বেলিসের হাত ধরে ইংল্যান্ডের বিশ্বজয়

ইংল্যান্ডের কোচ হয়ে নয়, আমি তোমাদেরকে এখন একটা কথা বলব অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে। একটা সেমিফাইনাল জিতেই তোমরা মনে করছো কাজ হয়ে গেছে? এখনো কিছুই জেতোনি তোমরা...

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
৪৪ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। ইয়ন মরগানের দলের এমন সাফল্যে খুশির জোয়ার বইছে পুরো ইংল্যান্ডেই। তাদেরকে অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেও। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে ইংলিশ ক্রিকেটারদের আমন্ত্রণ জানান তিনি। একই ফ্রেমে বন্দি সবাই -ওয়েবসাইট
অনুশীলনে তাকে খুব ব্যস্ত বা হাঁকডাক করতে দেখা যায় খুব কমই। হয়তো রোলারের ওপর বসে থাকেন। মাঠ বা নেটের পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির হন কদাচিৎ। আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন, নিজের মতো কাজ করতে ভালোবাসেন। সেই পথ ধরে হেঁটেই ট্রেভর বেলিস পেলেন সাফল্যের ঠিকানা, ইংল্যান্ডের বিশ্বজয়ের নেপথ্য নায়ক। ক্রিকেটে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ অস্ট্রেলিয়ার এই কোচের হাত ধরেই ইংলিশরা পেল বহু আরাধ্য শিরোপার দেখা। সামনেই অ্যাশেজ, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক লড়াইয়ের উত্তেজনা হয়ে উঠবে উত্তুঙ্গ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারানোর তৃপ্তি ইংলিশদের অনেকের কাছেই বিশ্বকাপ জয়ের চেয়ে বড়। কিন্তু ক্রিকেট ইংলিশদের এমন বাস্তবতায় দাঁড় করাল যে তাদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা এলো সেই অস্ট্রেলিয়ানের ছোঁয়াতেই। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেমিফাইনাল জয়ের পর ইংলিশ ক্রিকেটাররা যখন উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছেন, বেশ বিরক্ত হয়েছিলেন বেলিস। এজবাস্টনে সেদিন দলের সবাইকে ডেকে নিলেন ড্রেসিং রুমে। নিজের হ্যাট খুলে শান্ত কিন্তু গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, 'ইংল্যান্ডের কোচ হয়ে নয়, আমি তোমাদেরকে এখন একটা কথা বলব অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে। একটা সেমিফাইনাল জিতেই তোমরা মনে করছো কাজ হয়ে গেছে? এখনো কিছুই জেতোনি তোমরা...। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা ঘটনাটি একটি নমুনা মাত্র। গত চার বছরের ধারাবাহিকতার অংশ। ইংলিশ ক্রিকেটারদের প্রতিভা, সামর্থ্য, বেলিসের পরিকল্পনা ও ম্যান-ম্যানেজমেন্টে নিজস্ব ঘরানা এবং অস্ট্রেলিয়ান মানসিকতার ছোঁয়া, সব মিলিয়েই এসেছে ইংল্যান্ডের প্রথম বিশ্ব শিরোপা। ট্রেভর বেলিসের কোচিংয়ের ধরন ও ঘরানা আর মরগানের নেতৃত্ব, দলের মানসিকতায় বদল, সব মিলিয়ে এসেছে এই সাফল্য। বেলিস বরাবরই কথা কম, কাজ বেশিতে বিশ্বাসী। তার মূল মন্ত্র, বিশ্বাস, আস্থা ও স্বাধীনতা। যেসব ক্রিকেটারদের তিনি মনে করেছেন ইংল্যান্ডের জন্য সাফল্য বয়ে আনতে পারে, তাদের ওপর ভরসা করেছেন। সেই ভরসা তাদের মনেও গেঁথে দিয়েছেন। তাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছেন নিজেকে মেলে ধরতে। ভয়ডরহীন খেলতে। বরাবরই চেয়েছেন ক্রিকেটারদের ওপর থেকে চাপ সরিয়ে তাদের মুক্ত মনে খেলতে দিতে। ক্রিকেটারদের সঙ্গে খুব বেশি কথা অবশ্য তিনি বলেন না। তবে যেটুকু বলেন, সোজাসাপ্টা, সরল ও সরাসরি। যেটুকু দরকার। কখনোই তিনি দলের সাফল্যের কৃতিত্ব সেভাবে নিতে চাননি, ব্যর্থতার সময় দায়িত্ব নিতে পিছপা হননি। মরগান ও তার ঘরানা প্রায় এক বিন্দুতে মিলে যাওয়ায় সহজ হয়েছে কাজ। নিজের ধরনে তিনি সফল কোচিং ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। পরিচিত ছিলেন কাভারে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের জন্যও। জন্ম নিউসাউথ ওয়েলসে, অস্ট্রেলিয়ার এই রাজ্য দলটির হয়েই খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ৯৯২ রান করে রাজ্যের সেরা ক্রিকেটার মনোনীত হয়েছিলেন। এরপর তিনি নিউসাউথ ওয়েলসের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৪-০৫ মৌসুমে স্টিভ রিক্সন চলে যাওয়ার পর দায়িত্ব পান মূল রাজ্য দলের। সাফল্য ধরা দেয় দ্রম্নতই। পরের মৌসুমে তার কোচিংয়ে নিউসাউথ ওয়েলস চ্যাম্পিয়ন হয় সীমিত ওভারের টুর্নামেন্টে। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর টম মুডি শ্রীলংকার দায়িত্ব ছেড়ে দিলে সেই বছরই লংকতানদের দায়িত্ব পান বেলিস। তার কোচিংয়ে টেস্টর্ যাংকিংয়ে দুই নম্বরে উঠে আসে শ্রীলংকা, এখনও যা লংকানদের সেরা সাফল্য। ২০১১ বিশ্বকাপে তার কোচিংয়ে লংকানরা ওঠে ফাইনালে। বিশ্বকাপের পর শ্রীলংকার দায়িত্ব ছেড়ে ফিরে যান অস্ট্রেলিয়ায়। এবারও গিয়েই পান সাফল্য। ২০১১-১২ বিগ ব্যাশে তার কোচিংয়ে শিরোপা জেতে সিডনি সিক্সার্স। আইপিএলে প্রত্যাশিত সাফল্য পেতে যখন ধুঁকছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স, বেলিস দায়িত্ব নিয়েই তাদের শিরোপা উপহার দেন ২০১২ সালে। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর দায়িত্ব নেন ইংল্যান্ডের। পাল্টে দেন ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলের চিরায়ত চরিত্র। পরিণত করেন আগ্রাসী, সাফল্যের জন্য ক্ষুধার্ত একটি জয়ী দলে।