আফগানদের বিপক্ষে জয়টাই গুরুত্বপূর্ণ : কোহলি

আমরা জানতাম আফগানিস্তান ক্ষুধার্ত। এই ম্যাচটা আমাদের জন্য অনেক বেশিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ সবকিছু আমাদের পরিকল্পনা মতো হয়নি। আর এরকম মুহূর্তেই আপনাকে নিজের সেরাটা দেখাতে হয় এবং ঘুরে দাঁড়াতে হয়

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯, ১২:৫৭

সুলতান মাহমুদ রিপন
জয়ের প্রায় চৌকাঠে পৌঁছে গিয়েছিল আফগানিস্তান। আর তেমন এক লো-স্কোরিং ম্যাচের শেষ ওভারে মোহাম্মদ শামির হ্যাটট্রিকে বিশ্বকাপের কষ্টার্জিত জয় তুলে নিয়েছে কোহলির ভারত। ১১ রানের এই জয়টা সেমিফাইনালের পথটাতে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে। হারলে বরং পয়েন্ট টেবিলের হিসেব-নিকেশ বেশ খানিকটা জটিল হয়ে পড়ত। তাইতো ম্যাচ শেষে তৃপ্তি ঝরলো বিরাট কোহলির কণ্ঠে। আফগানদের বিপক্ষে জয়টা তাদের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক। সাউদাম্পটনে স্স্নোয়িশ পিচে ভারতও বুঝতে পারেনি আসলে কী হতে যাচ্ছে ম্যাচটায়। টস জিতে মোটে ২২৫ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছে আফগানদের সামনে। তারপরেও টান টান উত্তেজনায় পা না হড়কেও অসাধারণ এক জয় তুলে নিয়েছে কোহলির দল। ম্যাচের পর তাই ভারতীয় দলপতি বললেন, 'এই ম্যাচের জয়টা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ কিছুই পরিকল্পনা মাফিক হয়নি। এরপর নিজেদের আসল চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে, শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে অসাধারণ এক জয় পেয়েছি।' এমন জয়ে শেষ দিকে অসাধারণ ভূমিকা ছিল মোহাম্মদ শামির। ভুবনেশ্বর কুমারের চোটে একাদশে স্থান পেয়েছেন। বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে তুলে নিয়েছেন হ্যাটট্রিক। ১৯৮৭ সালে প্রথমবার হ্যাটট্রিক করেছিলেন চেতন শর্মা। তাই শামির বোলিং নিয়ে প্রশংসা ঝরল কোহলির কণ্ঠে,' সবাই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। শামি সেই জায়গায় আজ বলতে গেলে অসাধারণ বোলিং করেছেন। আমরা যেভাবে চেয়েছি বলটা সেভাবেই করেছে। সে বুঝতে পেরেছিল ওই সময় প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা রানের জন্য কতটা ক্ষুধার্ত। অবশ্য মাঝের দিকে নিজেরাই সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম। তবে আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল নিজেদের ওপর। পিচে যখন যাই তখন বুঝতে পারি পিচের কী অবস্থা।' দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের তিন ম্যাচে একরকম সহজ জয়ই পেয়েছিল ভারত। তবে পুঁচকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয় তাদের। শেষ পর্যন্ত অল্প পুঁজি নিয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচটা জিতে নিলেও ঘাম ছুটে যায় ভারতের। ভারতীয় অধিনায়ক কোহলিও জানান, মাত্র ২২৪ রানে আটকে যাওয়ায় ইনিংস বিরতির সময়ে 'সংশয়ে' ছিলেন তারা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রোজ বোলের উইকেট ধীরগতির হয়ে আসছিল। স্পিনাররা পাচ্ছিলেন সুবিধা। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা প্রতিপক্ষ বোলার এবং উইকেটকে ঠিকঠাকভাবে না পড়ে নিজেদের ঢঙে ব্যাট চালিয়ে যান। তাতেই ডেকে আনেন বিপদ। শেষ পর্যন্ত কোহলি আর কেদার যাদবের ফিফটিতে ভারত স্কোরবোর্ডে তোলে ৮ উইকেটে ২২৪ রান। পরে অবশ্য এই রানই জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়। তবে আগের ম্যাচগুলোর মতো এদিন খুব বেশি স্বস্তিতে থাকতে পারেনি ভারত। একেবারে শেষ ওভার পর্যন্ত সজাগ থাকতে হয় তাদের। ম্যাচ পরবর্তী পুরস্কার বিতরণীতে সরল স্বীকারোক্তি দেন কোহলি, 'ম্যাচের মাঝপথে (ভারতের ইনিংস শেষে) আমাদের মনের মধ্যে কিছুটা সংশয় ঢুকে গিয়েছিল। ম্যাচে কী ঘটতে পারে, এটা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম আমরা। তবে ড্রেসিং রুমের সবার বিশ্বাস ছিল। আমাদের সমষ্টিগত বিশ্বাস ছিল যে, আমরা ম্যাচটা জিততে পারি।' রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে রানবান্ধব উইকেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছিলেন ভারতীয় দলপাতি কোহলি। লক্ষ্য ছিল, আফগানিস্তানকে রানচাপা দিয়ে পিষ্ট করা। তা তো ঘটেইনি, উল্টো রান তুলতে খাবি খেতে হয় ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপকে। মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবি, রশিদ খান ও রহমত শাহর ঘূর্ণি বোলিংয়ের সামনে বিরাট কোহলি আর কেদার যাদব ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন অস্বস্তিতে, দিশাহারা। তাইতো দুর্বল আফগানদের বি জয়টা সহজে না আসলেও এ ম্যাচ থেকে শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু দেখছেন কোহলি, 'আমরা জানতাম আফগানিস্তান ক্ষুধার্ত (জয়ের জন্য)। এই ম্যাচটা আমাদের জন্য অনেক বেশিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, সবকিছু আমাদের পরিকল্পনা মতো হয়নি। আর এরকম মুহূর্তেই আপনাকে নিজের সেরাটা দেখাতে হয় এবং ঘুরে দাঁড়াতে হয়।'