সেই জয় এই জয়

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
২১ বছরের ব্যবধান অথচ ঘটনাপ্রবাহে কী আশ্চর্য মিল! প্রথম ওয়ানডে জয়ের তারিখেই বাংলাদেশ পেল প্রথম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ। দুটি ক্ষেত্রেই অনেক প্রতীক্ষার পর এসেছে সাফল্য এবং যার মঞ্চায়ন বিদেশের মাটিতে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সাফল্য পেলে তার আনন্দ জাগরুক থাকে বহুকাল। প্রসঙ্গ উঠলেই রক্তকনায় ছড়িয়ে পড়ে সেটির অনুরণন। ভারতের হায়দরাবাদে কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানড জয়ের সুখস্মৃতি যেমন ভেসে এল মোহাম্মদ রফিকের মনে। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক বলেন, 'আমাদের কোচ গর্ডন গ্রিনিজ একটা কথা বলেছিলেন, জেতা নিয়ে চিন্তা করো, তাহলে তোমরা জিততে পারবে। জেতার কী স্বাদ সেটা যদি একটা ম্যাচে নিতে পার, তাহলে বুঝতে পারবা কোন পর্যায়ে যাচ্ছ তোমরা। গর্ডনের জন্যই কিন্তু ওই জয়টা। সে আমাকে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামিয়ে বলেছিল, জেতাতে পারলে রফিকই পারবে।' রফিক সেদিন সত্যিই পেরেছিলেন। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে কোকাকোলা ট্রায়াঙ্গুলার সিরিজে বিদেশি দুই দলের ম্যাচে তেমন দর্শক ছিল না। তবে বাংলাদেশের জয়ের খবরে ঠিকই উচ্ছ্বাস-আনন্দে রঙিন হয়ে উঠৈছিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকা। ১৭ মে সেই প্রথম ওয়ানডে জয়ের নায়ক ছিলেন মোহাম্মদ রফিক। সেই ১৭ মে তারিখেই ডাবলিনে মাশরাফী বাহিনীর ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ে। ছয়বার হোঁচট খাওয়ার পর হাতে উঠল প্রথম ট্রফি। শুক্রবারের জয় নিয়ে রফিক বলেন, 'জয় তো জয়ই। জয়ের আনন্দ সবসময়ই একই। মাশরাফিদের যেমন লাগছে আমাদেরও তেমনি লেগেছিল। আসলে তখন (প্রথম ওয়ানডে জিতে) বুঝতে পারলাম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের কত আনন্দ। নতুন টিম হিসেবে প্রথম ওয়ানডে জয়টা ছিল অনেক বড় পাওয়া। কারণ আমরা যে দলের সঙ্গেই খেলতাম আমাদের টিম মিটিংয়ে আলোচনা হতো ১৫০ করলেই মনে করবা জিতে গেছ। কখনো জেতার চিন্তা করতাম না। টার্গেট দিয়ে দিতেন কোচ, ১৩০-১৪০ করলেই বুঝবা তোমরা ভালো ক্রিকেট খেলছ। একটা একটা করে জিতে সাহস বাড়ল। এখন তো বাংলাদেশ খেলেই জেতার জন্য। টানা চারটি ওয়ানডে জয়ে অপরাজিত থেকে টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ! জয়টা সবসময় আনন্দের উপলক্ষ হলেও, ক্রিকেটীয় মানদন্ড নির্ধারিত হয় জয়ের ধরণে। আর সেখানেই তৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছেন সাবেক টাইগার ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম। তিনি বলেন, 'আয়ারল্যান্ডে যাবার আগে সবার একটা চিন্তা ছিল হাই-স্কোরিং পিচে কেমন করে বাংলাদেশ সেটা নিয়ে। কিন্তু এই জয়গুলো সে চিন্তা দূর করে দিয়েছে। ২৯০, ৩০০ রান সহজেই চেজ করতে পেরেছে দল। এতে বিশ্বকাপের আগে যে আত্মবিশ্বাস পেল খেলোয়াড়রা, সেটা অনেক বড় সম্বল হবে ইংল্যান্ডে।' বাংলাদেশ দলের হয়ে ৪০ টেস্ট ও ৫৯ ওয়ানডে খেলা ওপেনার জাবেদ ওমর বেলিমের মতে, 'টপ অর্ডার রান করলে, নীচের ব্যাটসম্যানরাও রান পান। ক্রিকেটের সৌন্দর্যটাই এখানে। তাই আয়ারল্যান্ডে লোয়ার মিডল অর্ডার সুযোগ না পেলেও, চিন্তার কিছু নেই। সাব্বিরসহ যারা আছেন তারা পরীক্ষিত।' আয়ারল্যান্ডের মৃত উইকেট বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টাইগার বোলারদের জন্য। সেখানে মিশ্র অবস্থাকেই একম্যাচে ভালো করেছেন তো পরের ম্যাচে খারাপ। কোনো ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে পারেননি মুস্তাফিজ-সাইফউদ্দিনরা। এখানেও বোলারদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন জাভেদ ওমর বেলিম। তিনি বলেন, 'সেখানকার উইকেটে যেকোনো দলকে অলআউট করা কঠিন। সেখানে আমাদের বোলিং শক্তি অনুযায়ী আরও কঠিন হয়ে যায় ব্যাপারটি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনশ'র নীচে আটকে ফেলাটাও কম না। এখানে বোলারদের কৃতিত্ব স্বীকার করতেই হবে।' দুর্ভাগ্যের গেরো খুলে গেছে। টুর্নামেন্ট টাইটেল হয়তো আগামীতে বাংলাদেশ আরও জিতবে। কিন্তু প্রথমের স্বাদ থেকে যাবে তরতাজাই। অনুজদের সাফল্য দেখে হয়তো মাশরাফী বাহিনীর কাছেও মানুষ শুনতে চাইবে প্রথমের গল্প। প্রথম ট্রফি জেতার গল্প পুরনো হলে হয়তো এভাবেই বলবেন মাশরাফি। পরম্পরায় সাফল্যের গল্প হতে থাক সমৃদ্ধ। বিসিবির শোকেস ভরে উঠুক বৈশ্বিক আসরের ট্রফিতে।