বৃষ্টির ফোঁটায় দৃষ্টি পড়ে থাকল সমর্থকদের

প্রকাশ | ১২ জুন ২০১৯, ০০:০০

আমিনুল ইসলাম লিটন
ব্রিস্টলে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার মঙ্গলবারের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি বৈরী আবহাওয়ায় পরিত্যক্ত হয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে সমর্থকদের স্বপ্নের আরেকটি সমাধি রচিত হলো। ম্যাচের আগে আবহাওয়ার সতর্কবার্তা ও শঙ্কা থাকলেও এদিন অনেক স্বপ্ন নিয়ে টাইগারদের জয় দেখতে স্টেডিয়ামে আসা প্রবাসী বাঙালিরা। সমর্থকরা বৃষ্টিতে ভিজে এভাবেই উৎসবে মেতে ওঠে -বিসিবি
পৃথিবীর যেকোনো দেশেই ক্রিকেট খেলা হলে বেশিরভাগ সমর্থক পাওয়া যায় ভারতের। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, পালস্না দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও। লন্ডনের ওভালে মাশরাফি বিন মর্তুজাদের দুই ম্যাচেই ৯০ শতাংশ সমর্থক ছিল বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের রস টেইলর তো সেদিন খেলা শেষে বলেই দিয়েছেন, 'ঢাকা না চট্টগ্রামে খেলছি!' কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সে ওভালের মতো লাল-সবুজের উত্তাল ঢেউ ওঠেনি। গ্যালারিতে স্বাগতিক দলের মান রাখতে ইংলিশ সমর্থকরাও ছিলেন ভরপুর। তবে বাঙালিরাও কম যাননি। ওভালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার দেখেছেন। কার্ডিফের পর ব্রিস্টলে শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ দেখবেন অনেকেই। আর সে লক্ষ্যেই ব্রিস্টলে ছিল বাঙালিদের উপচে পড়া ভিড়। ব্রিস্টলে শ্রীলংকার বিপক্ষে খেলা দেখতে ৮ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি টিকিট কিনে রেখেছিলেন। জাতীয় দলকে সমর্থন জানানোর সব রকমের প্রস্তুতিও ছিল। আবহাওয়ার এই বৈরী আচরণে তারা খানিকটা কষ্ট পেলেও বেলা গড়ানোর সাথে সাথে মাঠে বাড়তে থাকে তাদের উপস্থিতি। খেলা শুরু হওয়ার কথা স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টা)। কিন্তু ৯টা বাজার পর থেকেই গস্নুষ্টারশায়ার কাউন্টি ক্লাবের মাঠে ভিড় জমতে শুরু করে বাংলাদেশের ভক্ত ও সমর্থকদের। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে যথারীতি সবুজ লাল জার্সি পরে, বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন সাথে নিয়ে প্রিয় দলের সমর্থনে তাদের এই উপস্থিতি। যদিও সকালে দর্শকদের মাঠে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়নি। স্থানীয় সময় ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা) উন্মুক্ত করে দেয়া হয় গ্যালারির প্রবেশ পথ। বৃষ্টিতে ভিজে, প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাসের মধ্যেও জাতীয় দলকে সমর্থন জানাতে তারা ছুটে এসেছেন মাঠে। সবার আশা ছিল খেলা হবে এবং বাংলাদেশই জিতবে। দল সেমিফাইনালে খেলার আশায় থাকা সেখানকার প্রবাসী বাঙালিরা জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে জয়ের কাছাকাছি গিয়েই টাইগাররা ম্যাচটি হেরে গেছে। একদম বুকটা ভেঙে গেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ হৃদয় ভেঙে দেওয়ার মতো খেলেনি। একপেশে লড়াইয়ে কি আর হৃদয় ভাঙার পরিস্থিতি হয়! সেদিন যা হয়েছে তা উন্মাতাল সমর্থকদের রাগ বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজেদের প্যাশনের স্রোতে ভেসে খেলা দেখতে গিয়ে নেওয়া সব ঝক্কি-ঝামেলার দায় যেন ক্রিকেট দলের! সেখানকার প্রবাসীরা বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য সব ছাড় দিয়েছেন। বাদবাকি দিনগুলোতে অতিরিক্ত কাজ করে, বাড়তি শারীরিক শ্রম দিয়ে খেলার দিন ফাঁকা রাখছেন। আবেগের জোরে সোফিয়া গার্ডেন্সের রাগ সোফিয়া গার্ডেন্সেই ফেলে সবাই ছুটেছেন ব্রিস্টল। আপাততর্ যাংকিং, শক্তিতে পিছিয়ে থাকা লঙ্কানদের বিপক্ষে তো জিততেই হবে। ক্রিকেটাররা নেতিয়ে পড়লে গ্যালারি থেকে গলা ফাটিয়ে তাদের জাগাতে হবে, এমন লক্ষ্য নিয়েও ব্রিস্টলের সমর্থকরা শংকিত হয়ে পড়েন। গ্যালারিতে বসে বসে বৃষ্টির ফোটায় তাদের দৃষ্টি আটকে থাকে। তারা ভাবতে পারেননি পরাজিত হতে হবে বৃষ্টির কাছে। ব্রিস্টল থেকে টন্টন হয়ে নটিংহ্যাম, সব ভেনু্যতেই লাল-সবুজের রঙ মাখাতে তৈরি তারা। যেকোনোভাবেই হোক, অন্তত সেমিফাইনালে বাংলাদেশকে চাই-ই চাই।