ব্যর্থ মিশন শেষে ভগ্ন হৃদয়ে দেশে ফিরলেন শান্তরা

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ব্যর্থ মিশন শেষ করে শুক্রবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন মিরাজ-তাসকিন-শান্ত-ইমনরা -ওয়েবসাইট
যে ফেরাটা হতে পারত আনন্দের, উলস্নাসে-সেই ফেরাটাই হলো বিষাদময়। মুখে হাসি নেই। নেই স্বস্তির কোনো ছাপ। বরং প্রতিটি চেহারায় ফুটে উঠেছে হাহাকার, না পাওয়ার বেদনা, প্রাপ্তির আক্ষেপ। বড় স্বপ্ন নিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে উড়াল দিলেও শন্য হাতেই ফিরেছে বাংলাদেশ দলকে। শুক্রবার রাত ১১টায় পাকিস্তান থেকে দুবাই হয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদরা। প্রত্যেকে নিজ নিজ গাড়িতে চড়ে পরে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এর আগে ভারতের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে পরাজয় দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে বড় সংগ্রহ গড়া সম্ভব না হলেও বোলাররা লড়াই করেছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচেও দেখা গেছে একই চিত্র। ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে ২৫০ রানের নিচে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিল খেলা। তবে বৃষ্টির কারণে টসই হয়নি। প্রায় দেড় ঘণ্টার অপেক্ষার পর ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ফলে ১ পয়েন্ট করে পেয়েছে দুই দল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চলতি আসরে তিনটি ম্যাচ খেলে একটি পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। দুই হারের সঙ্গে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। পাকিস্তানেরও সমান পয়েন্ট। তবে নেট রানরেটের কারণে পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে থেকে আসর শেষ করেছে বাংলাদেশ। সচরাচর বিদেশের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বা আইসিসি ইভেন্ট খেলে বিমানবন্দরে দলের প্রতিনিধি হয়ে কেউ না কেউ গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। শুক্রবার রাতে দলের কেউই কথা বললেন না। নিজেদের মতো করে প্রত্যেকে বেরিয়ে যান বিমানবন্দর থেকে। ক্রিকেটাররা দেশে ফিরলেও বিদেশী কোনো কোচিং স্টাফ ফেরেননি। ১৯৯৯ সাল থেকে আইসিসির বিভিন্ন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছে। ২৫ বছর ধরে নিয়মিত অংশগ্রহণ করা দলটি শিরোপার স্বাদ পাওয়াতো দূরের কথা, কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারেনি। পাকিস্তান ও আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আরও একটি আইসিসি ইভেন্টে ব্যর্থতার গস্নানি সঙ্গী করে দেশে ফিরেছে নাজমুল হোসনে শান্তরা। অথচ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারলেও বৃষ্টির কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে। তাতে কোনও ম্যাচ না জেতার দুঃসহ স্মৃতি নিয়েই পাকিস্তান থেকে দুবাই হয়ে মধ্যরাতে ঢাকায় পৌঁছেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউলস্নাহরা। প্রত্যেকে নিজ নিজ গাড়িতে করে বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুই ম্যাচের পারফরম্যান্সে একটা বিষয় সামনে এসেছে স্পষ্টভাবে, গড়পড়তা পারফরম্যান্সে বর্তমান সময়ের ক্রিকেটে টিকে থাকা সম্ভব না কোনোভাবেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে পন্ড হওয়া ম্যাচেরর কারণে বাংলাদেশের পয়েন্টে ১ যোগ হয়েছে। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই বোলাররা যা করার করেছেন। ব্যাটসম্যানরা ছিলেন স্রেফ অসহায়। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে ব্যাটিংয়ে যে করুণ দশা শুরু হয়েছিল, তা নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও ধরা পড়েছে প্রবলভাবে। আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে। ডট বলের স্রোতে ভেসে গেছে ইনিংসের চেহারা। অহেতুক শট খেলতে গিয়ে বিলিয়ে এসেছেন উইকেট। প্রথম ম্যাচে ১৫৯ ডট বল, দ্বিতীয়টিতে ১৮১। পাকিস্তানে থাকতে অধিনায়ক শান্ত বলেছিলেন, দেশে ফিরে এটা নিয়ে কাজ করতে চান তারা। অবশ্যই (স্ট্রাইক রোটেশন চিন্তার কারণ)ৃ নেটে আমাদের ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে। কীভাবে প্রান্ত বদলাতে পারি, ম্যাচে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, সেসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমরা কীভাবে অনুশীলন করছি এবং ম্যাচে সেটা কতটা কাজে লাগাচ্ছি, তা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, ছেলেরা বুঝতে পারবে, কী করা উচিত।' আপাতত দেড় মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই শান্তদের। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলবেন তারা। এপ্রিলের মাঝামাঝি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসবে জিম্বাবুয়ে। দুই ম্যাচ মিলিয়ে ৫৯৮ বল খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৩৪০ বলই ছিল ডট। বলা যায়, পুরো এক ম্যাচের বেশি বলে তারা কোনো রান আদায় করতে পারেনি। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও গ্রম্নপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ দল। দেশে ফিরে মিরাজ-শান্তরা এবার যোগ দেবেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল)। এদিকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেম কোনো ম্যাচ জিততে না পারলেও আর্থিক ভাবে বেশ ভালো ভাবেই লাভবান হচ্ছেন টাইগাররা! বাংলাদেশ আছে সপ্তম স্থানে। ইংল্যান্ড হেরে গেলে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে ষষ্ঠ হবে। অর্থাৎ, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ দলের কোষাগারে প্রায় ৩ কোটি টাকা চলে এসেছে। শনিবার যদি ইংল্যান্ড প্রোটিয়াদের কাছে হেরে যায় নেটরান রেটের কারণে তারা নেমে যাবে সাত নম্বরে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ উঠে আসবে ছয় নম্বরে। তখন প্রাইজমানি হিসেবে বাংলাদেশ পাবে ৪ কোটি ২২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের চেয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা বেশি।