বাইশ গজে দাপুটে ছিল পেসাররা

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

মো. ফখরুল ইসলাম
মাঠে বসে প্রিয় দলকে সমর্থন দেয়ার সৌভাগ্য হয়নি, তাই বলে তো আর খেলা দেখা মিস করা যায় না। তাইতো আইসিসির ফ্যানপার্কে বড় পর্দায় খেলা দেখতে জড়ো হয়েছেন সমর্থকরা। মাঠের বাইরেও দর্শকদের মধ্যে আমেজ ধরে রাখতে এ বছর ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা এই আয়োজন করেছে। রোববার ট্রাফালগার স্কয়ারে -ওয়েবসাইট
এবারের বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগে থেকেই একটা কথা আয়োজক দেশ ইংল্যান্ড থেকে ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেটের অলিগলিতে। আর তা হলো, এবারের বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের দু'হাত উজাড় করে দিবে। ইংলিশ কন্ডিশনের উইকেট ব্যাটসম্যানদেরই স্বর্গ হবে। ব্যাটসম্যানরাই প্রভাব বিস্তার করবে টুর্নামেন্টজুড়ে। বোলারদের জন্য কিছুই নেই। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের তিনশো পেরোনো ইনিংস দেখে অনেকেরই সেটা বিশ্বাসে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে ততই ভুল প্রমাণিত হয়েছে সেসব ভবিষ্যদ্বাণী। এবারের আসরের লাগাম বোলারদের হাতেই থেকে গেছে। আরেকটু সহজ করে বলতে গেলে পেসারদের হাতে। গত দুটা সেমিফাইনালের কথাই ভাবুন না। নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি আর ট্রেন্ট বোল্টদের সামনে কেমন নাকানিচুবানি খেতে হয়েছিল শক্তিশালী ভারতকে। আর গত ম্যাচে ইংল্যান্ডের আর্চার আর ওকসদের বিপক্ষে অসহায় অস্ট্রেলিয়ার রূপটিই যেন বিশ্বকাপে পেসারদের প্রতিচিত্র তুলে এনেছে। এর আগে গ্রম্নপ পর্বেও ছড়ি ঘুরিয়েছিল পেসাররা। তবে শেষ চারে এসেই যেন পেসারদের ভয়ংকর রূপটি দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। সেমিফাইনালের দুই ম্যাচেই ম্যাচসেরা হয়েছেন পেসাররা। এদিকে, এবারের আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় প্রথম ৮টি আসনই পেসারদের দখলে। সর্বোচ্চ ২৭ উইকেট নিয়ে সবার শীর্ষে আছেন মিচেল স্টার্ক। যদিও পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যেই আসর থেকে ছিটকে গেছে, তবুও (রোববার) ফাইনালে অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে স্টার্কের রেকর্ড ভাঙার সাধ্য কার? ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার সেরা 'গেম চেঞ্জার' মিচেল স্টার্ক। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্বল্প পুঁজি নিয়েও যেভাবে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, তাতে অজি ভক্তদের মনে কথাটি আরও পাকাপোক্ত হয়েছে। এরপর থেকে প্রতিটি ম্যাচেই ত্রাস ছড়িয়েছেন তিনি। মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বে গত বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল স্টার্কের। সেবার সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা বোলার নির্বাচিত হয়েছিলেন স্টার্ক। যদিও চোটের কারণে লম্বা সময় ধরে খেলার বাইরে ছিলেন তিনি। এবারও সেরা বোলারের আসনটি তার দখলেই থেকে যাচ্ছে! গ্রম্নপপর্বেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটলেও আসরজুড়ে বাংলাদেশের হয়ে যে দুজন খেলোয়াড় আলো ছড়িয়েছেন তাদের একজন সাকিব আল হাসান আরেকজন মুস্তাফিজুর রহমান। শুরুর দিকে কাটার মাস্টার সেভাবে জ্বলে উঠতে না পারলেও শেষদিকে এসে নিজের জাত চিনিয়েছেন। এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করে এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন। হয়তো তার বলে অত গতি নেই, তবে তিনিও যে ফুরিয়ে যাননি সেটিই হয়তো আরেকবার প্রমাণ করেছেন এই বাঁ-হাতি জাদুকর। বিশ্বকাপের এবারের আসরের অন্যতম সেরা আবিষ্কার ছিলেন জোফ্রা আর্চার। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় আছেন। প্রতি ম্যাচেই দলের হয়ে বোলিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার গতির কাছে খাবি খেতে হয়েছে বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদেরও। প্রতিপক্ষের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে একের পর এক উইকেট তুলে নিতে মরগানের প্রথম পছন্দ ছিলেন আর্চারই। অন্যদিকে, এবারের আসরের সবচেয়ে সফল বোলারদের একজন জাসপ্রিত বুমরাহ। ওভারের পর ওভার দারুণ লাইন ও লেন্থ বজায় রেখে বল করে দলকে শেষ চার পর্যন্ত টেনে তুলতে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন। নির্ভুল ইয়র্কার দেয়ার অসামান্য দক্ষতা আছে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় আছেন লুকি ফার্গুসনও। একদিনের ম্যাচে ফার্গুসনের বোলিং গড় ২৬.০৯। এই বিশ্বকাপে ফাস্ট বোলাররা পেস, বাউন্স দুটোই পেয়েছেন। আর এ সুবিধাটাকেই যথাযথ কাজে লাগিয়ে ফায়দা তুলেছেন ফার্গুসন। আসরের সেরা পাঁচ বোলার পেসার ম্যাচ উইকেট গড় ইকোনমি. মিচেল স্টার্ক ১০ ২৭ ১৮.৫৯ ৫.৪৩ মুস্তাফিজুর রহমান ৮ ২০ ২৪.২০ ৬.৭০ জোফ্রা আর্চার ১০ ১৯ ২২.০৫ ৪.৬১ জসপ্রিত বুমরাহ ৯ ১৮ ২০.৬১ ৪.৪১ লুকি ফার্গুসন ৯ ১৮ ১৯.৯৪ ৪.৪৭ \হ (ফাইনাল ম্যাচের আগ পর্যন্ত)