মিতব্যয়ী বোলিং করতে পেরেই খুশি মিরাজ

আমি যে পরিকল্পনা করেছিলাম পুরো বিশ্বকাপে আমি সেই পরিকল্পনায় শক্তভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেশ থেকে যখন এখানে আসি, তখন থেকেই আমার পরিকল্পনা ছিল আমি ইকোনমি ঠিক রেখে বোলিং করবো। শেষ পর্যন্ত সেটাই করতে পেরেছি। হয়তো আমি বেশি উইকেট পাইনি

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ঢাকায় ফেরেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। ইংল্যান্ডে থাকবেন আরও চারদিন। বিয়ের পর নববধূকে নিয়ে এই প্রথম দেশের বাইরে। আর তাই হানিমুনটা সেরে নিচ্ছেন ডানহাতি এই স্পিন অলরাউন্ডার ইংল্যান্ডে। স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরছেন ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে। বিশ্বকাপে নিজের অভিষেককে সামনে রেখে ছিলেন দারুণ রোমাঞ্চিত। বিশ্বকাপে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাবটা মেলাচ্ছেন এই তরুণ-তুর্কি। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে স্পিনে তেমন কার্যকরিতা নেই, তা জেনেই এসেছিলেন বিশ্বকাপ খেলতে। বিশ্বকাপে মিরাজের ওপর দায়িত্ব ছিল মিতব্যয়ী বোলিং করা। সেই দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে পেরেই দারুণ খুশি তিনি। ইংলিশ কন্ডিশনে যেখানে দলগুলো নতুন বলে ব্যবহার করেছে পেসারদেরকে। আর সেখানে মিরাজকে হাতে নিতে হয়েছে নতুন বলও। পাকিস্তানের বিপক্ষে নতুন বলে স্ট্রাইক করেছেন তিনি। সরফরাজ আহমেদের দলের বিপক্ষে করেছেন দারুণ বোলিং (১০-০-৩০-১) ! উইকেটের সংখ্যা এই বিশ্বকাপে তার ৬টি। তবে বিশ্বকাপের এই আসরে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন তিনিই। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেটে ওভারপ্রতি খরচা তার মাত্র ৫.০৮। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পেরে সন্তুষ্ট মিরাজ, 'আমি যে পরিকল্পনা করেছিলাম পুরো বিশ্বকাপে আমি সেই পরিকল্পনায় শক্তভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেশ থেকে যখন এখানে আসি, তখন থেকেই আমার পরিকল্পনা ছিল আমি ইকোনমি ঠিক রেখে বোলিং করব। শেষ পর্যন্ত সেটাই করতে পেরেছি। হয়তো আমি বেশি উইকেট পাইনি। উইকেটের জন্য চেষ্টাও করিনি। লাইন ও লেন্থ ঠিক রেখে বোলিং একনাগাড়ে করে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল আমার মধ্যে। এর ভেতরে যদি উইকেট পেয়ে যেতাম সেটা দলের জন্য উপকার হতো। আমার টার্গেটই ছিল প্রতি ওভারে রান চেক দেয়া।' বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ সুনিল যোশির উপদেশ মিতব্যয়ী বোলিংয়ে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করছেন মিরাজ, 'যোশি আমাকে বলেছেন, তোমাকে ইকোনমি বোলার হতে হবে। স্পিনার হিসেবে এক নম্বর হতে হবে। তোমাকে বিশ্বের এক নম্বর স্পিনার হিসেবে দেখতে চাই। এমন কিছু বলে সবসময় উৎসাহিত করেন তিনি। ভালো ভালো পরামর্শ দেন। এইতো। আর খেলার ভেতরে, বাইরে টিপস সবসময় আমাকে দারুণ দেন। এ ছাড়া সাকিব ভাইও দারুণ হেল্পফুল। স্পিনার হিসেবে কোন জায়গায় বল ফেললে ভালো হবে তা বুঝিয়ে দেন। তার বোলিং দেখে অনেক সময় আমি রিড করতে পারি যে আমার এখন কি করা লাগবে।' বিশ্বকাপে নিজের প্রাপ্তিকে বড় করে দেখছেন না। তবে বাংলাদেশের অহংকার সাকিব আল হাসানের অর্জনকে অনেক বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখছেন ডানহাতি এই স্পিন অলরাউন্ডার, 'টিম ভালো করলে আরও বেশি ভালো লাগত। বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালে গেলে আরও বেশি ভালো লাগত। দলে ব্যক্তিগত কিছু পারফরম্যান্স আছে সেগুলো অনেক বড় প্রাপ্তি। সাকিব ভাই অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে। এই রকম পারফরম্যান্স বিশ্বে খুব কমই দেখা যায় ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে। ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এমনকি আমার দেশের ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় অর্জন।' বাংলাদেশ দলে একসঙ্গে সাকিবের সঙ্গে খেলার সুবাদে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাইতো সাকিবের কাছ থেকে খেলার অনেক কিছুই শেখার আছে বললেন মিরাজ, 'বিশ্বকাপ শুরুর আগে সাকিব ভাই দুই-আড়াই মাস অনেক পরিশ্রম করেছেন। সেই পরিশ্রম কিন্তু আমরা কেউ দেখিনি। উনি আইপিএলে থাকাকালীন কঠোর পরিশ্রম করেছেন। বিশ্বকাপের জন্য শারীরিক, মানসিকভাবে অনেকভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন। আমরা যখন সাকিব ভাইকে দুই মাস পর দেখি, সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম- এতটা শুকিয়েছিল। পুরো বিশ্বকাপে সে যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে পারফর্ম করতে পেরেছে। তার কাছ থেকে আমি প্রতিনিয়ত এসব বিষয় শিখতে চাই। সাকিব ভাইয়ের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আরও ভালো করতে চাই।' এবারের বিশ্বকাপে অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বোলিং করেছেন মিরাজ। তবে কাউকে খুব একটা কঠিন মনে হয়নি তার, 'কোনো ব্যাটসম্যানকে কঠিন মনে হয়নি। কারণ আমি নিজেকে ওভাবে তৈরি করেছি। মনোবল শক্ত রেখেছি। সবসময় নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলেছি। এরকম চিন্তায় বোলিং করে সফলতা পেয়েছি। মাথায় ছিল যত বড় ব্যাটসম্যানই হোক আমি আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করব। এটাই আমার কাজকে সহজ করে দিয়েছে। আর বিশ্বকাপে ফাফ ডু পেস্নসিসের উইকেটটি ছিল সেরা।'