প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় ম্যাচেই চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা স্মরণীয়ই হয়ে রইল তাঁর দলের জন্য। শুক্রবার সোলেমান দিয়াবাতের গোলে কিংসকে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকায় বড় সুবিধাই পেয়ে গেল মোহামেডান -ওয়েবসাইট
চ্যালেঞ্জ কাপে বসুন্ধরা কিংসের কাছে হেরে মৌসুমের প্রথম শিরোপাটা ঘরে তোলা হয়নি ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের। শুক্রবার আবারও দেখা হলো এই দুই দলের। নিজেদের হোম ভেনু্য কুমিলস্নার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে বসুন্ধরা কিংসকে ১-০ গোলে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে ১০ জনের মোহামেডান। ম্যাচে লাল কার্ড দেখেন গোলরক্ষক সুজন হোসেন। মোহামেডানের একমাত্র গোলটি করেন অধিনায়ক মালীর ফরোয়ার্ড সুলেমান দিয়াবাতে।
\হএই জয়ে কিংসকে পেছনে ফেলে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে আসলো সাদাকালোরা (গোলগড়+৭)। একই দিনে ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২-০ গোলে হারিয়েছে পুরানো ঢাকার দল রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। তাদেরও মোহামেডানের সমান ৬ পয়েন্ট। তবে গোল গড়ে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রহমতগঞ্জ (+৪)।
মোহামেডান-কিংসের ম্যাচ মানেই এখন বাড়তি আকর্ষণ। চলতি মৌসুমে বসুন্ধরাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো দল বলা চলে একমাত্র মোহামেডানকেই। শুক্রবার ছুটির দিনে তাই কুমিলস্না স্টেডিয়ামে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। লাল কার্ড, পেনাল্টি সেইভ, ১০ জনের দল নিয়ে মোহামেডানের লড়াই করে জয়! সব মিলে আকর্ষণীয় এক ম্যাচই উপভোগ করেছেন গ্যালারির দর্শকরা।
কুমিলস্নাতে ম্যাচের ৬ মিনিটে প্রায় মাঝ মাঠ থেকে মিগেল দামাসেনো পাস বাড়িয়েছিলেন মোহামেডানের বক্সে থাকা রাকিবের উদ্দেশ্যে। অরক্ষিতই ছিলেন রাকিব। কিন্তু দৌড়ে এসে বল ক্লিয়ার করেন মোহামেডানের এক ফুটবলার। পরের মিনিটেই নিজেদের মধ্যে বল দেয়া নেয়া করতে করতে আক্রমণে গিয়েছিলেন মিগেল। কিন্তু ভাঙতে পারেননি মোহামেডানের শক্ত রক্ষণ। ১০ মিনিটে প্রায় মাঝ মাঠ থেকে সতীর্থের কাছ থেকে বক্সে বল পেয়ে মোহামেডানের পোস্ট লক্ষ্য করে শট নিয়েছিলেন কিংসের ফরাসি ফরোয়ার্ড জারেদ খাসা। কিন্তু বল চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। ১৭ মিনিটে বক্সের কিছুটা দূরে ফ্রি কিক পায় বসুন্ধরা। কিংস অধিনায়ক মিগেলের ফ্রি কিক বস্নক করে সাদা-কালোরা। ২২ মিনিটে পোস্ট ছেড়ে বক্সের বাইরে চলে এসেছিলেন মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন হোসেন। সতীর্থের লং ক্রসে বল পেয়ে সুযোগটা কাজে লাগাতে গিয়েছিলেন রাকিব। কিন্তু সুজনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে যান বক্সে। রেফারি সাইমন সানী বেশ কিছুটা সময় নিয়ে সহকারী রেফারির সঙ্গে কথা বলে সুজনকে লাল কার্ড দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১০ জনের দলে পরিণত হয় মোহামেডান। তবে বদলি গোলরক্ষক হিসেবে আলফাজ আহমেদ যে সাকিব আল হাসানকে মাঠে নামিয়েছিলেন পুরো ম্যাচ জুড়ে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন এই গোলরক্ষক। ৩১ মিনিটে প্রায় মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে কয়েকজনকে কাটিয়ে কিছুটা এগিয়ে পোস্ট লক্ষ্য করে দূরপালস্নার জোড়ালে শট নিয়েছিলেন ঘানাইয়ান মিডফিল্ডার আরনেস্ট বোয়েটাং। তবে তৈরি ছিলেন কিংস গোলরক্ষক, বল গ্রিপ করেন। ৪৫ মিনিটে সোহেল রানার জোড়ালো শট আটকে দেন সাদা-কালোদের গোলরক্ষক সাকিব। প্রথমার্ধে কোন গোল হয়নি।
একজন কম নিয়েও রক্ষণ আরও শক্ত করে মোহামেডান, আক্রমণেও পিছিয়ে ছিল না তারা। ৪৯ মিনিটে মিগেলের কর্ণার বক্সে ক্লিয়ার হয়। ৬৩ মিনিটে বক্সে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন মোহামেডানের সুলেমান দিয়াবাতে। তাকে বস্নক করেন সাদ। ৬৮ মিনিটে রাহিম উদ্দিনের থ্রম্ন বলে বল পেয়ে ইজেহকে কাটিয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন সুলেমান দিয়াবাতে। প্রায় ফাঁকাতে গোলরক্ষক মেহদী হাসান শ্রাবণকে পরাস্ত করে বল জালে জড়িয়ে দেন সুলেমান দিয়াবাতে (১-০)। ১০ জনের দল নিয়েই লিড নেয় মোহামেডান। ৭৪ মিনিটে বক্সের মধ্যে রহিম উদ্দিনকে ফাউল করেন কিংসের ফুটবলার রিমন। রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। জোড়াগোল করার সুযোগ আসে সুলেমান দিয়াবাতের সামনে। কিন্তু সুলেমান দিয়াবাতের জোড়ালো শট আটকে দেন কিংস গোলরক্ষক মেহদী হাসান শ্রাবণ। আক্ষেপে পুড়েন সাদা-কালো সমর্থকরা। ৮২ মিনিটে পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন খাসা। তবে এবারও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। একের পর এক আক্রমণ সানিয়েও শেষ পর্যন্ত গোল শোধ করতে পারেনি লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কিংস। রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে ম্যাচ জয়ের উলস্নাসে মাতে আলফাজ আহমেদের শিষ্যরা।
একই দিনে ময়মনসিংহে নাবীব নেওয়াজ জীবনের জোড়া গোলে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২-০ গোলে হারায় রহমতগঞ্জ। লিগে এটি তাদের টানা দ্বিতীয় জয়। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে জীবনের গোলে লিড নেয় রহমতগঞ্জ (১-০)। ৬৮ মিনিটে ব্যবধানটাও দ্বিগুণ করেন অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ড (২-০)। এই দুই গোলেই জয় পায় রহমতগঞ্জ।