বলির পাঁঠা হলেন রোডস?

রোডসের বিদায়টা ঠিক চমক বলার উপায় নেই। গত বছর বাংলাদেশ দলের যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন বরং খানিকটা বিস্ময় ছিল তা। আন্তর্জাতিক কোনো দলে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা নেই, ক্রিকেটার হিসেবেও বড় কেউ নন- এমন একজন বাংলাদেশ দলের চাপ কতটা সামলে নিতে পারবেন?

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
স্টিভ রোডস মাসখানেক আগেও বোধহয় ঘূণাক্ষরে ভাবেননি এরকম কিছু। গত বছর বলেছিলেন, বাংলা শেখার চেষ্টা করছেন। এই বিশ্বকাপেই এক সাংবাদিককে মজা করে বলেছিল, বিশ্বকাপের পর বিদ্যেটা ভালো করে ঝালিয়ে নিতে চান। আপাতত শুধু 'বিদায়' শব্দটা শিখেই চলে যেতে হচ্ছে তাকে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল খারাপ করার জন্য আপাতত 'বলির পাঁঠা' যে রোডসকেই হতে হচ্ছে! তার চেয়েও বড় প্রশ্ন উঠে গেছে, মাথাব্যথাটা যখন 'ক্রনিক' হয়ে যায় তখন কি প্যারাসিটামল খেলেই সেটা ভালো হয়ে যাবে? রোডসের বিদায়টা ঠিক চমক বলার উপায় নেই। গত বছর বাংলাদেশ দলের যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন বরং খানিকটা বিস্ময় ছিল তা। আন্তর্জাতিক কোনো দলে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা নেই, ক্রিকেটার হিসেবেও বড় কেউ নন- এমন একজন বাংলাদেশ দলের চাপ কতটা সামলে নিতে পারবেন? বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান রোডসের কোচ ঘোষণার সময় সংবাদ সম্মেলনেই স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে একজন ইংলিশকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন তারা। রোডসও প্রথমবার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ফাইনালে যাওয়াও অসম্ভব মনে করছেন না। যদিও এক বছরের মধ্যে সেই স্বপ্ন বুদবুদ হয়ে মিলিয়ে গেছে টেমস নদীতে। তবে সেজন্য অবশ্যই শুধু রোডসকে দায়ী করা উচিত নয়। ইংলিশ এই কোচকে নিয়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ধারণা আসলে পরিষ্কার হয়ে গেছে প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই। দারুণ সদালাপী একজন মানুষ, নিপাট ভদ্রলোক, কথাও বলতে ভালোবাসেন। কিন্তু দলের পরিকল্পনা বা কৌশলগত ব্যাপারে ঠিক ঝানু নন। তারপরও সেটা হয়তো খুব বড় সমস্যা ছিল না। কাউন্টির সবুজ মখমল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চত্বরে মানিয়ে নেয়ার জন্যও তো একটু সময় দরকার। রোডসকে সেটা দিতে কারও আপত্তি ছিল না, অন্তত বিশ্বকাপ পর্যন্ত। ইংলিশ কন্ডিশন তার হাতের তালুর মতো চেনা থাকার কথা, আর লম্বা বিশ্বকাপে সেই জ্ঞানটা খুব করেই দরকার বাংলাদেশের। সমস্যা হলো ওভালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচে যখন বাংলাদেশ উইকেট পড়তে ভুল করল। ২৬০-৭০ রান যেখানে পার স্কোর, সেখানে দ্রম্নত ব্যাট চালাতে গিয়ে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেল ২৪৪ রানে। কোচের ভূমিকাও সেখানে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, শোনা গেছে এমন। তারপরও হুট করে চলে যাওয়ার মতো কিছু হয়নি তাতে। এর চেয়ে অনেক বেশি বিতর্কের মধ্যে গিয়েও চাকরি টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন সাবেক কোচরা। এক বছর আসলে কোচকে যাচাই করার জন্য কতটা যথেষ্ট, সেই প্রশ্নও উঠতে পারে। অবশ্য বিসিবির আনুষ্ঠানিক ভাষ্য, দুই পক্ষের সম্মতিতেই তার চুক্তি আর বাড়ছে না। কিন্তু ব্যাপারটা যে ভদ্রভাবে 'আপনার কাল থেকে আর আসার দরকার নেই, ফাইলপত্র গুছিয়ে নেবেন' গোছের কিছু, সেটা আসলে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রশ্নটা তাই আবারও জাগছে, রোডসকে তাকে এখনই বিদায় করে দিয়ে কি বার্তা দিতে চাইছে বিসিবি? তার যোগ্যতা নিয়ে সংশয় আছে, সেটা মেনে নিয়েও সময়টা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। বিশ্বকাপে অষ্টম হয়ে ফিরে আসার জন্য একজনকে দায়টা নিতেই হতো, রোডসকে কি তাহলে বলির পাঁঠাই বানানো হলো? কিন্তু সমস্যার মূল যখন অনেক গভীরে, তখন এক রোডসের বিদায়ে কীইবা আসবে, যাবে? যেখানে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রকাশ্যে পাতানো ম্যাচের আয়োজন চলে, যেখানে এত বছরেও মানসম্মত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হয় না, যেখানে কিছু নির্দিষ্ট ক্লাবকে সুবিধা করে দিতে আম্পায়ারিং নামের প্রহসন চলে সেখানে একটা আসরের ব্যর্থতার জন্য যদি কোচকেই দায় নিতে হয় তাহলে নির্বাচকমন্ডলী, ম্যানেজার বা বোর্ডইবা সেটা এড়িয়ে যায় কীভাবে?