যে দ্বৈরথে আজকের ম্যাচের লাগাম

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উত্তেজনা ক্রিকেটের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা বিশ্ব আজ তাকিয়ে থাকবে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের দিকে। এ ম্যাচে ছড়ি ঘোরাবেন কারা? কাদের মধ্যে দ্বৈরথ হতে যাচ্ছে? হাজারো সব প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। সেসব কৌতূহল মেটাতে বিশেষ এ আয়োজন লিখেছেন- মো. ফখরুল ইসলাম

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে অপরাজিতের তকমা এবারও ধরে রাখতে চাইবে ভারত। তবে দল বেশ ছন্দে থাকায় চাপটা কম। তাইতো শনিবার অনুশীলনে এতটা উজ্জীবিত কোহলিরা -ওয়েবসাইট
এবারের বিশ্বকাপে ভয় দেখাচ্ছে পেসাররা। আর নামটা যদি হয় জসপ্রিত বুমরাহ কিংবা মোহাম্মদ আমির তাহলে তো প্রতিপক্ষের কাঁপুনি ধরার জোগাড়। ভারতের বোলিং স্তম্ভ বুমরাহর বোলিং অ্যাকশন একেবারেই আলাদা। ওভারের পর ওভার দারুণ লাইন ও লেন্থ বজায় রেখে বল করতে পারেন তিনি। নির্ভুল ইয়র্কার দেয়ার অসামান্য দক্ষতা আছে। এবারের আসরের প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়াদের ব্যাটিং লাইন-আপ একাই গুড়িয়ে দিয়েছেন এই বাঁ-হাতি পেসার। অজিদের বিপক্ষেও ছিলেন প্রাণবন্ত। ছয় বছর আগে ভারতের সাবেক এবং আইপিএল দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কোচ জন রাইটের চোখে পড়েন বুমরাহ। এরপর এ ক'বছরে বিশ্বের সেরা বোলার হয়ে উঠেছেন। এখন আইসিসি ওডিআই বোলিং র?্যাংকিংয়ে এক নম্বরে তিনি। তাই আরেকবার পাক বধে কোহলি বাহিনীর প্রধান ভরসা বুমরাহতেই। দেখা যাক পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা বুমরাহর ইয়র্কার কিভাবে সামলায়। অপরদিকে, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের জন্য পাকিস্তানের প্রাথমিক ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে জায়গা হয়নি তারকা পেসার মোহাম্মদ আমিরের। পরবর্তীতে অনেক জল ঘোলার পর নির্বাচকরা তাকে দলে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু প্রথমে দলে সুযোগ না পাওয়া এই আমিরই এখন ভারত বধে সরফরাজদের মূল অস্ত্র। তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে সবাই। স্বপ্ন দেখবে নাইবা কেন? অজিদের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি। তাই সহজেয় অনুমেয় পাক-ভারত উত্তেজনায় ঠাসা খেলায় দ্বৈরথ হবে দুই দলের এই দুই পেসারের মাঝেও। তারাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন। দু'জনই দলের হয়ে ব্যাট হাতে শুরু করেন। একজন বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে থাকলেও অন্যজন এখনও সেভাবে জ্বলে ওঠতে পারেন নি। আসরের প্রথম দুই ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও এক হাফ সেঞ্চুরিতে স্বমহিমায় উজ্জ্বল রোহিত শর্মা। কিউইদের বিপক্ষে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে পন্ড না হলে হয়তো আরেকটি রোহিত শো দেখতো হাজার হাজার দর্শক। প্রতিপক্ষের বোলারদেরকে অনায়াসে নাস্তানাবুদ করার ক্ষমতা থাকার জেরে ক্রিকেটভক্তরা রোহিত শর্মার নাম দিয়েছে 'হিটম্যান' ও 'ছক্কা রোহিত'। উদ্বোধনী জুটিতে দলের ভালো শুরু এনে দিতে রোহিতের জুরি নেই। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে তার ব্যাট হাসে সবচেয়ে বেশি। এবারের আসরে প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে কোহলি, ধাওয়ানদের আসা যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্তে দলকে আগলে রেখেছেন তারকা এই খেলোয়াড়। দুর্দান্ত এক শতকে নিজে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। ব্যাটের স্পর্শে প্রতিনিয়ত একের পর এক রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায় মেতে ওঠেছেন রোহিত। ধাওয়ান না থাকায় আজ তার ব্যাটিংয়ের দিকে তাকিয়ে গোটা ভারত। এছাড়া, ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জেতা পাকিস্তান দলের তারকা খেলোয়াড় ছিলেন ফখর জামান। ওই বিজয়ের পর একদিনের ক্রিকেটে পাকিস্তানের সময় খুব ভালো যাচ্ছে না। সময় ভালো যাচ্ছে না তার নিজেরও। এবারের আসরে ব্যাট এখনও জ্বলে উঠতে পারেন নি এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। তবে কে জানে হয়তো আজ ই জ্বলে উঠবেন। তাই দ্বৈরথ হতে পারে এ দু'জনের মাঝেও। দুই অধিনায়কই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত অপরাজিত থেকে কোহলি আজ উজ্জীবিত থাকলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত তকমা ধরে রাখার চাপ কিছুটা থাকবে। তবে বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে এবার পাকিস্তানের জয় খরা কাটাতে পাক অধিনায়ক সরফরাজ মরিয়া হয়ে থাকলেও বেশ চাপেই থাকবেন বলা চলে। এবারের আসরে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অধিনায়কদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী বিরাট কোহলি। তার আত্মবিশ্বাসী নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে টিম ইন্ডিয়া। ব্যাটে হাতে একের পর এক রেকর্ড গড়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। দলের কান্ডারি হয়ে এবার সময় এসেছে শিরোপা জেতানোর। তার নেতৃত্বে এবারের বিশ্বকাপে দুই জয়ে টিম ইন্ডিয়া এখন উড়ছে। দেখা যাক আজকের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের অপরাজিত তকমা কোহলি বাহিনী ধরে রাখতে পারে কি না। অন্যদিকে, পাকিস্তান দলের কান্ডারি সরফরাজ আহমেদকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কম জল ঘোলা হয়নি। বিদেশ বিভূঁইয়ে গোলস্নায় যাক নিজ দেশেই বেশি সমালোচিত তিনি। তবুও এ মানুষটার ওপর ভরসা করে শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনে নেমেছে পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচে গো-হারা হারার যেভাবে সরফরাজের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দল তাতে পাক সমর্থকরা আশার জাল বুনতেই পারেন। তাই ভারতের বিপক্ষে জয় খরা কাটাতে সরফরাজের দিকে তাকিয়ে থাকবে গোটা পাকিস্তান। আজকের ম্যাচে ব্যাটে-বলের দ্বৈরথের পাশাপাশি লড়াইটা হতে যাচ্ছে দুই অধিনায়কের মনস্তাত্ত্বিক আর চাপ সামলানোর লড়াইও।