরু হচ্ছে, উইকেটেও বেশ সময় কাটাচ্ছেন তারা, কিন্তু 'ফিনিশ' মানে তিন অঙ্কের দেখা পাওয়া হচ্ছে না। ষাট থেকে আশি এর আশপাশে গিয়ে গড়বড় হচ্ছে ওপেনারদের। তবে সেঞ্চুরি না পাওয়ার এ হতাশার মধ্যেও বেশ মধুর এক সমস্যা তৈরি হয়েছে। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে কিংবা বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের ওপেনিং সতীর্থ হবেন কে? মাথায় শুধু দুটো নাম চক্কর মারাই স্বাভাবিক। সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। ত্রিদেশীয় সিরিজে দুজনেই রয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে। বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে গুঞ্জন আছে, ওপেনিংয়ে ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয় বেশি পছন্দ কোচ স্টিভ রোডসের। এ হিসেবে তামিমের সঙ্গে লিটনকেই বেশি দেখার কথা। কিন্তু এ বছর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচেই লিটন ব্যর্থ হওয়ার পর সৌম্যর দ্বারস্থ হতে হয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। ত্রিদেশীয় সিরিজে ওপেনিংয়ে ফেরার সঙ্গে রানেও ফিরেছেন বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে করলেন ৭৩, পরের ম্যাচে ৫৪। একটি ইনিংসকেও সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করতে না পারার আক্ষেপটা থাকবে। ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচে লিটনকেও সুযোগ করে দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। সামনে যেহেতু ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ও বিশ্বকাপ ম্যাচে ফিটনেস থাকা জরুরি। টিম ম্যানেজমেন্ট লিটনকে এ ম্যাচ ফিটনেস সরবরাহ করতে গিয়েই মধুর সমস্যাটির জন্ম দিয়েছে। এদিন বাংলাদেশের জয়ের সর্বোচ্চ স্কোরার লিটন খেলেছেন ৬৭ বলে ৭৬ রানের ইনিংস। অর্থাৎ লিটনও বুঝিয়ে দিলেন, দলের ওপেনিংয়ে এক প্রান্তে তিনি সৌম্যর যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী। আরেক প্রান্ত নিয়ে আপাতত কথা হবে না। ওটা তামিমের জায়গা। সৌম্য-তামিমের স্বাস্থ্যকর এ লড়াই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে চোখ জুড়ানো দৃশ্য। বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি তো একসময় নিয়মিতই দুঃস্বপ্ন উপহার দিত ক্রিকেটপ্রেমীদের। এখন সেটির পরিবর্তন হয়েছে অনেকটাই। তবে যে খুব পাল্টে গেছে, সে কথাও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজেই ভুগেছে ওপেনিং জুটি। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজে দেখা যাচ্ছে অন্য দৃশ্য। সৌম্য-তামিম প্রথম ম্যাচে গড়লেন ১৪৪ রানের জুটি। ওয়ানডেতে প্রতিপক্ষের মাটিতে এটা ছিল বাংলাদেশের ওপেনিং জুটির সর্বোচ্চ সংগ্রহ। পরের ম্যাচেও পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়েছিলেন দুজন। আর কাল সৌম্যর জায়গায় লিটন এসেও ধরে রাখলেন ধারাবাহিকতা। তামিম ও লিটন মিলে গড়েছেন ১১৭ রানের জুটি। ওয়ানডেতে সবশেষ কোন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি এতটা ধারাবাহিক ছিল, সেটি গবেষণার বিষয়। খুশির বিষয় হলো, বিশ্বকাপের আগে ওপেনিং জুটির এমন দুর্দান্ত ফর্ম দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াবেই। আর দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ওপেনিংয়ে তামিমের নিয়মিত সঙ্গী বেছে নেয়ায় কোনো ভুল না করা। সাধারণ যুক্তি হলো, রোডসের ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয় না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অন্তত বিশ্বকাপে তো বটেই। সেখানে তামিমের সঙ্গে সৌম্যকে ওপেন করতে দেখার সম্ভাবনা বেশি। সবশেষ বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে সৌম্যর। লিটন ঠিক এ জায়গায় পিছিয়ে। তাহলে হয়তো তৃতীয় ওপেনার হিসেবে; কে জানে! সম্প্রতি বাংলাদেশ দলে এমন একটা রীতি শুরু হয়েছে যেটা ডানহাতি ও বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের কম্বিনেশন। যে কারণে তামিমের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ওপেন করেন লিটন দাস। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, প্রতিপক্ষের বোলিং আর ফিল্ডিং পজিশন বারবার এলোমেলো করে দেয়া। কিন্তু এই ম্যাচে তামিম-সৌম্য মিলে যেভাবে ব্যাটিং করেছেন তাতে তামিমের কাছে মনে হয়নি ডান-বাঁহাতির কম্বিনেশন খুব একটা জরুরি। তামিম ইকবাল বলেন, 'আমি মনে করি না এটা কোনো ব্যাপার। আধুনিক ক্রিকেটে এটা যদি এতই বড় ব্যাপার হতো তাহলে সর্বকালের অন্যতম সেরা জুটি হতো না দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হেইডেন-ল্যাঙ্গারের। অনেক দলের কৌশল থাকতে পারে, আমার কাছে এটা কোনো ব্যাপার না।'