এনসিএলে অভিজ্ঞদের সঙ্গে পালস্না দিয়ে পারফর্ম করেছেন তরুণরাও

প্রকাশ | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
উদ্বোধনী ম্যাচে সিলেটের হয়ে জিসান আলমের সেঞ্চুরি। পরে আরিফুল ইসলামের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে দুইশর বেশি রান তাড়া করে ঢাকার জয়। এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের শুরু যতটা উড়ন্ত ছিল, শেষটা যেন ততই অনুজ্জ্বল। ফাইনালে ঢাকা মেট্রোকে মাত্র ৬২ রানে গুটিয়ে ট্রফি ঘরে তোলে রংপুর। শুরু ও শেষের এই বৈপরীত্যের মাঝেই শেষ হলো স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে দেশের নতুন টি২০ টুর্নামেন্ট। যেখানে দলীয় সাফল্যে সবাইকে ছাড়িয়ে গেল রংপুর। ব্যাটে-বলে আলো ছড়ালেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ, জিসান আলম, আলাউদ্দিন বাবু, আবু হায়দাররা। প্রথমবার স্বীকৃত ক্রিকেট খেলতে নেমে চমক দেখালেন আজিজুল হক তামিম। স্থানীয় ক্রিকেটারদের যথাযথ চর্চায় রাখা, টি২০'র প্রতিভা তুলে আনার লক্ষ্যে জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণের আট দল নিয়েই হয়েছে এনসিএল টি২০। যেখানে ব্যাট-বলের দাপট দেখা গেছে সমান তালে। টুর্নামেন্টের ৩২ ম্যাচের মধ্যে ২১ ইনিংসে ১৬০ ছুঁয়েছে দলগুলো। ১৮০ রানের বেশি তাড়ায় জয়ের ঘটনা দেখা গেছে ৪টি। প্রথম ইনিংসে ১৩০ বা তার রানের কমে আটকে যাওয়ার নজির ছিল ১০টি। এর দুইটিতে আবার আগে ব্যাট করা দলই পেয়েছে জয়ের স্বাদ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও আউটার মাঠে কুয়াশার প্রভাবও কিছুটা পড়েছে উইকেটে। কুয়াশার মাত্রা বেশি থাকা দিনগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই তেমন রানের দেখা মেলেনি। এর বাইরে ব্যাট-বলের দারুণ সমন্বয়ই দেখা গেছে আসরজুড়ে। টুর্নামেন্টের পর্দা নামার পর একনজরে দেখে নেওয়া যাক এনসিএল টি২০'র প্রথম আসরের পর্যালোচনা আসরের চমক জিসান-আজিজুল এনসিএল টি২০'র প্রথম আসরে তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন জিসান আলম, আজিজুল হাকিম তামিমরা। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে নজর কেড়েছেন দুই তরুণ টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান। এমনিতে ঢাকার হলেও, এবার সিলেটের হয়ে খেলেন জিসান। ঢাকার বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে ৮ বলের মধ্যে ৭টি ছক্কাসহ মোট ৪ চার ও ১০ ছক্কায় ৫২ বলে করেন সেঞ্চুরি। পরে খুলনার বিপক্ষে ৪৮ বলে ৭৩ ও শেষ ম্যাচে রাজশাহীর বিপক্ষে ২০ বছর বয়সী ওপেনার খেলেন ৩২ বলে ৬০ রানের ইনিংস। সব মিলিয়ে ৭ ইনিংসে ৪০.১৪ গড় ও ১৫৮.৭৬ স্ট্রাইক রেটে জিসানের সংগ্রহ ২৮১ রান। তার চেয়ে বেশি রান শুধু মোহাম্মদ নাঈম শেখের, ৯ ইনিংসে ২১৬। টুর্নামেন্টে ১৭টি চার ও ২২টি ছক্কা মারেন জিসান। আর কেউ ২০টি ছক্কাও মারতে পারেননি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেই প্রথম ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সামর্থ্যের জানান দেন জিসান। এবার এনসিএলে যেন অনেকটাই পূর্ণতা পেল সেটি। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপে নিজের পারফরম্যান্সে তৃপ্তির কথা বলেন জিসান,' আলহামদুলিলস্নাহ্‌?! অনেক ভালো একটা টুর্নামেন্ট কেটেছে। আমার অভিজ্ঞতা খুব ভালো ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন একটা টুর্নামেন্ট আমাদের সবার জন্য অনেক উপকারী। আমি আশা করি, সামনে আরও ভালো কিছু করতে পারব।' অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সেরা আবু হায়দার শেষটা মনমতো করতে না পারলেও টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যাট-বলে ঢাকা মেট্রোর চাহিদা মেটান আবু হায়দার। বল হাতে ৯ ইনিংসে ১৩ উইকেটের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে ১৬৪ স্ট্রাইক রেটে ১২৩ রান করেন বাঁহাতি পেস অলরাউন্ডার। আর তাই দলীয় সাফল্যে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। এতে ট্রফির পাশাপাশি ১ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কারও পান তিনি। ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে ব্যাটিংয়েও অবদান রাখতে পারার আনন্দের কথা বলেন আবু হায়দার,' আমি সবসময়ই বলি, বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও উপভোগ করি। এটি আমাকে বাড়তি প্রেরণা দেয়। আমার দলেরও শেষ দিকে কিছু বড় শটের চাহিদা থাকে। তাই বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও অবদান রাখার চেষ্টা করি।' ব্যাটিংয়ে শীর্ষে নাঈম শেখ রংপুরের বিপক্ষে ফাইনালে রানের খাতা খুলতে পারেননি মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তবে আগের ৯ ইনিংসেই তিন ফিফটিসহ ৩১৬ রান করে ফেলেন মেট্রো অধিনায়ক। যা টপকাতে পারেনি কেউ। মূলত তিনশ রানই করতে পারেনি আর কেউ। তাই টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যানের ট্রফি ও ৫০ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার জেতেন বাঁহাতি ওপেনার। ব্যক্তিগত সাফল্যে এনসিএলের আগে নেওয়া প্রস্তুতির কৃতিত্ব দেন নাঈম,' টুর্নামেন্টের আগে আমি ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। সামনে বিপিএল আছে। চেষ্টা করেছি যেসব জায়গায় উন্নতি প্রয়োজন, সেসব জায়গায় সঠিক সময়ে কাজ করার। সে পথে হেঁটেই আমি সফল হয়েছি।' বোলিংয়ে দাপট পেসারদের উদ্বোধনী ম্যাচে দুইশ রান তাড়া করে জয় অথবা পরে ১৮০ রানের বেশি তাড়া করে আরও তিন জয়ের টুর্নামেন্টে বল হাতে দাপট দেখান পেসাররা। আসরে অন্তত ১০ উইকেট নেওয়া ১০ জন বোলারের মধ্যে পেসারই ৮ জন। ফাইনালে মেট্রোকে গুঁড়িয়ে দেওয়া বোলিংয়ে ১২ রানে ৩ উইকেট নেন আলাউদ্দিন বাবু। সব মিলিয়ে ৯ ইনিংসে মাত্র ৯.৮৪ গড়ে ওভারপ্রতি ৫.৫০ রান খরচ করে তার শিকার ১৯ উইকেট। বোলারদের তালিকায় সবার ওপরে তিনিই। রংপুরকে শিরোপা জিতিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা বোলারের ট্রফি ও ৫০ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার পান ৩৩ বছর বয়সি পেসার। স্বীকৃতি গ্রহণ করে অভিজ্ঞদের সময় ফুরিয়ে যায়নি বলেন আলাউদ্দিন,' অনুভূতি অবশ্যই ভালো। তরুণদের পারফর্ম করার এখনও সময় আছে। আর অভিজ্ঞদেরও পারফর্ম করার সুযোগ আছে। ভালো করার ক্ষুধা সবসময়ই থাকতে হবে। এটি না থাকলে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারবেন না।' ফাইনালের আগপর্যন্ত বোলারদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন চট্টগ্রামের পেসার আহমেদ শরিফ। বাদ পড়ার আগে ৮ ইনিংসে ১৭ উইকেট নেন ২০ বছর বয়সী পেসার। পরের তিনজনই ঢাকা মেট্রোর- দুই স্পিনার রকিবুল হাসান (১৫) ও আলিস আল ইসলাম (১৪) ও আবু হায়দার (১৩)। তারুণ্য-অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে রাজ্জাকের সন্তুষ্টি সিলেটের দুই মাঠে টুর্নামেন্টের সবগুলো ম্যাচ কাছ থেকেই পর্যবেক্ষণ করেন জাতীয় দলের নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপে এনসিএলে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি,' আমার মনে হয়েছে, খুবই সফলভাবে টুর্নামেন্টটা শেষ হয়েছে। আর এটাকে কিন্তু বিপিএল বা অন্য যে কোনো কিছুর প্রস্তুতি বলা ঠিক হবে না। এটাও বড় একটা আসর। এখানে ছেলেরা ভালো খেলেছে, মাঠের খেলা ভালো হয়েছে, এতেই আমি খুশি। কিছু কিছু ঘাটতি হয়তো ছিল। তবে এটা যদি প্রতি বছর হয়, সেগুলো কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে না।' টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় অভিজ্ঞ নাঈম, সোহানদের সঙ্গে আছেন তরুণ জিসান, আজিজুলরা। আবার বোলিংয়েও আলাউদ্দিন, আবু হায়দারদের পাশাপাশি আলো ছড়িয়েছেন শরিফ, রকিবুলরা। পারফরম্যান্সে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের এই মিশেলই এনসিএল টি২০ বড় সাফল্য মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার,' এবারের পারফরম্যান্সে কিন্তু আদর্শ একটা সমন্বয় ছিল। এটা বলার কোনো সুযোগই নেই যে, টি২০ দেখে শুধু তরুণরাই ভালো খেলবে। অভিজ্ঞরা পারবে না। তরুণরা তো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের থেকেই শিখবে। আমি কারও নাম আলাদা করে বলতে চাই না। তবে আলাউদ্দিন বাবুর নাম উদাহরণ হিসেবে চলে আসবে। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাটিং-বোলিং দুই দিকেই উলেস্নখযোগ্য পারফরম্যান্স করেছে। এরকম আরও কয়েকজন ছিল। সব মিলিয়ে সন্তোষজনক একটা টুর্নামেন্ট।'