বিপিএলে চিটাগং কিংসের শুভেচ্ছাদূত ও মেন্টর হিসেবে চুক্তির পুরো অর্থ না পেয়ে এবং বারবার চেষ্টা করেও দলের কর্ণধারের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে বিসিবির দারস্থ হয়েছে শহিদ আফ্রিদি। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে ই-মেইল করে সহায়তা চেয়েছেন তিনি। এতেও কাজ না হলে প্রয়োজনে দুই দেশের প্রধানের কাছেও চিঠি লিখবেন বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়ক।
এবারের বিপিএলে বেশ কিছু ইতিবাচকতাকে আড়াল করে দিয়ে আসরজুড় তুমুল আলোচনায় ছিল পারিশ্রমিক নিয়ে বিতর্ক। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার মাসখানেক পরও শেষ হয়নি রেশ। নানা দলের ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক এখনও বাকি রয়ে যাওয়ার অভিযোগ আছে। এর মধ্যেই গুরুতর অভিযোগ তুললেন আফ্রিদির মতো তারকা।
বেশ আলোড়ন তুলেই এবার আফ্রিদিকে 'মেন্টর' করে এনেছিল চিটাগং কিংস। বিদেশি তারকা খরার আসরে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড় তারকা। তবে টুর্নামেন্ট চলার সময়ই তার পারিশ্রমিক নিয়ে টানাপোড়েনে গুঞ্জন ছিল। তখন চিটাগং কিংসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সমস্যার সমাধান করা হবে।
তবে রোববার সংবাম মাধ্যমের কাছে আফ্রিদি দাবি করলেন, চিটাগং কিংসের কর্ণধান সামির কাদের চৌধুরির কাছ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছেন না তিনি,' আমার সঙ্গে চুক্তি ছিল ১ লাখ ডলারের। কথা ছিল, বাংলাদেশ পা রাখার পর ৫০ হাজার ডলার দেওয়া হবে, টুর্নামেন্ট চলার সময় বাকি ৫০ হাজার দেবে। কিন্তু আমাকে মোটে ১৯ হাজার ডলার দেওয়া হয়েছে। 'কালকে দেব', 'দুই দিন পর দেব'- এসব বলে বলে বারবার ঘোরানো হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সব দায়িত্ব আমি পালন করেছি। টাকা দেওয়া হয়নি। সামিরের আচরণে হতবাক হয়ে গেছি। এমন কিছু আশা করিনি।'
'টুর্নামেন্টের মাঝপথে আমি একটা কাজে দেশে ফিরে আসি। সামিরের সঙ্গে কথা ছিল, ১৯ জানুয়ারি ফিরে যাব বাংলাদেশে। কিন্তু বারবার যোগাযোগ করার পরও তারা আর টিকেট পাঠায়নি। এখন তো সামিরের সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাচ্ছি না। দুই-তিন দিন আগে এটা আমি বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে লিখিত জানিয়েছি। প্রয়োজন হলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আর বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকেও লিখব।' তিনি আরও যোগ করেন।
আফ্রিদি বললেন, বাংলাদেশ ও বিপিএলের ভাবমূর্তির কথা ভেবে এতদিন তিনি ব্যাপারটি প্রকাশ্য করেননি,' বাংলাদেশ আমার হৃদয়ে আলাদা জায়গা নিয়ে আছে। বাংলাদেশের মানুষদের আমি ভালেবাসি। সেখানে গিয়ে সবসময় প্রচুর সমাদর ও ভালোবাসা পেয়েছি। আমি চাইনি বিপিএলের ভাবমূর্তি নষ্ট হোক। পারিশ্রমিক নিয়ে সমস্যা যে কোনো লিগের মৌলিক ভিত্তিই ভেঙে দিতে পারে। একটি দেশের জন্যও এটি ভালো ব্যাপার নয়। বাংলাদেশ ও বিপিএলের কথা ভেবেই টুর্নামেন্ট চলার সময় কিছু বলিনি।'
বিসিবি প্রধানের কাছে লেখা চিঠির একটি কপিও সংবাদ মাধ্যমকে দেখিয়েছেন আফ্রিদি। বাংলাদেশের প্রতি তার অনুরাগ ও ভালোবাসার কথা দিয়েই তিনি শুরু করেছেন চিঠি। এরপর জানিয়েছেন তার অভিযোগের কথা,' বিপিএলের একাদশ মৌসুমে আমার সম্পৃক্ততার একটি ব্যাপার নিয়ে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করছি। চিটাগং কিংস ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ও মেন্টর হিসেবে নিয়োগ পাওয়াটা আমার জন্য ছিল দারুণ সম্মানের এবং এবং তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করি। চুক্তি অনুযায়ী, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমাকে ৫০ শতাংশ (৫০ হাজার মার্কিন ডলার) পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা, বাকিটা টুর্নামেন্ট চলার সময়।
'আমার সব দায়িত্ব পালন করার পরওৃ প্রথম ম্যাচের আগে ঢাকায় পৌঁছানো, দলীয় ইভেন্টগুলোতে অংশ নেওয়া, মিডিয়া কার্যক্রম এবং নানা জায়গায় উপস্থিতিৃ সবকিছু করার পরো তারা আমার পারিশ্রমিকের শর্তকে সম্মান করেনি। ৫০ হাজার ডলারের মধ্যে কেবল ১৯ হাজার দেওয়া হয়েছিল, যা চুক্তির পরিষ্কার বরখেলাপ। তার পরও তাদের ওপর বিশ্বাস রেখে আমার দায়িত্ব পালন করে গেছি।' তিনি আরও যোগ করেন।
টুর্নামেন্টের মাঝপথে পাকিস্তানে চলে যাওয়া ও বাংলাদেশে ফিরতে না পারার ঘটনা বিস্তারিত উলেস্নখ করে আফ্রিদি সহায়তা চান বিসিবি সভাপতির,' টুর্নামেন্ট চলার সময় পাকিস্তানে ফেরার জন্য এক সপ্তাহের ছুটির অনুরোধ করি। ১৯ জানুয়ারি (বাংলাদেশে) ফিরব বলে আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়। টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে ফিরতি টিকেটের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। কিন্তু বারবার নিশ্চিত করার করারও টিকেট আর পাঠানো হয়নি এবং টুর্নামেন্টের বাকি সময়ের জন্য দলে আর যোগ দিতে পারিনি। এটা খুবই হতাশাজরক, বিশেষ করে এমন মর্যাদাপূর্ণ একটি লিগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য।'
'মি. আহমেদ, আপনাকে অনুরোধ করব দয়া করে ব্যাপারটিতে হস্তক্ষেপ করতে যেন চিটাগং কিংস ম্যানেজমেন্ট আমার পাওনা পারিশ্রমিক দিয়ে দেয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে আমার অতীত অভিজ্ঞতা সবসময়ই ছিলভালো এবং বিশ্বাস করি, আপনার নির্দেশনায় এই ব্যাপারটিরও বন্ধুত্বপূর্ণ সুরাহা হবে। বাংলাদেশকে আমি দ্বিতীয় বাড়ি মনে করি এবং চাই না, কোনো নেতিবাচক প্রচারণার প্রভাব বিপিএল বা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে পড়ুক।'