জান্নাতুল ফেরদৌসের স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারি মিড অনে খেলে দৌড় শুরু করেও এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলেন নিগার সুলতানা। পর মুহূর্তেই অনায়াসে পৌঁছালেন অন্য প্রান্তে। একইসঙ্গে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে যায় তার নাম। মেয়েদের লাল বলের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার যে হয়ে গেলেন তিনি।
অনির্বচনীয় এই স্বাদ পেয়ে ব্যাট উঁচিয়ে দুই হাত ছড়িয়ে উদযাপন করেন নিগার। পরে তিনি বলেন, ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে ৮৫ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ার সময়ই তার বিশ্বাস ছিল সেঞ্চুরি করতে পারবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের প্রথম রাউন্ডে সেঞ্চুরি করে থামেননি নিগার। নর্থ জোনের বিপক্ষে ১৫৩ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন সেন্ট্রাল জোন অধিনায়ক। প্রায় ৭ ঘণ্টা ক্রিজে থেকে ২৫৩ বলের ইনিংসে ২০ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন তিনি।
আর এই সেঞ্চুরিতে আল শাহরিয়ার রোকনের পাশে বসেছেন নিগার। ১৯৯৭ সালের নিউ জিল্যান্ড সফরে সাউথ কনফারেন্সের বিপক্ষে ১০২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন রোকন। ছেলেদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেটিই বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি। ২৬ বছর পর মেয়েদের তিন অঙ্কের সূচনা করলেন নিগার। বিসিবির দেওয়া ভিডিওবার্তায় ম্যাচ শেষে নিজের প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে পারার তৃপ্তির কথা বলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক।
তিনি বলেন,' আলস্নাহ্র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে বড় একটা মাইলফলকের তৌফিক আমাকে দিয়েছেন। প্রথমবার তিন দিনের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা... আমি আমার প্রক্রিয়ায় ছিলাম। সেটা বাস্তবায়ন করতে পেরে খুব খুশি।'
ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে ৮৫ রানে অপরাজিত ছিলেন নিগার। সোমবার সেঞ্চুরি ছুঁতে বেশি সময় লাগেনি তার। দিনের দশম ওভারে ওই সিঙ্গেল নিয়ে তিন অঙ্কের জাদুকরী স্পর্শ পান অভিজ্ঞ ব্যাটার। আগের দিন আশি ছাড়িয়ে অপরাজিত থাকার পরই তিন অঙ্ক ছোঁয়ার বিশ্বাসটা পেয়ে যান নিগার,' গতকাল (রোববার) অনেকেই সেঞ্চুরি মিস করেছে অন্য ম্যাচে। মাঠ ছাড়ার সময় জানতে পারি, আমার ৮৫ রান হয়েছে। অনেকেই বলছিল, সেঞ্চুরি সম্ভব। আমিও চিন্তা করলাম, আরেকটু ধৈর্য্য নিয়ে ব্যাটিং করলে সেঞ্চুরি করা যাবে। (সোমবার) সকাল থেকে এটাই চেষ্টা ছিল, স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলার। আমার ভেতরে একটা বিশ্বাস ছিল যে, আমি এটা করতে পারব। তো হয়ে গেছে।'
উদ্বোধনী জুটিতে তারা যোগ করেন ১৯০ রান। ইশমা ৯০ রানে ফিরলেও ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন ফারজানা। প্রথম ইনিংসে ফারজানার ব্যাট থেকে আসে ২৪৬ বলে ৮৬ রান। এছাড়া ইশমা খেলেন ৫১ বলে ২১ রানের ইনিংস। অমীমাংসিতভাবে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর নিগার বলেন, ফারজানা ও ইশমার ব্যাটিং থেকেই ভালো করার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তিনি,' প্রথম ইনিংসে (ফারজানা হক) পিংকি আপু অনেক ধৈর্য্য নিয়ে ব্যাটিং করেছেন। ইশমা (তানজিম) খুব ভালো ব্যাটিং করছিল। তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, এভাবে আসলে (লাল বলের) ক্রিকেটটা খেলতে হয়। আমার তো একদমই অভিজ্ঞতা ছিল না। ওদের ব্যাটিং দেখেই মূলত অনুপ্রাণিত হয়েছি। অন্য ম্যাচের ব্যাটারদেরও দেখছিলাম, সময় নিয়ে ব্যাটিং করেছে। কোচ থেকেও একটা নির্দেশনা ছিল। লঙ্গার ভার্শন ধৈর্যের খেলা। যতটা সময় নিয়ে ব্যাটিং করা যায়। সেটাই চেষ্টা করেছি।'