সাকিব বিশ্বকাপে সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়!

প্রকাশ | ২১ জুন ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে ১০ দলের দেড়শ খেলোয়াড়। এরইমধ্যে টুর্নামেন্টের অর্ধেকের বেশি ম্যাচ খেলা শেষ। ক্রিকেট বিশ্বের সেরাদের মধ্যে একজনই ব্যাট ও বলে সমান লড়াই চালিয়ে এগিয়ে চলছেন। তিনি সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মহাযজ্ঞের চলমান আসরে সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে তাকেই গণ্য করেছে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ। বাংলাদেশের এই স্পিন অলরাউন্ডার কেন সেরা সে বিষয়টিই সামনে নিয়ে এসেছে এই ইংলিশ গণমাধ্যমটি। সাকিব আল হাসানের যতটুকু প্রাপ্য সে হিসেবে সবসময়ই কম মূল্যায়ন করা এমনটাই প্রবণতা রয়েছে বলে দাবি টেলিগ্রাফের। আন্তর্জাতিক কিংবা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) যেখানেই খেলুক না কেন ভক্তদের বারবার মুগ্ধ করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০'র অলরাউন্ডারর্ যাংকিংয়ে প্রথম স্থান দখল করেন সাকিব, যা ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র তিনিই করতে সক্ষম হয়েছেন। সাকিবকে মূল্যায়ন না করার কারণ হচ্ছে, তিনি কোনো খেলাধুলার জন্য ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন না। অনেকে হয়তো এমন প্রতিভাবানদের চোখের আড়ালে রাখতে চায়। যেমন অস্ট্রেলিয়ার মতো দল ২০১১ সালের পর বাংলাদেশে গিয়ে একটি ম্যাচও খেলেনি? ২০০০ সালে ১৩ বছর বয়স ছিল সাকিবের। সেসময় দুটি ঘটনার জন্য বর্তমান অবস্থায় আসতে পেরেছে বাংলাদেশ দল- এমনটাই মনে করে টেলিগ্রাফ। প্রথমটি হচ্ছে সে বছর প্রথমবারের মতো টেস্ট স্ট্যাটাস পায় টাইগাররা। ২৯ বছরের ক্রিকেট যাত্রায় যেটি সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল বাংলাদেশের জন্য। ১৯৭১ সালের আগেও এই অঞ্চলটি টেস্ট ক্রিকেটের আয়োজক ছিল। পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করার পর দিনের পর দিন অবকাঠামো তৈরি করেছে যা দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রের উন্নতি ঘটিয়েছে। আর দ্বিতীয় হচ্ছে ২০০০ সালে কিশোর সাকিব ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। যেখানে নিজেকে পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করেছিলেন মাগুরায় জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটার। সাকিব নিজেও বলেছেন, সেখান থেকেই আমার লড়াকু মনোভাব তৈরি হয়েছিল। বিকেএসপিতে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলা চালিয়ে গিয়েছেন। সেখানেই শিখেছেন ক্রিকেটীয় দক্ষতা। কোচ ও উপদেষ্টারা তার এই পথকে মসৃণ করতে সাহায্য করেছে। ১৯ বছর বয়সি সাকিব যখন জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক করলেন ঠিক তখন দল টানা ৪৫টি হারে জর্জরিত ছিল। ঠিক ওই সময় ব্যাট ও বল হাতে দলের কান্ডারী হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু করেন তরুণ সাকিব। ২০০৩ সালে কানাডা ও কেনিয়ার বিপক্ষে হারের লজ্জা পেতে হয়েছিল। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ আসরে ভারত বধে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও দুটি উইকেট তুলে বড় অবদান রাখেন। জয়-পরাজয়ে সবসময় বাংলাদেশ নিজেদের সমর্থকদের পাশে পেয়েছে। দুর্বল ফিটনেস থেকে দুর্নীতি, পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে ব্যর্থতা এবং দক্ষতার অভাব- এসব কিছু বাংলাদেশ সবকিছুই ছাপিয়ে সামনে এগিয়ে এসেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সাকিব ছিলেন ধারাবাহিক। ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে পৌঁছানোর পর সিরিজ সেরা হয়েছেন। ৩৩ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ১১৪ রান করে দলকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে তোলার নায়কও তিনি। অন্যদিকে ৮৪ রান ও ১০ উইকেট তুলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টেস্ট জয়ে অসামান্য অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের সুদিনগুলোয় নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছেন সাকিব। টেলিগ্রাফ সাকিবকে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড উলেস্নখ করে ২০১৪ সালে ক্রিকেট বোর্ড থেকে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও টেনে আনে। কোচের সঙ্গে সমস্যায় জড়িয়ে নিষিদ্ধ হতে হয় তাকে। যদিও সবকিছু এখন অতীত। আর বর্তমানটি হচ্ছে দলের টেস্ট ও টি২০'র দায়িত্ব রয়েছে তার কাঁধেই। একজন বড় মাপের খেলোয়াড়ই পারেন তুলনামূলক দুর্বল দলকে পরিবর্তন করে দিতে। দলের হয়ে সাকিব যেটি করছেন বর্তমানে। তার আত্মবিশ্বাস ও লড়াকু মনোভাবই সেটি করতে সাহায্য করেছে। বাম-হাতি এই স্পিনার ম্যাচেও মিডল ওভার করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন পাওয়ার-পেস্নতে দলের হাল ধরেছেন। এমনকি শেষ দিকেও বল হাতে দেখিয়েছেন জাদু। গেল বছরের শুরু থেকে তিন নম্বর পজিশনে ব্যাট করছেন সাকিব। ১৯ ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় ৫৯.৬৮। যেখানে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রয়েছে টানা দুটি সেঞ্চুরিও। যদিও ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুর্দান্ত ৯৯ বলে ১২৪ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলেও উদযাপন করতে দেখা যায়নি সাকিবকে। ৩২২ রানের পাহাড়সম রান তাড়া করতে নেমে জয়ের পর ক্রিজে থাকা সঙ্গী লিটন দাসের সঙ্গে গতানুগতিক পদ্ধতিতেই হাত মিলিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ৩২ বছর বয়সি সাকিব। চেষ্টা করছেন সব ধরনের প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই নিজ দলের জন্য সেরাটা উপহার দিতে।