কিউইদের বিপক্ষে জিততে মরিয়া পাকিস্তান

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

মো. ফখরুল ইসলাম
প্রোটিয়াদের উড়িয়ে দিয়ে শেষ চারের আশা জিইয়ে রেখেছে পাকিস্তান। তবে লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে আরও বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে তাদের। কিউইদের বিপক্ষে অগ্নিপরীক্ষায় নামার আগে গতকাল অনুশীলনের ফাঁকে সে কথাই হয়তো ভাবছেন সরফরাজরা -ওয়েবসাইট
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম পাঁচ ম্যাচে মাত্র এক জয়ের পর সেমিফাইনালে খেলার আশা ছেড়েই দিয়েছিল পাকিস্তান। তার ওপর ভারতের সঙ্গে অমন বাজেভাবে হার মেনে নিতে পারেনি পাক সমর্থকরাও। এই ইংল্যান্ডের মাটিতেই বছরদুয়েক আগে টিম ইন্ডিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জেতা দলটির এমন অসহায় আত্মসমর্পণের দরুন ধেয়ে আসা একের পর এক ধুয়োধ্বনি দেখে নিশ্চয়ই সরফরাজদের এমনটাই মনে হয়েছিল, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলংকার অবিশ্বাস্য এক জয়ে পয়েন্ট টেবিলের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ আর শ্রীলংকার সঙ্গে নতুন করে স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার রসদ পেয়েছে পাকিস্তানও। তাইতো পরের ম্যাচে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দাপুটে জয় দিয়ে আবারও টুর্নামেন্টে নিজেদের আশা জিইয়ে রেখেছে সরফরাজরা। ৬ ম্যাচে ২ জয়ে পয়েন্ট তালিকার সাত নাম্বারে অবস্থান করছে পাকিস্তান। শেষ চারের লড়াইয়ে টিকে থাকতে আজও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই সরফরাজ বাহিনীর। অন্যদিকে, এবারের আসরের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল নিউজিল্যান্ড। এখনো একটাও ম্যাচ হারেনি তারা। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে কিউইরাই। কেন উইলিয়ামসনের দল এ পর্যন্ত সব বিভাগে সমান দক্ষতা দেখিয়েছে, ভুলভ্রান্তি করেছে যৎসামান্য। উইলিয়ামসন নিজে দারুণ ফর্মে আছেন, ঠিক যেমন আছেন তার আরেক বিশ্বস্ত সৈনিক রস টেলর। কলিন দ্য গ্রান্ডহোম একদিকে দরকারের সময় রান করছেন, অন্যদিকে আঁটসাঁট বোলিং করে প্রধান পেসারদের কাজ সহজ করে দিচ্ছেন। এবারের আসরে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দলের নাম যদি হয় নিউজিল্যান্ড, তবে সবচেয়ে ভয়ংকর বোলিং বিভাগও তাদের দখলে। কিউই বোলারদের কথাই যখন উঠল, তখন বলতেই হবে কিভাবে লুকি ফার্গুসনের গতি আর বাউন্সার বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের বুকেও ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন। সুইংয়ের ওপর অসাধারণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নজর কেড়েছেন ট্রেন্ট বোল্টও। অন্য দুই পেসার ম্যাট হেনরি আর জিমি নিশামও নিয়মিত উইকেট পাচ্ছেন। শোনা গিয়েছিল এই বিশ্বকাপে ম্যাচের ভাগ্য গড়বেন রিস্ট স্পিনাররা, কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সাফল্য প্রমাণ করে দিয়েছে যে ভাল পেস বোলিংয়ের আজও কোনো বিকল্প নেই। এবার তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী 'আনপ্রেডিক্ট্যাবল' পাকিস্তান। একদিন খুব সাধারণ মানের ক্রিকেট খেললেও পরের দিন যে তারা ইন্দ্রপতন ঘটাবে না, একথা কেউ হলফ করে বলতে পারে না। তাই আজকের ম্যাচে কারা জয়ী হবে, সত্যিই বলা কঠিন। সব দলই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেমিফাইনালের পথটা পাকাপোক্ত করতে চাইছে, তাই এজবাস্টনে আজ দর্শকরা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আশা করতেই পারেন। আগের ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলে জিতেছে পাকিস্তান, কিন্তু এখন তাদের দরকার ধারাবাহিকতা। টুর্নামেন্টের শুরুতেই বেশ কিছু ম্যাচ হেরে নিজেদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তারা, তবে কোনো দলের পক্ষে যদি এই অবস্থা থেকেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়, তবে সেটা সরফরাজ আহমেদের পাকিস্তান। এ ছাড়া প্রোটিয়াদের বিপক্ষে লড়ার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে কেবল সফল ছিলেন মোহাম্মদ আমির। যিনি এ বিশ্বকাপে নিজেকে নতুন করে প্রমাণের মঞ্চ হিসেবেই লড়ে যাচ্ছেন। তবে গত ম্যাচে আমলা ডু পেস্নসিসদের বিপক্ষে ওয়াহাব রিয়াজও যেভাবে সঙ্গ দিলেন এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে যেকোনো দলের জন্যই তা দুশ্চিন্তার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল পাকিস্তান। ব্যাটিং-ব্যর্থতার জন্য তারপর অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪১ রানে হারে তারা। আর ভারতের বিপক্ষে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আদৌ জয়ের ক্ষুধা ছিল বলেই মনে হয়নি; ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে সেদিন অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিল সরফরাজ বাহিনী। টানা হারে খাদের কিনারায় চলে যাওয়া পাকিস্তানের সামনে শেষ চারের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ায় প্রোটিয়া বধের পর আজ নতুন করে কিউই বধের স্বপ্ন বুনছে সরফরাজ বাহিনী। এদিকে আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে, আজ এজবাস্টনের বার্মিংহামে বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে হালকা মেঘের আভাস রয়েছে। যা খেলা চালিয়ে নিতে সমস্যা করবে না। অল্প মেঘ আর হালকা বাতাস বোল্ট আর আমিরের সুইং বোলিংকে কতটা সাহায্য করে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব।