বাংলাদেশ এখন আর পঞ্চপান্ডবের দল নয়!

বিশ্বকাপের আগে লাল-সবুজে স্বস্তি

এই স্কোয়াড নিয়ে বাংলাদেশ এখন খুব শক্তিশালী দল। এটাই আমরা চেয়েছি, শক্তিতে গভীরতা। আরও গভীরতা চাই, তাহলে লোকে আর পঞ্চপান্ডব নিয়ে কথা বলবে না -স্টিভ রোডস

প্রকাশ | ২১ মে ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জাতীয় দলের পঞ্চপান্ডব খ্যাত পাঁচ তারকা ক্রিকেটারদের বাইরে নতুন পান্ডব বনে গেছেন সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও লিটন কুমার দাসরা। ব্যাট হাতে যারা নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। দেশ এখন ভরসা পাচ্ছে নতুন তারকাদের ওপর -ওয়েবসাইট
বড় কোনো আসরের আগেভাগে সিরিজ খেলার উদ্দেশ্যই থাকে শেষমুহূর্তের ভুলত্রম্নটিগুলো বুঝে সেটা শুধরে নেয়ার চেষ্টা করা। বাংলাদেশের জন্য তেমন এক মঞ্চ হয়ে এসেছে আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজ। যেখানে অপরাজিত থেকে ট্রফি জিতে কোন স্বস্তি-অস্বস্তিটা সঙ্গী হলো টাইগারদের? বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক সব সাফল্য অভিজ্ঞ ৫ ক্রিকেটারকে ঘিরেই আবর্তিত। তবে বাংলাদেশ এখন আর পঞ্চপান্ডবের দল নয়। পঞ্চপান্ডবের বাইরেও লড়াইয়ের জন্য মজুদ আছে সৈন্য। মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ- এই পঞ্চপান্ডবের বাইরে যে আস্তে আস্তে ম্যাচ উইনার তৈরি হচ্ছে, সেটার খানিকটা নমুনা পাওয়া গেছে ত্রিদেশীয় সিরিজে। সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা তারই প্রমাণ। বিশ্বকাপে ভালো করতে এই পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারের বাইরেও বাকিদের দিয়ে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার আর মোসাদ্দেকের বিধ্বংসী ব্যাটিং সেই ভরসাই দিচ্ছে পুরো দলকে। তাতে বিশ্বকাপে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড থেকে ভরসা পাচ্ছেন হেড কোচ স্টিভ রোডস। তার মতে বাংলাদেশ এখন আর পঞ্চপান্ডবের দল নয়! ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ছিলেন না। ব্যাটে-বলে যার উপস্থিতি প্রভাবকের ভূমিকায় থাকে সেই সাকিবের অনুপস্থিতি কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি। অথচ তার না থাকা মানেই ছিল আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফাইনালে সেই ঘাটতি পূরণে অগ্রণী ছিলেন তরুণ ওপেনার সৌম্য সরকার ও মোসাদ্দেক হোসেন। এই দুজনের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়েই ২৪ ওভারে ২১০ রানের বিশাল সংগ্রহটা অনায়াসে তাড়া করেছে বাংলাদেশ। ৬ বার বহুজাতিক ফাইনালে বাংলাদেশ যা পারেনি সেই দলটাই এবার তা করে দেখাল ভবিষ্যৎ তারকাদের ঘাড়ে ভর দিয়ে। এমন স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে কোচ রোডসকে, 'যেভাবে তাড়া করে জিতেছি তা সত্যিই চমৎকার ছিল। যদিও সহজ ছিল না। এখানে আগে দুই থেকে তিনজন আছে যারা বিশেষ ইনিংস খেলেছে। কিন্তু মোসাদ্দেক যা করে দেখিয়েছে তাতে সবাইকে সে নত অবস্থানে করে রাখতে পারবে। এটাই আমাদের স্কোয়াডের শক্তিমত্তা। আর তা আমাদের বড় ম্যাচ জেতার আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে এই দল নিয়েও।' এই আত্মবিশ্বাই আবার নির্ভার করছে বাংলাদেশ হেড কোচকে। তিনি মনে করেন, 'তার মানে এই স্কোয়াড নিয়ে বাংলাদেশ এখন খুব শক্তিশালী দল। এটাই আমরা চেয়েছি, শক্তিতে গভীরতা। আরও গভীরতা চাই, তাহলে লোকে আর পঞ্চপান্ডব নিয়ে কথা বলবে না।' সিরিজে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানটির নাম সৌম্য সরকার। তিন ফিফটিতে প্রথম কোনো বহুজাতিক লড়াইয়ের ট্রফি জয়ের ভিতটা গড়ে দেয়া তারই। সেই পথ ধরে বিধ্বংসী এক ফিফটিতে ফাইনাল জিতিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে চার উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানও চেনারূপে ফেরার ঝলক দেখিয়েছেন। কঠিন লেন্থে বল করে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। হতাশ করেননি মোহাম্মদ মিথুন কিংবা লিটন দাসও। তবে অন্তত একটা ম্যাচ আশা করতেই পারতেন বিশ্বকাপ দলের বাইরে থাকা চার ক্রিকেটার- তাসকিন আহমেদ, ফরহাদ রেজা, ইয়াসির আলী ও নাঈম হাসান। ত্রিদেশীয় সিরিজে দলে থাকলেও কোনো ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরেছেন চারজন। সবাই যেমন ফর্মে ছিলেন, সুযোগ পেলে হয়তো ভালো কিছুরই দেখা মিলত তাদের কাছ থেকেও! তাতে রিজার্ভও বাজিয়ে দেখা হতো। বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আবু জায়েদ রাহি ও লিটন দাসের অন্তর্ভুক্তিতে মোটামুটি একটা ফিসফাস শুরু হয়েছিল। ত্রিদেশীয় সিরিজের পর সেই ফিসফাসটা বন্ধ হয়েছে বলা যায়। রাহি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই পাঁচ উইকেট নিয়েছেন, লিটন এক ম্যাচ খেলেই পেয়েছেন ফিফটি, আর মোসাদ্দেক তো জিতিয়েছেন ফাইনালই। দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। বাংলাদেশ দলের জন্য এটা বড় ধরনের স্বস্তি। ত্রিদেশীয় সিরিজে মোটামুটি সবকিছু ইতিবাচক থাকলেও ডেথ ওভারে বোলিং নিয়ে এখনো অনেককিছু ভাবার বিষয় আছে বাংলাদেশের। রুবেল হোসেন ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র একটি। তাই মুস্তাফিজের সঙ্গে ডেথ ওভারগুলোতে তার জুটি বাঁধা আপাতত বন্ধ। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কেবল দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই দেখা গেছে মুস্তাফিজ ঝলক। বাকি ম্যাচগুলোতে একদমই বিবর্ণ ছিলেন কাটার মাস্টার। তবে রুবেলের জায়গায় মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে ডেথ ওভারে বোলিংয়ে আসার জন্য সাহস দেয়া হচ্ছে। দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মাশরাফি ও সাকিবও শেষদিকে বোলিং করার জন্য কিছু ওভার জমিয়ে রাখছেন। কিন্তু ডেথ ওভার বিশেষজ্ঞ যিনি সেই মুস্তাফিজের বিবর্ণটা চোখে পড়ছেই। তাই 'ফিজের' সঙ্গে সাইফউদ্দিনকেও ডেথ ওভারে কিছুটা খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতেই হবে।