বিশ্বকাপ মিশনে ইংল্যান্ডে সাকিব-মুশফিকরা

বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয় বাংলাদেশ দলকে কতটা উজ্জীবিত করেছে, তা ক্রিকেটারদের চেহারাতেই ফুর্টে হয়ে উঠছে। লন্ডন থেকে তিন ঘণ্টার বাস জার্নি শেষে টিম টাইগার্স লেস্টার পৌঁছেছে বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত আড়াইটায়। সেখানে বিসিবির খরচে টাইগাররা করবে চারদিনের অনুশীলন ক্যাম্প

প্রকাশ | ২০ মে ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
মিশন সফল! বিশ্বকাপের আগে ধরা দিয়েছে অধরা ট্রফি! ১০ বছরের প্রতীক্ষা, ৬ ফাইনালে ব্যর্থতার পর অবশেষে স্বস্তির পরশ! শুক্রবার আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় ক্রিকেট সিরিজের ফাইনালে এসেছে স্বপ্নের জয়। সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেনদের সেই কীর্তি সঙ্গী করেই এবার শুরু হবে বিশ্বকাপ মিশন। বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয় বাংলাদেশ দলকে কতটা উজ্জীবিত করেছে, তা ক্রিকেটারদের চেহারাতেই মূর্ত হয়ে উঠছে। ফেসবুকে একের পর এক ছবি পোস্ট করে যাচ্ছেন তারা। চওড়া হাসির সেলফি দিয়ে মুস্তাফিজুর রহমান শনিবার রাতে জানান দেন, ডাবলিন ছেড়েছেন। মধ্যরাতে সৌম্য সরকার আরেকটি ছবি পোস্ট করে ভক্তদের জানান, বাংলাদেশ দল পৌঁছে গেছে বিশ্বকাপের দেশ ইংল্যান্ডে। তাদের হাস্যোজ্জ্বল ছবির শিরোনামেও ফুটে ওঠে বিশ্বকাপ অভিযান নিয়ে মনের ভেতরের রোমাঞ্চ। লন্ডন থেকে তিন ঘণ্টার বাস জার্নি শেষে টিম টাইগার্স লেস্টার পৌঁছেছে বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত আড়াইটায়। সেখানে বিসিবির খরচে টাইগাররা করবে চারদিনের অনুশীলন ক্যাম্প। আগামী বৃহস্পতিবার লেস্টার ছেড়ে তাদের ঠিকানা হবে কার্ডিফ। ওইদিন থেকে বাংলাদেশ থাকবে আইসিসির প্রটোকলে, পুরোদল নেবে বিশ্বকাপ আয়োজক দেশের আতিথেয়তা। সাকিব-সৌম্য-সৈকতরা লন্ডন পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে রাত সাড়ে ১১টায় ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় ফেরেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বহুজাতিক আসর খেলে পাওয়া প্রথম ট্রফিটি ছিল প্যাকেটবন্দি। বাংলাদেশ অধিনায়ক একাই আসেননি, এসেছেন টিম ম্যানেজার মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক ট্রফি নিয়ে আসছে ঢাকায়- এই খবর চাউর হওয়ায় বিমানবন্দরে শত শত ভক্ত হয়েছেন জড়ো। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করেছেন ট্রফিজয়ী অধিনায়ককে। বিশ্বকাপের ১১ দিন আগে বাংলাদেশের বীর যোদ্ধাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন বিসিবির পরিচালক মাহাবুব আনাম, জালাল ইউনুস, ইসমাইল হায়দার মলিস্নক ও প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী। ব্যক্তিগতভাবে ছুটিতে আসায় বিমানবন্দরে ক্রিকেট নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি অধিনায়ক। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মাশরাফি বললেন, 'পুরো টিম আসেনি। যারা খেলেছে, মাঠে কষ্ট করেছে, তারা ডিজার্ভ করে এখানে থাকার। আমি এসেছি ছুটিতে, তো এখানে আমার একা কথা বলাটা ঠিক হবে না। আপনারা কষ্ট করে এসেছেন এ জন্য ধন্যবাদ।' মাশরাফির সঙ্গে ডাবলিন ছেড়ে আসা তামিম ইকবাল থেকে যান দুবাই। তার পরিবার সেখানে আগে থেকেই ছিল অপেক্ষায়। দুবাই থেকে তামিম লন্ডন ফিরবেন বুধবার। বৃহস্পতিবার কার্ডিফে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন টাইগার ওপেনার। মাশরাফির সঙ্গে আরও ফিরেছেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না থাকা চার ক্রিকেটার ফরহাদ রেজা, তাসকিন আহমেদ, ইয়াসির আলি রাব্বি ও নাঈম হাসান। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে লেস্টারে টাইগারদের অনুশীলনে থাকছেন না বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশও। জরুরি পারিবারিক প্রয়োজনে তিনি ফিরছেন জ্যামাইকায়। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তিও দলের সঙ্গে যোগ দেবেন কার্ডিফে। বিশ্বকাপ দলে থাকারাও এখন থাকবেন ঐচ্ছিক ছুটির আমেজে। লম্বা সূচি, এ কারণেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চাপ দিচ্ছে না ক্রিকেটারদের। বিশ্বকাপের আগে চাঙ্গা হওয়া চাই। সাকিব-তামিমদের মতো মাশরাফি বিশ্বকাপের সময় পরিবার সঙ্গে রাখছেন না। তার ইচ্ছা, বিশ্বকাপ শেষেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কয়েকটা দিন ইউরোপ ঘুরে বেড়ানোর। লিগ পদ্ধতিতে এবার বিশ্বকাপ হওয়ায় টুর্নামেন্টের দৈর্ঘ্য বেশ লম্বা। প্রায় দুই মাসের। গৃহকাতরতা থেকে রেহাই পেতে আসল মিশন শুরুর আগে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোই ভালো করার টনিক- এমনটাই মনে করেন মাশরাফি। বিশ্বকাপ শুরুর আগে মাশরাফি ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন তিনদিন। বিশ্বকাপ মিশনের জন্য তাকে লন্ডন যেতে হবে ২৩ মে। ওইদিন বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া দশদলের অধিনায়কদের নিয়ে রয়েছে আইসিসির একটি অনুষ্ঠান। সেখান থেকেই প্রস্তুতি ম্যাচের ভেনু্য কার্ডিফে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন অধিনায়ক। আগামী ২৬ ও ২৮ মে কার্ডিফে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ২৯ মে কার্ডিফ থেকে লন্ডনে ফিরবে দল। ২ জুন ওভালে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ওভালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। একে একে অংশগ্রহণকারী সব দেশের সঙ্গেই খেলবে মাশরাফির দল। গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা বাংলাদেশ এবার চায় আরেক ধাপ এগিয়ে সেমিফাইনালে লড়তে। যে লক্ষ্যের সঙ্গে একাত্ম কোচ, অধিনায়ক থেকে শুরু করে দলের সবাই। বড় মঞ্চে সফল হতে ত্রিদেশীয় সিরিজের অভাবনীয় সাফল্য হতে পারে বড় অনুপ্রেরণা।