নকআউটের জুজু তাড়া করছে ভারতকে!

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

মো. ফখরুল ইসলাম
শিরোপার অন্যতম দাবিদার ভাবা হচ্ছিলো, গ্রম্নপ পর্বে দাপটের সঙ্গে খেলে টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখে সেই ভাবনাকে আরো জোরালো করেছিল টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু শেষমেশ কিউইদের কাছে হেরে শিরোপার খুব কাছাকাছি গিয়েও আর ছোঁয়া হলো না। সেই হতাশাই হয়তো ভর করছে কোহলিদের -ওয়েবসাইট
আবারও নকআউটে ভারতের স্বপ্নভঙ্গ। বিশ্বকাপের এবারের আসরে প্রথম থেকে দাপটের সঙ্গে খেলে গ্রম্নপপর্বের নয় ম্যাচে মাত্র এক হার নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ভারত কিউইদের হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করবে এ ধারণা বেশিরভাগ ক্রিকেটবোদ্ধারই ছিল। কিন্তু এজবাস্টনেই বুধবার কোহলিদের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্বল্প রান তাড়া করতে নেমেও ব্যর্থ বর্তমান ক্রিকেটের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপ! তবে এবারই প্রথম নয়, সেই ২০১৪ সাল থেকে নকআউটের জুজু যেন তাড়া করছে ভারতকে। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোর গ্রম্নপপর্বে দাপিয়ে খেলা টিম ইন্ডিয়া প্রতিবারই ছন্দ হারাচ্ছে নকআউটে এসে। যেন সেই পুরনো দক্ষিণ আফ্রিকা। একটু পেছনে ফিরে তাকানো যাক, ২০১৪ সালে ধোনির ভারত যখন টি২০ বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশে আসে, অনেক বিশেষজ্ঞ ধরেই নিয়েছিলেন ধোনির হাতেই উঠবে ট্রফি। গ্রম্নপপর্বে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন তারা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে দাপটের সঙ্গে হারাল সেমিফাইনালেও। কিন্তু তারপরেই বিপর্যয়। ফাইনালে মালিঙ্গার শ্রীলংকার হাতে পর্যুদস্ত হতে হলো ভারতকে। প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৩০ রানে আটকে গেল ভারত। সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনের শ্রীলংকা সেই রান টপকে গেল অনায়াসে। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের ফাইনালে এই ব্যর্থতা মানতে পারেননি ক্রিকেট ভক্তরা। এরপর আসে ২০১৫ বিশ্বকাপ। ভারত লড়াইয়ে নেমেছিল আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। হার না মানা অস্ট্রেলীয় জেদের কাছে আত্মসমর্পণ সেমিফাইনালে। সেবারও গ্রম্নপপর্বে অপ্রতিরোধ্য ছিল ভারত। জয় এসেছিল সবকয়টি ম্যাচেই। কিন্তু সেমিফাইনালে স্টিভ স্মিথের শতরানে ভর করে ৩২৮ রানের বড় টার্গেট দিল অস্ট্রেলিয়া। রোহিত-শিখর জুটি ভাল শুরু করলেও ব্যর্থ হন কোহলি। রাহানে- ধোনি চেষ্টা করলেও ম্যাচ শেষ করতে পারেননি। কি আশ্চর্য মিল! সেবারও রান আউট হয়ে ফিরতে হয় ধোনিকে। অস্ট্রেলিয়ার সামনে থমকে যায় পরপর দু'বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। এরপর ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল ভারত। এশিয়া কাপ জিতে দারুণ ফর্মে থাকা ভারতের কাছে আদর্শ পরিস্থিতি শিরোপা বগলদাবা করার। কিন্তু শুরুতেই কিউইদের বিপক্ষে মাত্র ১২৭ রান করতে ব্যর্থ হন কোহলিরা। যদিও তারপর ফিরে আসে দাপটের সঙ্গে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সেবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ভারত হেরে যায় সেমিফাইনালে। প্রথমে ব্যাট করে ভারত ১৯২ রানের স্কোর দাঁড় করে। কিন্তু ক্যারিবিয়ান দৈত্যরা সেই রান টপকে যায় দুই বল বাকি থাকতেই। তাদের আটকাতে ব্যর্থ হয় ভারতীয় বোলিং। এবারের আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হার এখনও বোধহয় দগদগে হয়ে আছে ভারতীয় সমর্থকদের মনে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে করুণ আত্মসমর্পণ। প্রথমে ব্যাট করে ফখর জামানের শতরানে ভর করে ৩৩৮ রান তোলে পাকিস্তান। সেবারের শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিং-এর সামনে ওই রানও ছিল খুব সহজ। কিন্তু কোনো ব্যাটসম্যানের কাছেই উত্তর ছিল না আমির, হাসানদের পেস আক্রমণের। মাত্র ১৫৮ রানে গুটিয়ে যায় ভারতের ব্যাটিং। তবে এবারের বিশ্বকাপের হার যেন ভারতকে ঠেলে দিচ্ছে 'চোকার্স' তকমার দিকে। ২০১৪ থেকে স্বপ্নভঙ্গের চিত্র হ ২০১৪ টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে লংকানদের কাছে হার। হ ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার। হ ২০১৬ টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিতে উইন্ডিজের কাছে হার। হ ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ধরাশায়ী। হ ২০১৯ এ নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে আবারও স্বপ্নভঙ্গ