কোপায় চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

সুলতান মাহমুদ রিপন
প্রথম পর্বের মতো রোবারের ফাইনালেও পেরুকে উড়িয়ে দিয়েছে তিতের ব্রাজিল। আর তাতে এক যুগ পর কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছে সেলেসাওরা। তাইতো ট্রফি নিয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন আলভেস-জেসুস-ফিরমিনহোরা -ওয়েবসাইট
গ্যাবিয়েল জেসুস একটি গোল করলেন, আরেকটি করালেন। পরে লাল কার্ড পেয়ে বেরিয়েও গেলেন। আর শেষ দিকে পেনাল্টি থেকে রিচার্লিসনের গোলে ব্রাজিল পেল দারুণ এক জয়। রোববার রাতে ফাইনালে পেরুকে ৩-১ গোলে হারিয়ে মারাকানার রিও ডি জেনিরোতে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন আলভেস-জেসুসরা। আর তাতে এক যুগ পর কোপা আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পেল সেলেসাওরা। আগে চারবার কোপা আমেরিকা আয়োজন করেছিল ব্রাজিল, প্রত্যেকবার প্রতিযোগিতা শেষ করেছে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। গ্রম্নপ পর্বে এই পেরুই ৫-০ গোলে উড়ে গিয়েছিল তিতের ব্রাজিলের কাছে। কিন্তু রিকার্ডো গার্সিয়ার এই দল নকআউটে ছিল অন্য চেহারার। ফাইনালেও তাদের লড়াই ম্যাচ জমিয়ে তোলে। শেষ পর্যন্ত ১০ জনের সেলেসাওরা জেতে মহাদেশীয় শিরোপা। ২০০৭ সালের পর কোপা আমেরিকায় এটি তাদের প্রথম শিরোপা। যদিও ২০১৬ সালে এই পেরুর কাছে হেরে গ্রম্নপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। ওই সময় চাকরি হারান কার্লোস দুঙ্গা। তার উত্তরসূরি হিসেবে তিতে এগিয়ে নেন সেলেসাওদের। তার ভবিষ্যৎও ছিল শঙ্কায়। তবে ব্রাজিল নবম কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় চাকরিটা আরও পাকা হলো সান্তোসের সাবেক কোচের। সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গোল করা জেসুস ফাইনালে নায়ক থেকে খলনায়ক হতে বসেছিলেন। তবে তার সতীর্থদের নৈপুণ্যে স্বস্তির জয় পায় ব্রাজিল। এভারটনের গোলে তারা এগিয়ে গেলেও প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে পেরু অধিনায়ক পাওলো গেরেরোর লক্ষ্যভেদে চাপে পড়ে ব্রাজিল। প্রথম গোল বানিয়ে দেয়া জেসুস বিরতিতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে এগিয়ে দেন স্বাগতিকদের। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে তিনি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে আবার চাপের মুখোমুখি হয় সেলেসাওরা। কিন্তু বদলি লায়াড় রিচার্লিসন সব শঙ্কা দূর করে দেন পেনাল্টি থেকে গোল করে। পেরুর আত্মবিশ্বাসী শুরু থমকে যায় ১৫ মিনিটে ব্রাজিল গোল করলে। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের ওপর দিয়ে ক্রস করেন জেসুস। দূরের পোস্টে সবার নজরের বাইরে থাকা এভারটন দুর্দান্ত হাফ ভলিতে গোলমুখ খোলেন। পরে ১০ গজ দূর থেকে নেয়া ফিলিপে কুতিনহোর শট গোলবারের পাশ দিয়ে যায়। ৩৬ মিনিটে অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় রর্বাতো ফিরমিনোর হেড। সেলেসাওদের আক্ষেপ বাড়িয়ে দেয় রেফারি রর্বাতো তোবারের রিভিউয়ের সিদ্ধান্তে। থিয়াগো সিলভার বাহুতে বল লাগায় পেরুকে পেনাল্টি উপহার দেন তিনি। সুযোগ নষ্ট করেনি পেরুভিয়ানরা, স্পট কিক থেকে গেরেরো ৪৪ মিনিটে ফেরান সমতা। পেরুর এই আনন্দ ছিল অল্প সময়। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ের তৃতীয় মিনিটে কার্লোস জাম্বরানোর ভুলে জেসুস ঠান্ডা মাথায় স্কোর করেন ২-১। ব্যবধান বাড়িয়ে নিতে দ্বিতীয়ার্ধে আরও মরিয়া হয়ে ওঠে স্বাগতিকরা। কুতিনহোর বাঁকানো শট আবার গোলবারের পাশ দিয়ে চলে যায়। পরে ব্রাজিলের জন্য দুঃসময় অপেক্ষা করছিল আরও। ম্যাচে পঞ্চমবার ফাউল করে তোবারের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙেন জেসুস, পরিণতিতে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে ৭০ মিনিটে অশ্রম্নসিক্ত নয়নে বিদায় নিতে হয় ম্যানসিটি এই স্ট্রাইকারকে। যদিও বাকি ২০ মিনিট ১০ জনের ব্রাজিলকে পাওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় রিকার্ডো গার্সিয়ার দল পেরু। বরং ৮৭ মিনিটে জাম্বরানোর আরেকটি ভূলে শেষ মুহূর্তে ব্যবধান বাড়ায় সেলেসাওরা। বক্সের মধ্যে এভারটনকে ফাউল করেন তিনি। পেনাল্টি থেকে রিচার্লিসন ৯০ মিনিটে করেন ব্রাজিলের তৃতীয় গোল। এতে ১৯১৯, ১৯২২, ১৯৪৯ ও ১৯৮৯ সালের পর পঞ্চমবারও আয়োজক হিসেবে শিরোপা উৎসব করে তিতের দল। এর আগে সবশেষ ২০১৩ সালে কোনো শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল। ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালে এই মাঠেই স্পেনকে হারিয়েছিল ৩-০ গোলে। পেরুকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতে উচ্ছ্বাসে ভাসছে ব্রাজিল। উঠতি ফরোয়ার্ড এভারটনের মনে হচ্ছে তারা অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। আর ফাইনালে জয়ের আরেক নায়ক জেসুস আনন্দ-উৎসবের এক ফাঁকে লালকার্ড পাওয়ায় জন্য ক্ষমা চাইতে ভোলেননি,' আমি ক্ষমা চাই। আমি এটা এড়িয়ে যেতে পারতাম। আমার আরও বেড়ে ওঠার দরকার।' ব্রাজিল অধিনায়ক আলভেস জানালেন নিজের পারফরম্যান্সে বিস্মিত নন তিনি, 'যদি নিজের পেশার প্রতি আপনার শ্রদ্ধা থাকে এবং আপনি নিজেকে দেখভাল করেন, তাহলে মান ধরে রাখা আপনার জন্য সহজ। কিছু মানুষ এখানে আমার পারফরম্যান্সে নিয়ে বিস্মিত কিন্তু আমি বিস্মিত নই।'