শেষ বিকালেই ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে বাংলাদেশ

প্রকাশ | ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উইকেট পাওয়ার পর তাইজুল ইসলামকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন সতীর্থরা -ওয়েবসাইট
চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গে নিজেদের প্রথম ইনিংসে পৌনে ছয়শ রান করেই ইনিংস ঘোষণা করেছে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। যেই একই পিচে শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করে এত রান করেছে প্রোটিয়ারা, সেই পিচই যেন রীতিমতো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জন্য। দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকালেই ৯ ওভার ব্যাটিং করতেই হারিয়ে ফেলেছেন চার ব্যাটসম্যানকে। আলোকস্বল্পতায় দিনটা আগেভাগে শেষ না হলে হয়তো আরও বড় বিপদে পড়তে পারত স্বাগতিকরা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বুধবার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৪ উইকেটে ৩৮ রান করেছে বাংলাদেশ। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। অর্থাৎ এখনো ৫৩৭ রান পিছিয়ে আছে স্বাগতিকরা। ইনিংস হার এড়াতেও প্রয়োজন ৩৩৮ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার রানের পাহাড়ে নিচে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিদায় নেন সাদমান ইসলাম। যদিও ইনিংস শুরুর আগেই ৫ রান নিয়ে শুরু করে টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে পিচের মাঝ দিয়ে দৌড়ানোয় বেশ কয়েকবারই সেনুরান মুথুসামিকে সতর্ক করেছিলেন আম্পায়াররা। এরপর ১৪৪তম ওভারে আরও এক দফা হলে ৫ রান পেনাল্টি দেন তারা। আর ইনিংসের প্রথম ডেলিভারি নো-বল করে শুরু করেন কাগিসো রাবাদা। তাতে আবার পেয়ে যান বাই হিসেবে চার রান। তবে শুরুটা বাজে হলেও প্রথম ওভারেই সাফল্য পেয়ে যান রাবাদা। লেগ স্টাম্পের বাইরে রাখা পঞ্চম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন সাদমান। শুরুতে আউট দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬ বলে কোনো রান করতে পারেননি এই ওপেনার। ব্যর্থতার বৃত্ত আরও বড় করেছেন জাকির হাসান। রাবাদার বলে কট বিহাইন্ড হয়েছেন তিনি। অথচ বুঝতেই পারেননি বল ব্যাটে লেগেছে তার। উল্টো একটি রিভিউ নষ্ট করে ফিরে আসেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গেলে কানা ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক কাইল ভেরেইনার গস্নাভসে। ৮ বলে ২ রান করে করেছেন জাকির। এরপর হতাশ করেন মাহমুদুল হাসান জয়ও। ড্যান পিটারসেনের করা আগের বলেই দারুণ এক ড্রাইভ করে বাউন্ডারি আদায় করে নেন এই ওপেনার। পরের বলটিও ছিল প্রায় একই ধরনের। অফস্টাম্পের বাইরে ফুলার লেন্থ ডেলিভারিতে এবার ব্যাটে বলে ঠিকঠাক সংযোগ করতে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় স্স্নিপে দাঁড়ানো অধিনায়ক এইডেন মার্করামের হাতে। ২১ বলে ১০ রান করেন তিনি। ২৯ রানে তিন উইকেট হারিয়ে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে হাসান মাহমুদকে নামায় বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিরোধ গড়তে পারেননি তিনি। কেশভ মহারাজের বলে লাইনেই যেতে পারেননি হাসান। ফলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ৭ বলে ৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে। হাসানের বিদায়ের পর মাঠে নামেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ৬টি বলে খেলে একটি বাউন্ডারি মেরে ৪ রানে অপরাজিত আছেন এই ব্যাটার। তার সঙ্গে অপরাজিত আছেন মুমিনুল হক। ১০ বলে একটি বাউন্ডারিতে ৬ রান করেছেন তিনি। এ দুই ব্যাটারের দিকেই আজ তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে এদিন ভিয়ান মুল্ডারের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড়ই গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ষষ্ঠ উইকেটে সেনুরান মুথুসামির সঙ্গে গড়েন ১৫০ রানের জুটি। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে ১০৫ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মুল্ডার। ১৫০ বলে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় এই রান করেন তিনি। আর ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে অপরাজিত ৬৮ রান করে মুথুসামি। ৭৫ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। তবে আগের দিনের মতো দিনটা হতাশায় শুরু করলেও প্রথম সেশনের শেষ দিকে তিনটি উইকেট তুলে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর লাঞ্চের পরও দ্রম্নত পেয়েছিল আরও একটি উইকেট। কিন্তু টাইগারদের হতাশা বাড়ান ওই মুল্ডার ও মুথুসামি। সকালে স্কোরবোর্ডে দ্রম্নত আরও ৮৬ রান যোগ করার পর আউট হন ডেভিড বেডিংহ্যাম। তাতে ভাঙে ১১৬ রানের জুটি। ৭৮ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৯ রান বেডিংহ্যাম। তাইজুলকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডাবিস্নউর ফাঁদে পড়েন টনি ডি জর্জি। ২৬৯ বলে ১২টি চার ও ৪টি ছক্কায় থামেন ১৭৭ করে। এরপর কাইল ভেরেইনাকে আউট করে ফাইফার পূরণ করেন তাইজুল। লাঞ্চের পর রায়ান রিকেলটনকে (১২) উইকেটরকের ক্যাচে পরিণত করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান নাহিদ রানা। বাংলাদেশের পে ১৯৮ রানের খরচায় ৫টি উইকেট নেন তাইজুল। অপর উইকেটটি নাহিদের। সংক্ষিপ্ত স্কোর দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস : (আগের দিন ৩০৭/২) ১৪৪.২ ওভারে ৫৭৫/৬ ডিকে. (ডি জর্জি ১৭৭, স্টাবস ১০৬, বেডিংহ্যাম ৫৯, রিকেলটন ১২, ভেরেইনা ০, মুল্ডার ১০৩*, মুথুসামি ৭০*; হাসান ০/৮৩, নাহিদ ১/৮৩, তাইজুল ৫/১৯৬, মিরাজ ০/১৭১ মুমিনুল ০/১৫, জয় ০/১৪)। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস:৯ ওভারে ৩৮/৪ (সাদমান ০, জয় ১০, জাকির ২, মুমিনুল ৬*, হাসান ৩, শান্ত ৪; রাবাদা ২/৮, প্যাটারসন ১/১৫, মহারাজ ১/৪, মার্করাম ০/২)।