লর্ডসের অনার্স বোর্ডে মুস্তাফিজ

বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রম্নততম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করার রেকর্ড ছিল বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের দখলে। ১০০ উইকেট পেতে রাজ্জাকের লেগেছিল ৬৯টি ওয়ানডে। শুধু তাই নয়, এশিয়ার পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রম্নততম ১০০ উইকেট নেয়ারও কীর্তি এখন মুস্তাফিজের। আর ওয়ানডে ইতিহাসে যৌথভাবে চতুর্থ দ্রম্নততম ১০০ উইকেট নেয়া ক্রিকেটার তিনি

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

আমিনুল ইসলাম লিটন
ক্রিকেটতীর্থ লর্ডসে শুক্রবার ব্যাট হাতে পাকিস্তানের শুরুটা দুর্দান্ত হলেও সাইফউদ্দিনের বেকথ্রম্নতে পথ খুঁজে পায় বাংলাদেশ। মারকুটে ব্যাটসম্যান বাবর আজমকে ফেরানোর পর সাইফের চিরচেনা উদযাপন -ওয়েবসাইট
লর্ডসে পাকিস্তানের বাঁচা-মরার ম্যাচ। এই ম্যাচে বাংলাদেশকে অন্তত ৩১১ বা ৩১৬ রানে হারাতে হবে। তাতে নিশ্চিত হবে '৯২ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের সেমিফাইনাল। নইলে সেমির আগেই ছিটকে পড়তে হবে সরফরাজদের। লর্ডসে বাংলাদেশ টস জিতে ব্যাটিং নিলেই আর কোনো সমীকরণ থাকত না পাকিস্তানের সামনে। এই দুর্ভাগ্যে পড়তে হয়নি তাদের। টস জিতে নিয়েছে ব্যাটিং। স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে পাকিস্তানের। ম্যাচের আগেরদিন সরফরাজ আহমেদ বলেছিলেন, পাকিস্তান ৫০০ বা ৬০০ রানও করতে পারে। তাদের দ্বারা অসম্ভব কিছু নেই। বড় লক্ষ্যে নেমে শুক্রবার সেভাবেই ব্যাটিং শুরু করে পাকিস্তানের টপ-অর্ডার। কিন্তু ৫০০ রানের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ৫০ ওভারে পাকিস্তান করে ৯ উইকেটে ৩১৫ রান। ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট পাওয়া মুস্তাফিজ পাকিস্তানের বিপক্ষেও তুলে নেন ৫ উইকেট। বল হাতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বস্তি দিয়েছেন সাইফউদ্দিনও। ৩ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। হারিস সোহেলের উইকেটটি মুস্তাফিজের জন্য বিশেষ গৌরবের। এই উইকেটটি তাকে দিয়েছে যৌথভাবে চতুর্থ দ্রম্নত শততম উইকেটের ক্লাবে নাম লেখানোর কীর্তি। এদিন পাকিস্তানের ৫০০ রান সংগ্রহ বা সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ না হলেও বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান পৌঁছেছেন মাইলফলকে। বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে দ্রম্নততম হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। ৫৪ ম্যাচের ৫৩ ইনিংসে বল করে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মুস্তাফিজ। ১০০ উইকেটের ক্লাবে মুস্তাফিজই এশিয়ার দ্রম্নততম পেসার। লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নিজের নাম লিখিয়ে ফেললেন মুস্তাফিজ। চলতি বিশ্বকাপে ২০ উইকেট নিয়ে দুর্দান্ত পারফর্মার দ্য ফিজ! ৫৪ ম্যাচে ১০৩ উইকেট-প্রথম শ্রেণির পারফরমেন্সের মর্যাদাই পাচ্ছে! নিজের প্রথম ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে জানান দিয়েছিলেন অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বোলিং ভরসা হয়ে উঠবেন তিনি। বিশ্বক্রিকেটেরও বড় তারকা হওয়ার আভাস ছিল শুরুতেই। অবিশ্বাস্য এক প্রতিভা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব হয়েছিল মুস্তাফিজুর রহমানের। তার মায়াবী কাটারের জাদুতে বিভ্রান্ত করেছেন অসংখ্য তারকা ব্যাটসম্যানকে। তবে সময় যত গড়িয়েছে, মুস্তাফিজের ধার যেন ততই কমছে। চোট সমস্যা ছিল, অস্ত্রোপচারের পর যেন হারিয়ে যেতে বসেছিলেন মুস্তাফিজ। তবে ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে ফিরে পাচ্ছেন। এত প্রতিকূলতার মাঝেও শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নেমে নতুন এক মাইলফলক গড়েছেন কাটার মাস্টার। নিজের আসল ছন্দটা খুঁজে পান ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। ওই ম্যাচে ১০ ওভার বল করে এক মেডেনসহ ৫৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট পান মুস্তাফিজ। সাকিবের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট পাওয়ার কীর্তি গড়েন তিনি। বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দুবার পাঁচ উইকেটের কীর্তিও এবার তার। এর আগে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রম্নততম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করার রেকর্ড ছিল বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের দখলে। ১০০ উইকেট পেতে রাজ্জাকের লেগেছিল ৬৯টি ওয়ানডে। শুধু তাই নয়, এশিয়ার পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রম্নততম ১০০ উইকেট নেয়ারও কীর্তি এখন মুস্তাফিজের। আর ওয়ানডে ইতিহাসে যৌথভাবে চতুর্থ দ্রম্নততম ১০০ উইকেট নেয়া ক্রিকেটার তিনি। মুস্তাফিজের সমান ৫৪ ম্যাচে ১০০ উইকেট নিয়ে এতদিন এককভাবে চতুর্থ স্থানে ছিলেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক পেসার শেন বন্ড। সবচেয়ে কম ম্যাচে ১০০ উইকেট নেয়ার কীর্তিটা আছে আফগানিস্তানের রশিদ খানের দখলে। ১০০ উইকেট নিতে তিনি খেলেন মাত্র ৪৪ ম্যাচ। ৫২ ও ৫৩ ইনিংসে ১০০ উইকেট নিয়ে যথাক্রমে এই তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক ও পাকিস্তানের সাবেক স্পিনার সাকলাইন মুশতাক।