সস্তা কোচই দরকার ছিল আর্জেন্টিনার!

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
ব্রাজিলের কাছে সেমিফাইনালে হেরে কোপা আমেরিকা থেকে বাদ পড়েছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির আজন্ম স্বপ্ন পূরণ হয়নি এবারও। আকাশি-সাদা জার্সি আপনি মেসির মাথা নিচু করা ছবি দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। সে ছবি আরও একবার দেখেছেন, আরও একবার তার ব্যর্থতাই শিরোনাম হয়েছে। ব্যর্থ আর্জেন্টিনাতেও আপনার অভ্যস্ততা নতুন কিছু নয়। শিরোপা না জেতা হয়ত এখনও ব্যর্থতাই আর্জেন্টাইনদের জন্য। কিন্তু এবার কি আসলেও শিরোপা জেতার মতো অবস্থায় ছিল আর্জেন্টিনা? আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। ১২ দলের টুর্নামেন্টে একমাত্র অন্তর্বর্তীকালীন কোচ নিয়ে টুর্নামেন্টে এসেছিল আর্জেন্টিনা। স্কালোনির কোচিং অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। তার ক্যারিয়ার শুরুই আর্জেন্টিনা জাতীয় দল দিয়ে। এর আগে ছিলেন সহকারি কোচ। এম প্রোফাইল নিয়ে আর্জেন্টিনার মতো দলের কোচ স্কালোনিকে কেন করা হলো সে প্রশ্ন আপনার জাগতেই পারে। সহজ জবাব, স্কালোনির বেতন কম। তাই তাকে কোচ করা আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের। আপনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আর্থিক দৈন্যতার গল্প শোনা লোক। আর্জেন্টিনার আর্থিক দৈন্যদশা আপনাকে ভাবানোর কথা নয়। কিন্তু অনিয়ম আর পরিকল্পনার অভাবে আর্জেন্টিনার মতো ঐতিহ্যবাহী দলও ভুগতে পারে সেটা আবার সম্ভব কী করে? পরিকল্পনার অভাব যেমন ভোগাতে পারে। ভুল পরিকল্পনা ভোগাতে পারে আরও বেশি। এই আর্জেন্টিনা সেই ভুল পরিকল্পনার খেসারত দিচ্ছে শুধু। আর শিরোনামে উঠে আসছে মেসিদের ব্যর্থতা। গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায়ের গল্পটা জানা সবার। এরপর তখনকার কোচ হোর্হে সাম্পাওলিকে বিদায় দিতে পকেট ফাঁকা হয়েছে এএফএর। সাম্পাওলিকে কোচ করে আনা হয়েছিল ২০১৭ সালে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তখন ধুঁকছিল আর্জেন্টিনা। এক বছরের ব্যবধানে সাম্পাওলি ছিলেন আর্জেন্টিনার তৃতীয় কোচ। সাম্পাওলি যে এভাবে ব্যর্থ হবেন সেটা অবশ্য ধারণা করাও কঠিন ছিল। তবে সিদ্ধান্তটা একটু তাড়াহুড়ো করেই নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। জেরার্ডো টাটা মার্টিনোর অধীনে পরপর দুইবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারের পর কোচ বদলানো ছাড়াও উপায় ছিল না। তখন আনা হলো এদ্গার্দো বাউজাকে। টানা তিন ফাইনালে হারা 'বুড়ো আর্জেন্টিনা' দলকে তিনিও অনুপ্রাণিত করতে পারলেন না। বাছাইপর্ব উতরাতে তাই আট মাসের মাথায় আবারও তোড় জোড় আর্জেন্টিনার। কোচ বদল, এলেন সাম্পাওলি। কোচ হিসেবে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। হাইপ্রেসিং, হাই এনার্জি, প্রতিপক্ষকে নিজেদের অর্ধে চেপে ধরে রাখা- সাম্পাওলির দলের বৈশিষ্ট এসব। কিন্তু সাম্পাওলি ব্রান্ডের ফুটবল খেলতে হাতে যে ধরনের খেলোয়াড় থাকা দরকার ছিল, সেটাই ছিল না সাম্পাওলির কাছে। কোনোমতে রাশিয়া বিশ্বকাপে পা রেখে এরপর তাই আর বেশিদূর যাওয়া হয়নি আর্জেন্টিনার। এরপর সাম্পাওলির বিদায় ছিল অবশ্যম্ভাবী। তার সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ করতে গিয়ে এমনিতেই অভাবে থাকা এফএকে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। কোচ হিসেবে তাই 'সস্তা' একজনকেই দরকার ছিল আর্জেন্টিনার। রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছিল তাদের বুড়িয়ে যাওয়া দলটাই। গতি, ক্ষীপ্রতা কোনোটাই ছিল না। মিডফিল্ড আর ডিফেন্সের অবস্থা যা তা। আর্জেন্টিনার করারও আর তেমন কিছু ছিল না। বয়সভিত্তিক দল থেকে একের পর এক খেলোয়াড় উঠে আসার নিয়মটাই তো বন্ধ হয়ে গিয়েছে আর্জেন্টিনায়। অথচ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি শিরোপা নেই অন্য কোনো দেশের। ১৯৮৬ সালের পর ৫ বার অনূর্ধ্ব২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টাইন যুবারা। তাই মেসি, রিকেলমে, আইমার, তেভেজ, আগুয়েরো, মাসচেরানোর মতো খেলোয়াড়দের পেতে কখনও সমস্যা হয়নি তাদের। কিন্তু এই দেশটাই গত ১১ বছর ধরে যুব বিশ্বকাপে শিরোপাশূন্য। শেষ ৫ আসরে মধ্যে দুইবার বিশ্বকাপেই বাছাই করতে পারেনি তারা। সেরা সাফল্য কোয়ার্টার ফাইনাল, আর বাকি দুইবার প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়। সবকিছু জেনেও সাম্পাওলির নিয়োগ তাই আর্জেন্টিনার অদূরদর্শীতার পরিনাম মাত্র। স্কালোনি আর্জেন্টিনার সাবেক রাইটব্যাক। কোচ হিসেবে তিনি আনকোরা তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল আরও আনকোরা এক দলের। স্কালোনি সেই দল নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন। প্রথমে পাঁচ মাসের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাকে। পরে কোপা আমেরিকা পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয় তার। এ সময়ে ৬২ জন খেলোয়াড় ডেকেছেন তিনি। দলকে খেলিয়েছেন চার, পাঁচ রকমের ফর্মেশনে। এবারের কোপা শুরু হওয়ার সময়েও নিজের সেরা দলটা জানা ছিল না স্কালোনির।