আজকের ম্যাচের ভাগ্য যাদের হাতে

বিশ্বকাপের গত পাঁচ আসরে বাংলাদেশের বিপক্ষে উইন্ডিজদের একচেটিয়া আধিপত্য থাকলেও সাম্প্রতিককালে দলটির বিপক্ষে টিম টাইগার্সের ছড়ি ঘোরানো পারফরমেন্সে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছে টাইগার ভক্তরা। বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ মানেই ক্রিকেট পাড়ায় একরাশ উত্তেজনা। চলুন জেনে নেয়া যাক দুই দলের পরিসংখ্যান এবং আজকের ম্যাচে আলো ছড়াতে পারেন কারা। যায়যায়দিনের পাঠকদের জন্য বিশেষ এ আয়োজনটি তৈরি করেছেন- মো. ফখরুল ইসলাম

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একজনের এটাই শেষ বিশ্বকাপ, আরেকজনের সবে শুরু। বাংলাদেশ বনাম উইন্ডিজ ম্যাচে দুই দলের ব্যাটে বলের লড়াই ছাড়িয়ে দ্বৈরথ হতে পারে মাশরাফির অভিজ্ঞতা আর হোল্ডারের হার না মানা লড়াকু মনোভাবের মধ্যেও। মাশরাফির ব্যক্তিগত অর্জন কম নয়। আসরে দলগুলোর অধিনায়কদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ টাইগার কাপ্তানই। এ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচে বোলার হিসেবে মাশরাফির ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে ব্যাপক। তবে তিনি আমাদের মাশরাফি। কিভাবে পারফরম্যান্স দিয়ে সমালোচকদের মুখে কুলুপ এঁটে দিতে হয় তা তিনি ভালোই জানেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক তিনি। তার নেতৃত্বেই ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলে টাইগাররা। এ ছাড়া তার হাত ধরেই একদিনের ম্যাচেরর্ যাঙ্কিংয়ে একলাফে সাতে উঠে আসে বাংলাদেশ। এবারও অধিনায়ক মাশরাফির নেতৃত্বে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছে টাইগাররা। কে জানে হয়তো উইন্ডিজদের সঙ্গে ম্যাচ দিয়েই প্রত্যাবর্তন ঘটবে মাশরাফির। অপেক্ষায় টাইগার ভক্তরা। অন্যদিকে, জেসন হোল্ডারের নেতৃত্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে দারুণ এক জয় পায় ক্যারিবীয়রা। পরের দুই ম্যাচে জয় থেকে ছিটকে গেলেও ক্যারিবীয়রা হোল্ডারের নেতৃত্বেই পুনরুদ্ধারের শিরোপা স্বপ্ন দেখছে। এ ছাড়া ব্যাট ও বল দুই বিভাগেই দলের সংকট মুহুর্তে হাল ধরার সক্ষমতা রযেছে হোল্ডারের। হোল্ডারের নেতৃত্বেই একদিনের ম্যাচে ধুঁকতে থাকা ক্যারিবীয়রা উজ্জীবিত হওয়ার শক্তি পেয়েছে। আজকের ম্যাচের ভাগ্য দুই অধিনায়কের রণকৌশলেও। অভিজ্ঞতা ও হালের পারফরম্যান্স- দুই বিবেচনাতেই সাকিব সন্দেহাতীতভাবে বর্তমান ক্রিকেটের অন্যতম শীর্ষ তারকা। বিশ্বকাপের এবারের আসরের প্রথম তিন ম্যাচে দুই হাফ সেঞ্চুরি ও এক সেঞ্চুরিতে এ পর্যন্ত দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন তিনি একদিনের ম্যাচে বিশ্বসেরা। কিন্তু টাইগারদের আশার প্রদীপ সাকিবের হঠাৎ করেই ইনজুরিতে পড়া বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল ভক্তদের। তবে আশার কথা হলো, উইন্ডিজদের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে আবারও দলে ফিরছেন এই বাঁ-হাতি বিস্ময়। গত শনিবার তাকে দলের অনুশীলনে বেশ ফুরফুরেই দেখা গেছে। যা নিশ্চয়ই স্বস্তি দিবে দলকে। এর আগে বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে টাইগারদের জয়ের পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ১৩ বছর আগে ওডিআই ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। এবারের আসরসহ বিশ্বকাপ খেলছেন চারটি। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যদিকে, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিবীয়দের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান শাই হোপ। এই ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছেন ৯টি ওয়ানডে। যাতে সবমিলিয়ে তার রান ৬৬২। তিনটি সেঞ্চুরি এবং তিনটি হাফসেঞ্চুরি। সিঙ্গেল ডিজিটে আউট হয়েছেন মাত্র একবার। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তার রান গড় একেবারে কৃতিমান স্যার ডন ব্রাডম্যান ঘরানার; ৯৪.৫৭! প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশের বোলিং যে দারুণ 'উপভোগ' করছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান- সেটা তার ক্রিকেট পরিসংখ্যানেই পরিস্কার! ক্যারিয়ারের ৬টি ওয়ানডে সেঞ্চুরির তিনটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে। একজন পরিপূর্ণ এবং পরিপক্ক ক্রিকেটারের যতগুলো গুণ থাকা আবশ্যক তার প্রায় সবগুলোই বিদ্যমান মেহেদি হাসান মিরাজের মধ্যে। বয়স মাত্র ২২ ছুঁইছুঁই, আর এরই মধ্যে নিজের নামের পাশে যুক্ত করে ফেলেছেন কতশত অর্জন। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত খেলা টাইগারদের প্রথম তিন ম্যাচে দেখা গেছে, যে মুহুর্তে প্রতিপক্ষের উইকেট প্রয়োজন তখনি অধিনায়ক মাশরাফির আস্থায় ছিলেন মিরাজ। এখন পর্যন্ত ওডিয়াইতে ২৮ ম্যাচ খেলে ব্যাট হাতে ২৯১ রান করেন মিরাজ। ডান হাতি এই অফব্রেক বোলার ২৮ ম্যাচের ২৭ ইনিংসে বল করে নিয়েছেন ২৯ উইকেট। বেস্ট ২৯ রানে ৪ উইকেট। তবে তার ইকনোমি বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে বেস্ট। ৪.৩৮ ইকনোমি নিয়ে তিনি বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে কৃপণ বোলার। আর এটাই বোলার মিরাজের পস্নাস পয়েন্ট। বিশ্বকাপের ধারাভাষ্যকারদের মুখেও বোলার মিরাজের ভূয়সী প্রশংসা শোনা গেছে। তবে এবার সময় হয়েছে ব্যাট হাতে কিছু করার। অন্যদিকে, বিশ্বকাপের আগে থেকেই একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন শেল্ডন কটরেল। বিশ্বকাপেও দারুণ ফর্মে এই পেসার। তার ছো মেরে তালুবন্দি করা দূর্দান্ত ক্যাচটি এখনো টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ক্যাচ। বল হাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছেন দলের হয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে না গেলে হয়তো ডু পেস্নসিসদের খবর ছুটিয়ে ছাড়তেন। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কটরেল তার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারে নি। এই দুই দলের লড়াইয়ে দ্বৈরথটা হতে পারে এ দু'জনের মধ্যেও।