বাংলাদেশের সাবেক কোচ রোমাঞ্চিত

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
শেন জার্গেনসেন। বাংলাদেশের সাবেক বোলিং কোচ, পরে যাকে করা হয়েছিল দলের প্রধান কোচ। বর্তমানে তিনি ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ডের বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করছেন। টুর্নামেন্টের অন্যতম আলোচিত চরিত্রও। বিশ্বকাপজুড়ে অসাধারণ বোলিং করেছেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। বিশেষ করে সেমিফাইনালে ভারতের বিখ্যাত টপ অর্ডার যেভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন তারা, সেটির কৃতিত্ব কিছুটা তো বোলিং কোচেরও। তার দল নিউজিল্যান্ড এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলায় দারুণ রোমাঞ্চিত তিনি। লর্ডসের মূল মাঠ থেকে পাশেই নার্সারি গ্রাউন্ডের নেটের দিকে যাচ্ছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি। ঠিক পেছনেই তাদের বোলিং কোচ শেন জার্গেনসেন। পরিচিত বাংলাদেশের সংবাদকর্মী দেখেই তার মুখে খেলে গেল হাসি। বিশ্বকাপে তার দল ফাইনাল খেলছে প্রশ্ন শুনে ভ্রম্ন নাচিয়ে, অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে বললেন, 'রিডিকিউলাস...!' জার্গেনসেন মজা করে বললেও আসলে অনুভূতিটা 'অদ্ভুত' রকমই হওয়ার কথা। বিশ্বকাপের ফাইনাল, ওয়ানডে ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের হাতছানি, নিজের জায়গায় তার সাফল্য, প্রথমবার বিশ্বকাপের ট্রফি ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষা, হতে পারে স্বপ্নভঙ্গও। তবে মজাটুকু শেষে একটি অনুভূতির কথা আলাদা করেই বললেন জার্গেনসেন। নিউজিল্যান্ড টানা দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেললেও তার প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল। রোমাঞ্চের দোলা টের পাচ্ছেন প্রবলভাবেই কিউইদের বোলিং কোচ জানালেন, 'প্রচন্ড রোমাঞ্চিত আমি। এই অনুভূতির তুলনা নেই। আমার দেশ (অস্ট্রেলিয়া) ৫ বার বিশ্বকাপ জিতেছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে এত বছর ধরে কাজ করছি, দেশটি অনেক আপন হয়ে গেছে। ওদের সঙ্গে ওদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলেছি, দারুণভাবে উপভোগ করছি।' ভারতের সঙ্গে রিজার্ভ ডেতে গড়ানো সেমিফাইনাল শেষ হওয়ার পর থেকেই বিচিত্র সব অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে তার, 'সম্ভবত ইতিহাসের প্রথম দুই দিনব্যাপী সেমিফাইনাল খেললাম আমরা! বিশ্বাস ছিল যে আমাদের ছেলেরা পারবে। আমাদের পেসারদের সামর্থ্যে আস্থাও ছিল। এরপরও যখন জিতেই গেলাম, ফাইনালে উঠেছি এটা হজম হতে একটু সময় লেগেছে। বিশ্বকাপ ফাইনাল বলে কথা! দলের টানা দ্বিতীয় ফাইনাল, ছেলেরা স্বাভাবিকভাবেই খুবই রোমাঞ্চিত।' এই দফায় নিউজিল্যান্ডের বোলিং কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি ২০১৬ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্তও কিউইদের বোলিং কোচ ছিলেন সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান পেসার। ২০১১ সালের অক্টোবরে বোলিং কোচ হিসেবে শুরু হয় তার বাংলাদেশ অধ্যায়। পরের বছরের অক্টোবরে প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল আচমকা দায়িত্ব ছেড়ে দিলে জার্গেনসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয় বিসিবি। ২০১৩ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে ভারপ্রাপ্ত থেকে তাকে করা হয় মূল কোচ। বাংলাদেশ সেই বছরই ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করে নিউজিল্যান্ডকে (৩-০), ড্র করে টেস্ট সিরিজ। তবে ২০১৪ সালে দেশের মাটিতে টি২০ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর তাকে সরিয়ে দেয়া হবে বলে গুঞ্জন ওঠে। ভবিষ্যৎ অনেকটা আঁচ করতে পেরে নিজে থেকেই পদত্যাগ করেন তিনি। বিসিবিও ছেড়ে দেয় আপত্তি ছাড়া। এরপর ফিজির কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে ছিলেন স্কটল্যান্ডের বোলিং পরামর্শক। বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেও এখনো তার হৃদয়ে বিশেষ জায়গা নিয়ে আছে এই দেশ। নিয়মিতই অনুসরণ করেন বাংলাদেশের খেলা। এই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দেখেও জানালেন ভালো লাগার কথা। তার চোখে ধরা পড়া ঘাটতিটুকুও তুলে ধরলেন জার্গেনসেন, 'বাংলাদেশ বেশ ভালো খেলেছে। অষ্টম হওয়াটা আসলে সবটুকু ফুটিয়ে তুলছে না। একটু এদিক-সেদিক হলেই বাংলাদেশ আরও ভালো অবস্থানে থাকতে পারত। আমাদের সঙ্গে (নিউজিল্যান্ড) দারুণ লড়াই হয়েছে; ম্যাচটি জিততে পারলে হয়তো ওরা সেমিফাইনালেও খেলতে পারত।' বাংলাদেশকে নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও সাকিবের পারফরম্যান্সে মুগ্ধতার কথা জানালেন তিনি, 'কী অসাধারণ ব্যাটিংই না করেছে সাকিব! আমি যেখানে দেখেছিলাম, সেখান থেকে অনেক পরিণত ও কর্তৃত্বময় হয়ে উঠেছে আরও। মনে হচ্ছিল, ওকে তো আউটই করা যাবে না! কখনো কখনো মনে হচ্ছিল, ওর সামনে বোলাররা যেন টেনিস বলে বোলিং করছে। বোলারদের এতটাই অসহায় মনে হয়েছে ওকে বোলিংয়ে। সাকিব এই ফর্ম ধরে রাখতে পারলে, বাংলাদেশ দলের জন্য দারুণ সময় অপেক্ষা করছে।'